• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৩:০৮ অপরাহ্ন

সাতক্ষীরা সীমান্ত ভেড়ি বাঁধ নির্মাণে ভারতীয় বিএসএফের কর্তৃক বাধা


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৩, ২০২২, ৫:২৩ অপরাহ্ন / ২০৫
সাতক্ষীরা সীমান্ত ভেড়ি বাঁধ নির্মাণে ভারতীয় বিএসএফের কর্তৃক বাধা

মো সোহান সাতক্ষীরা থেকে ফিরেঃ সাতক্ষীরা বন্যা নিয়ন্ত্রণের সাড়ে ৯ কিলোমিটার সীমান্ত বেরিবাদের নির্মাণ কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা (এক)। এতে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা।
সাতক্ষীরা সীমান্ত ভেড়ি বাঁধ নির্মাণ কাজ চলা কালিন সময়ে কুশখালির খইতলা নামক স্থানে পৌঁছালে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাধার মুখে সাতক্ষীরা সীমান্ত ভেড়ি বাদের নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা (এক)এর সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী দীপঙ্কর কুমার দাস এর সাথে কথা বলে যানা যায়,
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা কর্তৃক ফোল্ডার নম্বর এক এর চরবালিতা, বাকাল ও কুশখালী এলাকায় সীমান্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। গত জুন ২০২১ এ ছয়ঘড়িয়া নামক স্থানে বাঁধ মেরামত করা কালীন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক বাধা প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজেপি কে আমরা জানিয়েছিলাম তারা ভারতীয় বিএসএফের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও এখনো কোনো সমাধান হয়নি।
সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রতিবছর ভারতীয় বন্যার পানিতে ব্যাপক জানমালসহ ফসলাদির মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
গত দুই হাজার সালের ভারতীয় বন্যার পানির চাপে সীমান্তের বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ সীমান্তের ৯.৪০০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঢাকা টেন্ডার আহ্বান করেন। টেন্ডারে সর্বোনিন্ম দরদাত মেসার্স গোলাম রব্বানী লিমিটেড ৫কোটি ৪৬ লক্ষ টাকায় কাজটি করার দায়িত্ব পায়।
সীমান্ত বেড়িবাঁধ ৫.০০কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হওয়ায় ৩ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কাজটি চলমান রয়েছে। বাকি ৪.৪০০ কিলোমিটার ভারত সংলগ্ন হওয়ায় কাজটি ধীরগতিতে এগোচ্ছিল। এমত অবস্থায় বেড়িবাঁধের কাজ সদর উপজেলার খইতলা নামক স্থানে পৌঁছালে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান করে এবং কাজটি বন্ধ হয়ে যায়।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড কুশখালি ও বৈকারি সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের সাথে পতাকা বৈঠক আহ্বান করে আলোচনা করেও কোন ফল হয়নি। ঠিকাদার সূত্র জানায়, ভারতীয় বিএসএফের প্রবল বাধার মধ্যেও এস্কিবেটর মেশিন বাদে ডেইলি লেবার দিয়ে অত্যন্ত গোপনে বাধের কাজ চলছিল। কিন্তু ঘোনা ইউনিয়ন এর আওতাধীন বলদ ঘাটা অদূরে কাজ করতে গেলে ঘোনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের সহ দুইজন ইউপি সদস্য নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলে।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার আমাকে সিডিউল দেখায়নি। তারা দায়সারা গোছের কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদার যোগসাজশে বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করছে। তাছাড়া ভেড়ি বাদের উপর লাগানো গাছগুলো কেটে নেওয়া হয়েছে।
কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির খোঁজ নিতে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, কাজ করা হচ্ছে ভারতীয় বিএসএফের চোখ এড়িয়ে। ইউপি সদস্যরা কিছু অর্থ-বাণিজ্য করতে চাই টিকাদারের নিকট থেকে। তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৩ একর জমি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বিনা খরচে ভোগ দখল করছে। সেখানে ঘের করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এই ঘেরের পানি সেচে বাধের জন্য মাটি দিতে হবে বিধায় কাজে বাধার সৃষ্টি করছে।
ভেড়ি বাধের গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ তোলে ওই দুই ইউপি সদস্য। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা বন বিভাগে খোঁজ নিতে গেলে বনপ্রহরী রেজাউল ইসলাম বলেন, বেড়িবাঁধের জন্য গাছগুলো কেটে নেওয়া চিঠি দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা এক। একারণে বনবিভাগ প্রকাশ্যে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো বিক্রি করে দেয়। বিক্রয় কৃত অর্থের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ৫%, এলাকার উপকারভোগী ৫৫ শতাংশ, ভূমি মালিক ২০% বনবিভাগ রাজস্ব ১০%, বাকি ১০% পুনরায় গাছ রোপণের জন্য রাখা হয়েছে।
উপকারভোগীদের একাংশের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গাছগুলো প্রকাশ্যে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রয় করা হয়েছে। এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদার কে জড়িয়ে যে খবর প্রচার করা হচ্ছে তা অসত্য ও মিথ্যা বানোয়াট।
বরঞ্চ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের লোক মারফত রাতের অন্ধকারে ৯ টা বড় গাছ কেটে নিয়েছে। এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,গাছগুলো বাজারের মধ্যে থাকায় বাজারের ক্ষতি হচ্ছিল বিদায় গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। বলদ ঘাটা সংলগ্ন বেড়িবাঁধ নির্মাণের আরেক বাধা প্রদানকারী সাবেক প্রভাবশালী চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান মোসা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৬৫ বিঘা জমিতে মৎস্য চাষ করেছেন, যা বেড়িবাঁধের অতি নিকটে, । তাকে পানি সেচ দেওয়ার কথা বলায় এবং ঘের থেকে মাটিতে দিতে হবে বিধায় নির্মাণ কাজে বাধা দিচ্ছেন। সীমান্তের ভেরিবাদ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী দীপঙ্কর কুমার দাস বলেন, যে এলাকায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ওই এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ৭ দিন আগে। এর ভেতরে ঠিকাদারকে কোন বিল প্রদান করা হয় নাই। তাহলে দুর্নীতি তা হলো কিভাবে।
এ বিষয়ে এলাকাবাসীদের প্রানের দাবি বিএসএফের বাধার মুখে কাজ বন্ধ থাকলেও যেভাবে হোক বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে আবারো ভারতীয় পানির চাপে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিনে অবস্থিত এ জেলার সাতটি উপজেলা আবার পানিতে তলিয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই।