• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে ইটভাটা গুলোতে কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব চলছে


প্রকাশের সময় : মার্চ ৩, ২০২৩, ৭:৪৩ অপরাহ্ন / ৬১
পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে ইটভাটা গুলোতে কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, পিরোজপুরঃ পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে ইটভাটা গুলোতে কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব চলছে। একদিকে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। অপরদিকে ভাটার কালো ধোয়া জনজীবন চরম ঝুকির সম্মুখীন।

কয়লা দ্বারা ইট পোড়ানোর শর্ত থাকলেও বেশির ভাগ ভাটায়ই কোন কয়লা ব্যবহৃত হচ্ছে না। এক সময় গাছের ছোট ডাল পালা যাহা লাকড়ি হিসেবে পোড়ানো হত। বর্তমানে আস্ত গাছ ছোট ছোট টুকড়া করে কুঠার, বাইশ দিয়ে বা স্বমিলে চেরাই করে দেদারছে ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে। পরিবেশ আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জনবসিতি এলাকায় স্থাপিত হয়েছে ওইসব ভাটা। উপজেলার প্রায় শতভাগ ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। প্রকাশ্যে এসব কর্মকান্ড চললেও দেখার যেন কেউ নেই।

সরেজমিনে পৌর শহরে প্রবেশের মুখে স্বরূপকাঠি সদর ইউনিয়নের উত্তর শর্ষিনা গ্রামে দুইটি ভাটা। একটি ইভা অন্যটি শর্ষিনা ব্রিক্স। ইভা ব্রিক্স ভাটায় কয়লা ব্যবহার করা হলেও পার্শবর্তী শর্ষিনা ব্রিক্স এ প্রকাশ্যে শতভাগই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। জলাবাড়ী ইউনিয়নে মামুন ব্রিক্স এর একটি ও সততা ব্রিক্স এর দুইটি ভাটা রয়েছে। মামুন ব্রিক্স কয়লা দিয়ে ইট পোড়ালেও সততা ব্রিক্স এর দুটি বাটার একটিতে কয়লা অপরটিতে সম্পূর্ন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সুটিয়াকাঠি ইউনিয়নের সন্ধ্যা নদীর তীর এলাকায় আর বিএফ ব্রিক্স, লাকি ব্রিক্স, এমবিএফ ব্রিক্স, টিবিএফ ব্রিক্স, নামের চারটি ভাটা রয়েছে। যেখানে সবগুলো ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।

শর্ষিনা ভাটার মালিক মনিরুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, কয়লার দাম বেশি বিধায় কাঠ পোড়াচ্ছি। আমি একা নই উপজেলা চেয়ারম্যানের সততা ব্রিক্স, সুটিয়াকাঠি এলাকার সবগুলো ভাটায় কোন কয়লা নেই সবাই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ায়। বুঝেনতো সবাইকে ম্যানেজ করে ব্যবসা করতে হয়।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হকের সাথে কথা বললে, তিনি বলেন সততা ব্রিক্স এর মালিক আমি নই। আমার কোন ইট ভাটা নেই। ওই ভাটার মালিক আমার বন্ধু বিধায় তাদের সাথে টাকা পয়সার লেনদেন আর ওঠা বসার কারনে কেউ কেউ ধারনা করতে পারেন আমি ভাটার ব্যবসার সাথে জড়িত। কিন্তু আমি ওই ব্যবসা করি না।

ওই ভাটার অপর মালিক মো. রুহুল আমিন বলেন, কয়লার খুব অভাব। দুটি ভাটায়ই কয়লা দিয়েই পোড়াতাম। বর্তমানে কয়লা পাওয়া যায় না বিধায় বাধ্য হয়ে একটিতে কাঠ পোড়াই।

আর বিএফ এর মালিক বলেন, দেশেই কয়লা নেই। সামান্যকিছু কয়লা পেয়েছিলাম। তার দাম অত্যাধিক বিধায় পোষাতে পারি না। আমরা লাকড়ি পোড়াই না। বড় পেকিং কাঠ চেরাই করে ব্যবহার করি।

একই ভাবে এমবিএফ এর মালিক হেকমত মিয়া, এলবিএফ এর মালিক সোহেল, টিবিএফ এর মালিক মুক্তাদির মিয়ার একই কথা কয়লা পাওয়া যায়না বিধায় পেকিং কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কদাচিৎ কয়লা পাওয়া গেলেও আকাশচুম্বি মূল্যের কারনে বাধ্য হয়ে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।

অপর দিকে কয়লা পোড়ানো ভাটা ইভা ব্রিক্স এর মালিক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগে কাঠ পোড়া তাম। সরকার কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন তখন থেকে একটুকরা কাঠ ব্যবহার করিনা। কয়লা দিয়ে ইট পোড়ালে ইট ভাল হয়। ব্যবসা বেশি না হলেও ইটের চাহিদা বেশি থাকে।

এম এম ব্রিক্স এর মালিক মামুনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, তার ভাটায় সম্পূর্ন কয়লা পোড়ানো হয়। তাছাড়া কাঠ পোড়াতে গেলে না প্রকার জটিলতায় পড়তে হয়। সে কারনে কষ্ট হলেও কয়লাই সংগ্রহ করি।

অপর দিকে ইট ভাটার মাটি যোগান দিতে সন্ধ্যা নদীর তীর, ফসলী জমির মাটি উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বার বার জমির মালিক, জনতার তৎপরতায় প্রশাসনের আটক করে ছেড়ে দেওয়ার ফলে, বহাল তবিয়তে চলছে মাটি কাটারও মহোৎসব।

একাধিকবার জরিমানাও করা হয়েছে ভ্রাম্যমান আদালতে। তবুও থামছে না এ কর্মকান্ড। অপর দিকে সরকারী ভাবেও ভাঙন রোধে কোটি কোটি টাকা সন্ধ্যায় ঢালা হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় মাটি কাটা ও কাঠ পোড়ানোর ঘটনা ঘটলেও কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে নেছারাবাদ(স্বরূপকাঠি) উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাপস পালের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, নদীর তীর থেকে মাটি কেটে নেওয়া যাবেনা। তারপরে গর্ত করে মাটি নেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা নজদারী করছি। কেউ মাটি কাটলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহাবুব উল্লাহ মজুমদারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য আছে। অচিরেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো বা নদীর তীর থেকে মাটি কাটার কোন সুযোগ নাই। মাটি কাটার দায়ে জরিমানাও করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বরিশাল পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মো. আব্দুল হালিমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমাদের কাছে অভিযোগ আছে। বরিশালের সকল বিভাগে এ অভিযোগ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে আমরা অভিযানে করতেছি। খুব স্বরূপকাঠি শিগ্রই অভিযান করা হবে।