• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৫:১৫ অপরাহ্ন

কারাগারে অবাধ মোবাইল ব্যবহার : জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা কথা বলছে বাইরে থাকা অন্য সহযোগীর সঙ্গে


প্রকাশের সময় : মার্চ ৯, ২০২৩, ১১:৫০ অপরাহ্ন / ১১০
কারাগারে অবাধ মোবাইল ব্যবহার : জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা কথা বলছে বাইরে থাকা অন্য সহযোগীর সঙ্গে

বিশেষ প্রতিনিধিঃ কঠোর নিষিদ্ধ থাকার পরও দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন কারাগারে মোবাইল ব্যবহার করছে হাজতিরা। এমনকি সেলের ভেতরেই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা কথা বলছে বাইরে থাকা অন্য সহযোগীর সঙ্গে। ঢাকার আদালত থেকে ছিনতাই ঘটনার আগের দিনও কারাগারে ছিনতাই হওয়া জঙ্গিদের সঙ্গে কথোপকথন হয়েছে। কখন তাদের আদালতে নেওয়া হবে সেই সময়ও জেনে যায় সহযোগীরা। দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর গ্রেপ্তার হওয়া অন্য জঙ্গিদের কাছ থেকে এসব তথ্য পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো।

এদিকে ঢাকা থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি (২৪) নামে এক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশ কর্তারা একই কথা বলছেন, ওই দুই জঙ্গি আমাদের জালে আছে। যেকোনো সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

এদিকে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) গত ছয় মাসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজের আদ্যোপান্ত যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ সময়ে কোন কোন হাজতির সঙ্গে দর্শনার্থীরা দেখা করেছেন তার তালিকা তৈরি করছে পুলিশ। পাশাপাশি রেজিস্টার বই থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্র জানা গেছে।

জানা গেছে, আদালতে আনা-নেওয়ার সময় ডান্ডাবেড়ি ব্যবহার করতে পুলিশের নির্দেশক্রমে অনুরোধ কার্যকর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া আদালতের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের অত্যাধুনিক অস্ত্র দিতে বলেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এ নির্দেশনা পেয়ে অস্ত্রের পাশাপাশি বুলেট প্রুফ জ্যাকেট দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি হাজতখানায় নতুন করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বছরের পর বছর ধরেই কারাগারে নানা অনিয়ম চলে আসছে। এ নিয়ে আমরা বেশ ক্ষুব্ধ। কারাগার হচ্ছে সংশোধনাগার। কিন্তু বন্দিদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে তাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কারাগারের ভেতর মাদক কারবারও চালানো হচ্ছে। মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। জঙ্গিরা কারাগারের সেলেই কথা বলতে পারছেন বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কারারক্ষী অর্থ পেয়ে এসব কর্মকান্ড চালাচ্ছে।

একই কথা বলেছেন পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আদালতে জঙ্গি হামলার পর আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর ঘটনাস্থল থেকে আটক হওয়া অন্য জঙ্গিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা জানিয়েছে, কারাগারের সেলের ভেতরেই তারা মোবাইল ফোনে সহযোগী ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এমনকি ছিনতাইয়ের আগের দিন আদালতে আসা জঙ্গিরা সহযোগীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছে। এসব তথ্য আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। কারা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে, প্রতিটি সেলে জ্যামার বসাতে। যেসব কারারক্ষী এসব অনৈতিক কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, আদালতে যেসব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে বা করছে, তাদের উন্নত অস্ত্র ও বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিএমপি বিষয়টি কার্যকর করেছে।

সূত্র জানায়, ‘কাটআউট’ পদ্ধতিতে চলা মোস্টওয়ান্টেড বহিষ্কৃত জিয়ার সঠিক অবস্থান অজানা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর। পরিচয় গোপন করে জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গিরা দেশের ভেতরেই অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের বেশিরভাগ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে জঙ্গি তৎপরতা চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। আবার কেউ দেশের বাইরেও পালিয়ে গেছে। দেশে ৬৮ কারাগারে জঙ্গি আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৩৯২টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ৫ হাজার ২৯৮ জন। জামিনে আছে ২ হাজার ৫১২ ও জেলহাজতে রয়েছে ১ হাজার ৭৯৬ জন।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার বলা হয়। যেসব জঙ্গি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আরও বেশ কয়েক জঙ্গি নজরদারির মধ্যে রয়েছে। তাদেরও আমরা আইনের আওতায় আনতে পারব বলে আশা করছি।

ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় এক জঙ্গি গ্রেপ্তার : অমি এজাহারভুক্ত ১৪ নম্বর আসামি। তবে তাকে কোথায় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই বিষয়ে পুলিশ কিছু বলছে না। অমি আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার সদস্য। তার গ্রামের বাড়ি সিলেট। ব্লগার নাজিমউদ্দীন সামাদ হত্যার মিশনেও অংশ নিয়েছিল সে।