• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০২:২১ পূর্বাহ্ন

মুন্সিগঞ্জে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে ১৩ ডাকাত, গ্রেফতার করতে পারিনি পুলিশ


প্রকাশের সময় : মে ৪, ২০২৩, ১:১৭ অপরাহ্ন / ৫৩
মুন্সিগঞ্জে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে ১৩ ডাকাত, গ্রেফতার করতে পারিনি পুলিশ

এম রাসেল সরকারঃ মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার বাঘাইকান্দিতে পালিয়ে যাওয়া ১৩ ডাকাত এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে গ্রেফতার করতে পারিনি পুলিশ তাদের। তবে এরইমধ্যে অস্ত্র ও সাড়ে ৩৪ লাখ টাকাসহ ৭ ডাকাত গ্রেফতার করা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জে তিন ডাকাত দলের একত্রে পদ্মায় ডাকাতির চেষ্টা; তাদের দেখতে থানায় ভিড় করছেন এলাকাবাসী।

এদিকে ডাকাতি ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দঘাট থানায় বুধবার (০৩ মে) দুটি মামলা করা হয়েছে। একটি ডাকাতি মামলা এবং অপরটি অস্ত্র মামলা। ভুক্তভোগী এক গরু ব্যবসায়ী ডাকাতির মামলাটি করেছেন। আর অস্ত্র মামলার বাদী হয়েছেন ফরিদপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এক এসআই।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তিনটি ডাকাত দল একত্রে হয়ে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। এর মূল পরিকল্পনাকারী মুন্সিগঞ্জের। এছাড়াও ডাকাতির সাথে মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর ও নারায়ণগঞ্জের ২০ ডাকাত যোগ দেয়। যে স্পিডবোট ব্যবহার করা হয়েছিল এটি মাওয়া থেকে নেয়া হয়। মানিকগঞ্জের আরিচা হাটে মঙ্গলবার বিকেলে গরু বিক্রি করেন গরু ব্যবসায়ীরা। গরু বিক্রির টাকা নিয়ে ট্রলারে করে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে যাচ্ছিলেন তারা। দৌলতদিয়ায় ৬ নম্বর ফেরিঘাটে পৌঁছানোর পর ২০ জনের একটি ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে টাকা কেড়ে নিয়ে স্পিডবোট নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ খবর জানতে পেয়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার ধাওয়া করে পুলিশ। এ সময় দফায় দফায় পুলিশের সাথে ডাকাতদের গুলি বিনিময় হয়। পরে সাতজনকে গ্রেফতার করেন তারা।

এদিকে রাজধানীর গুলশানে নৌ পুলিশের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নৌ পুলিশ প্রধান (অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক) শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনটি ডাকাত দল একত্রে হয়ে এ ডাকাতি করেছে। গ্রেফতার সাতজনের মধ্যে তাজুল ইসলাম (৩০) ও সিদ্দিকুর রহমান (৩০) আলাদা দুটি ডাকাত দলের নেতৃত্ব দেন।

আরেকটি ডাকাত দলের নেতা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। তাজুল ও সিদ্দিকুরের বিরুদ্ধে তিনটি করে ডাকাতির মামলা রয়েছে। এ ডাকাত দলের অন্য সদস্যরা হলেন-মহসিন সরকার (৩০), শাহিন ব্যাপারী (৩৫), মো. মেহেদী (২৫), মো. সিহাব (২২) এবং এবাদুল ব্যাপারী (৪০)। ডাকাত দলের সদস্যরা আগেও বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও আছে বলে জানান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শফিকুল ইসলাম।

তিনি আরও বলেন, জামিনে বের হয়ে তারা আবারও ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এমন কি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়া ব্যক্তিও জামিনে বেরিয়ে আবার ডাকাতি করেছেন।

মঙ্গলবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ৯৯৯ ও স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারে দৌলতদিয়ায় ৬ নম্বর ফেরিঘাটে অস্ত্রের মুখে ২০ জনের একটি দল ডাকাতি করছে। খবর পেয়ে দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির একটি দল স্পিডবোট নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে ডাকাত দল নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। নৌ পুলিশও স্পিডবোট নিয়ে ডাকাতদের পিছু ধাওয়া করে। একপর্যায়ে তারা বিষয়টি নৌ পুলিশ সদর দপ্তরকে জানায়। পরে নৌ পুলিশের সদর দপ্তর থেকে ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং চাঁদপুর অঞ্চলের বিভিন্ন নৌ থানা ও ফাঁড়িকে অবহিত করে বলে জানান তিনি।

পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও জানান, দ্রুততম সময়ে ডাকাত দলকে গ্রেফতারে অন্তত ছয়টি নৌ পুলিশ ফাঁড়ি তৎপর হয়। একপর্যায়ে ডাকাত দল মুন্সিগঞ্জ সদর বাঘাইকান্দি গ্রামের খালের পাড়ে স্পিডবোটটি রেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। নৌ পুলিশও তাদের পিছু ধাওয়া করে; পরে মুন্সিগঞ্জ জেলা পুলিশও অভিযানে যুক্ত হয়। এলাকাবাসী মসজিদের মাইকেও ঘোষণা দেন। পরে জেলা পুলিশ দুইটি ঘরে পালানো সাত ডাকাতকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। তাদের কাছ থেকে গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ডাকাতি করা ৩৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

প্রথমে ১৫ লাখ ১০ টাকা ভর্তি একটি বেগ উদ্ধার করা হয়। পরে মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল-মামুনের নেতৃত্বে আত্মগোপনে থাকা লালনের ঘরটিতে বিশেষ তল্লাশি চালিয়ে ১৯ লাখ ৫২ হাজার টাকার আরেকটি বেগ এবং একটি একনালা বন্দুক উদ্ধার হয়। এদিকে ডাকাতদের কাছ থেকে আটটি মোবাইল ফোন, স্পিডবোট, ছয়টি ছেনি ও একটি কাটার জব্দ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের প্রথমে মুন্সিগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয়। এখান থেকেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি ডাকাত গ্রেফতারের পরিকল্পনা চলছিল। তবে রাত ১টার দিকে আরেকটি নির্দেশে নৌ পুলিশের কাছে গ্রেফতারকৃত ডাকাত ও উদ্ধারকৃত টাকা ও অস্ত্রসহ সব মালামাল হস্তান্তর করা হয়।