• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৫:১০ অপরাহ্ন

রাজধানী ধলপুর মালতিলতা কাঁচাবাজারে বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা নেই!


প্রকাশের সময় : মার্চ ২৩, ২০২৩, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন / ৬৭
রাজধানী ধলপুর মালতিলতা কাঁচাবাজারে বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা নেই!

এম রাসেল সরকার, ঢাকাঃ রাজধানীর ধলপুর মালতিলতা কাঁচাবাজার ধীরে ধীরে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে। আশপাশে গড়ে উঠা অবৈধ বাজার, দাম বেশি রাখা ও বাজারটি নোংরা হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। এতে বাজারের ব্যবসায়ীরা পুঁজি শেষ করে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তারা কয়েক বছর ধরে সিটি কর্পোরেশনের দোকান ভাড়া দিতে পারছে না। অনেকে দোকান ভাড়া ও ঋণ দেয়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

তবে এলাকার বাসিন্দারা বলেন, এক সময় বাজারে ক্রেতা ভরপুর ছিল। অন্যান্য বাজারের তুলনায় ধলপুর বাজারে মালামালের মূল্য বেশি রাখা হতো। ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের কাছে চড়া দাম নিত। সে কারণে ধলপুর বাজারের প্রতি ক্রেতাদের অনীহা চলে আসে। তাছাড়া ধলপুরের টিনশেডের এ বাজারে দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বাজারের বিভিন্ন দোকানের ফ্লোর ভেঙে গেছে, খুঁটিগুলো ভাঙা, বাজারের সামনে বাজার ঘিরে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে দোকানপাট করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভাড়া নিলেও বাজার উন্নয়নে তাদের কোনো তদারকি নেই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের একমাত্র কাঁচাবাজারটি ধলপুরসহ এলাকার বাসিন্দাদের সহযোগিতায় ১৯৭৮-৭৯ সালে যাত্রা শুরু করে। পরে ১৯৮৮ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে বাজারটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়। বাজারটি ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার থেকে পূর্ব দিকে প্রায় কোয়ার্টার কিলোমিটার লম্বা। বর্তমানে বাজারটি সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন। বাজারে মাছ, মাংস, সবজি, মুদিসহ ২ শতাধিক দোকান ছিল। এখন ৫০ থেকে ৫৫টি দোকান রয়েছে।প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাজারটি ছিল জমজমাট। ধলপুর, গোলাপবাগ, যাত্রাবাড়ী, মানিকনগর, মুগদা, মান্ডা, সায়েদাবাদসহ এ এলাকার লোকজন এখানে বাজার করত। বাজারে ছিল ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়। ব্যবসায়ীরা যেমন বেচা-বিক্রি করে ভালো টাকা-পয়সা আয় করছিলেন। পাশাপাশি ক্রেতারাও মাছ, মাংস, সবজি সুলভ মূল্যে ক্রয় করে তৃপ্তিতে ছিলেন। কিন্তু আশপাশের বাজারের কারণে ধলপুর মালতিলতা কাঁচাবাজারে এখন ক্রেতা কমছে। ঘরের কাছে বাজার পেয়ে মানুষ সেখানেই বাজার করেন। এতে বৈধ বাজারটি ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, ধলপুর বাজারের চার পাশে অবৈধ বাজারগুলো হল- গোলাপবাগ মাজার গলি বাজার, ঋষিপাড়া গলি বাজার, ১০ নম্বর সিটি কর্পোরেশনের কোয়াটারের সামনের বাজার, ধলপুর কোলস্টোরেজ গলি বাজার, বড় বাজার, উত্তর যাত্রাবাড়ী বড় বাজার। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় ও ফুটপাতে অবৈধ বাজার হওয়ায় সিটি কর্পোরেশনের ধলপুর বাজার ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে।

বাজারের ব্যবসায়ীরা ঋণ করে চলছে। দোকানের ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, দোকানের লাইসেন্স ফি, দারোয়ানের বেতন পরিশোধ করতে পারছে না। অনেকের দোকানের ভাড়া ৩-৪ বছর বকেয়া রয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী এসব বিল পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে গেছে।

বাজারের এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, ১৯৮৬ সাল থেকে আমি এ বাজারের ব্যবসা করি। আগে ক্রেতা ভরপুর ছিল। আগে দোকান ভাড়া দিতাম ৪ হাজার টাকা, এখন দিই ১৫শ’ টাকা। এ টাকা দিতেও কষ্ট হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের নিকট আবেদন করব আরও ভাড়া কমাতে।

বাজারের এক মুদি ব্যবসায়ী বলেন, ৭-৮ বছর ধরে বাজারের ব্যবসায়ীরা কষ্টে আছে। কাস্টমার নেই বললেই চলে। প্রতি মাসে দোকানের ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল অন্যান্য খরচসহ প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। এছাড়া সংসার খরচ তো আছেই। প্রতি মাসে ধারদেনা করে সংসার চালাই। কি করব বুঝতে পারছি না।

বাজারের চিড়া ও মুড়ি ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে কাস্টমার নেই। ১৭-১৮ বছর বাজারের বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। আশায় বুক বেঁধে আছি আবার আগের মতো বাজার জমজমাট হবে।

ধলপুর মালতিলতা কাঁচাবাজার কমিটির সভাপতি বলেন, বাজারের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমি সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। আমি একজন ব্যর্থ সভাপতি। বাজারের ব্যবসায়ীদের করুণ অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে।

বাজারের চার পাশে অবৈধ বাজারের কারণে এ বাজার এখন ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীও কমে গেছে। ধলপুর বাজারকে জমজমাট করতে চার পাশের অবৈধ বাজার বন্ধ করার বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন মেয়রের কাছে বারবার অভিযোগ করেও কোনো ফল পাইনি।

সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাজার বেহাল দশার কারণ জানলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বাজারের কোনো দোকানদার ঠিকমতো ভাড়া না দিলে তাদেরকে ১৫ শতাংশ জরিমানা দিতে হয়। দোকানের বরাদ্দ বাতিল করা হয়।

ডিএসসিসি ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাদল সরদার বলেন, এক সময় বহু দূর-দূরান্তে মানুষ বাজার করতে যেত। আজকাল মানুষ ডিজিটাল হয়ে গেছে। চার পাশে অবৈধ বাজারে ভরপুর। ঘরের কাছে সব কিছু পায়।

যার কারণে ঐতিহ্যবাহী ধলপুর বাজারে এখন ক্রেতা নেই। ব্যবসায়ীরা অনেকেই এ বাজার থেকে অন্যত্র চলে গেছে। বাজারটি জমজমাট করা খুবই জরুরি।