• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৩:০০ পূর্বাহ্ন

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব বেড়েই চলছে


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩, ৯:১৬ অপরাহ্ন / ৩৩
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব বেড়েই চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাটঃ সাম্প্রতিক সময়ে ‘কিশোর গ্যাং’ নতুন এক আতঙ্কের নাম। দেশের অনান্য স্থানের মত বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জেও এর উপদ্রব বেড়েছে। কিশোর অপরাধীরা ‘গ্যাং’ বা গ্রুপ সৃস্টি করে বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। জড়িয়ে পড়ছে মারামারি, মাদক ব্যবহার, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে সঙ্গে।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর অভিযানের পরও থামছে না কিশোর অপরাধ।

এই কিশোররা প্রচলিত সমাজের মধ্যে নিজেদের মতো করে নতুন এক সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। কিশোর অপরাধীরা আবার বিভিন্ন গ্যাং এর মাধ্যমে তথাকথিত ‘রাজনৈতিক বড় ভাইদের’ আষ্কারা পেয়ে অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। প্রশাসন এ অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পরও কিশোর গ্যাং এর অপরাধীদের কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। সারাদেশের ন্যায় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলাতেও বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব। কিশোর গ্যাংয়ের কবল থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন অভিভাবক মহল।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মোরেলগঞ্জ পৌর শহরের ভাইজোড়া কাঁঠালতলা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার একটি মুদি দোকানের সামনে কিশোরদের আড্ডাবাজি চলছে। রাস্তার সাথে ওই দোকান হওয়ায় চলাচলরত স্কুল ছাত্রীদের ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন সময় এরা অভিভাবকদেরও নানা ধরনের হুমকি দিয়ে আসছে।

এদের কারো কারো আছে আবার রাজনৈতিক সংশ্লিটতা। এদের ভয়ে কেউ কারো কাছে মুখ খুলতে সাহস পায়না। শুধু ভাইজোড়া কাঁঠালতলা নয়, এমন চিত্র দেখা গেছে বাস স্টান্ড স্কুল কলেজ মাদ্রাসার সামনে খেয়া ঘাট লঞ্চ ঘাট কলেজরোড, সকাল বাজারসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে।

ভাইজোড়া এলাকার কয়েকজন অভিভাবক বলেন, প্রায় সময়ই কিছু কিশোর ছেলেপেলে এলাকার বিভিন্ন দোকানের সামনে দলবদ্ধ হয়ে বসে থাকে। যখনই কোন স্কুলছাত্রী বা মেয়ে আসে তখনই তারা নানা ধরনের অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করতে থাকে এবং ওই ছাত্রীদের উদ্দেশ্য করে ইভটিজিং করতে থাকে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে সাহস পায়না। সাধারণ মানুষের অসহায় এ অবস্থা থেকে মুক্তি না মিললে সমাজে বাস করাই দায় হবে। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।শিশু-কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা কমানোর জন্য আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি পারিবারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে উল্লেখ করে বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কোনো মানুষই অপরাধী হয়ে জন্ম নেয় না। বিভিন্ন পরিস্থিতে শিশু-কিশোররা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। আমরা অপরাধী শিশু-কিশোরদের আসামি বলি না। তাদের সুষ্ঠু জীবনে ফেরার জন্য পরামর্শ দেই। বাবা-মাসহ পরিবারের অভিভাবকদের শিশুদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচারণ করতে হবে। কোনো শিশু-কিশোর যদি ছোট অপরাধ করে ফেলে, তবে তাকে বোঝাতে হবে।

শিশু-কিশোররা যদি পরিবারের বড় সদস্যদের কাছ থেকে বন্ধুসুলভ ব্যবহার পায়, তাহলে কিশোর অপরাধ কমবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শিশুদের অপরাধ প্রবণতা কমাতে করণীয় বিষয়ে বাগেরহাটের প্রবেশন কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারের ফলে শিশু-কিশোররা অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। বাবা-মায়ের দাম্পত্যকলহ, বাবা-মায়ের অবহেলা, হতাশা এবং সামাজিক-পারিবারিক বন্ধনের অভাবও শিশুদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতার জন্ম দেয়। অনেক সময় পারিবারিক দারিদ্রতাকে পূঁজি করে স্বার্থান্বেষী মহল শিশুদের আইন বিরোধী কাজে ব্যবহার করে। শিশুদের অপরাধ প্রবণতা কমাতে সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার বিস্তারের সঙ্গে এবং অপ-সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। শিশুদের সুস্থ বিকাশের জন্য খেলাধুলার সুযোগ করে দেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ থানায় অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, ইভটিজিংসহ সকল প্রকার অপরাধ নির্মুলে প্রশাসন বদ্ধ পরিকর। বিশেষ করে কিশোরদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে আমরা সকল প্রকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

সচেতনতামুলক সেমিনারের আয়োজন করছি। এর পরেও যদি কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।