• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৬:২৭ অপরাহ্ন

রাজধানীর সড়কে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মামলা হলেও শৃঙ্খলার উন্নতি নেই


প্রকাশের সময় : মার্চ ৩০, ২০২৩, ১:১৯ পূর্বাহ্ন / ৪৯
রাজধানীর সড়কে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মামলা হলেও শৃঙ্খলার উন্নতি নেই

এম রাসেল সরকার, ঢাকাঃ ঢাকার সড়কে বিপুলসংখ্যক মামলা হলেও শৃঙ্খলার তেমন কোনো উন্নতি নেই। গত পাঁচ বছরে ঢাকার সড়কে বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ ৩৬ লাখেরও বেশি মামলা করেছে। তাতে ট্রাফিক পুলিশের ব্যক্তিগত কোটা পূরণ হলেও সড়ক শৃঙ্খলায় কোনো ইতিবাচক প্রভাব নেই। বরং বিশৃঙ্খলার দিনে দিনে তীব্র হচ্ছে।

পথচারী-যাত্রীদের ভোগান্তি ও দুর্ভোগের পাশাপাশি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বাড়ছে। গত এক বছরে রাজধানীতে ২০২১ সালের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে ৯৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। পথচারীরা যানবাহনের ধাক্কায় বা চাপায় বেশি হতাহত হয়েছে। রাজধানীর সড়কে গত বছর দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২২৭ জন। তাদের মধ্যে পথচারীর সংখ্যা ৬০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এর আগের বছর রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১৩৭ ছিল। বিআরটিএ, ট্রাফিক বিভাগ এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মোটরসাইকেলের সংখ্যা বর্তমানে রাজধানীর সড়কগুলোতে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা। গত চার বছরে ঢাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাদে অন্যান্য দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় সমান। কিন্তু ক্রমাগত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়তে থাকায় বছর বছর তালিকা বড় হচ্ছে। তাছাড়া ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের ব্যাপকতায় সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। ঢাকার রাস্তায় এখন পাঁচ লাখেরও বেশি যানবাহন ফিটনেস ছাড়া চলাচল করছে। বিশেষ করে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে বড় একটি অংশই ফিটনেসবিহীন ও পুরনো। সেগুলোর চালকদেরও অধিকাংশেরই লাইসেন্স নেই। আর অভিজ্ঞতা ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের মধ্যে লাগামহীন প্রতিযোগিতা সঙ্কট আরো তীব্র করছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ঢাকায় বিদ্যমান বাসের রুট সংখ্যা প্রায় ৩শ আর কোম্পানির সংখ্যা দুই শতাধিক। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল বন্ধের পাশাপাশি কোম্পানির সংখ্যা কমানোর দাবি জানাচ্ছে। ঢাকায় বাসের রুট ও কোম্পানির সংখ্যা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ২০২০ সালে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করে। তাতে বলা হয়, ঢাকার বিদ্যমান প্রায় ৩শ রুট পুনর্বিন্যাস করে ৪২টিতে নামিয়ে আনা হবে। এসব রুটে বাস পরিচালনা করবে ২২টি কোম্পানি। জয়েন্ট ভেঞ্চার পদ্ধতিতে কোম্পানিগুলো গঠন করা হবে। সব মিলিয়ে ৭ হাজার ৩৩৫টি বাস পরিচালনা করা হবে রাজধানী ঢাকায়।

কোম্পানিগুলোকে নির্দিষ্ট এলাকা (ক্লাস্টার) ও রুট ভাগ করে দেয়া হবে। একটি ক্লাস্টারে নির্ধারিত কোম্পানির বাইরে অন্য বাস চলবে না। এ পরিকল্পনার আলোকে বর্তমানে ‘গ্রিন ক্লাস্টারের’ আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি রুট চালু হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষামূলক রুটগুলো জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। পরিবহন মালিকরাও এতে আগ্রহ পাচ্ছে না।

সূত্র আরো জানায়, ঢাকার রাস্তায় এখন বিশৃঙ্খলা কমার চেয়ে বরং বাড়ছে। আর ট্রাফিক পুলিশে এখন মামলার সংখ্যা ও জরিমানা আদায়কে সফলতার সূচক হিসেবে ধরা হচ্ছে। তাতে মাঠপর্যায়ে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেয়ে মামলা করা ও জরিমানা আদায়ের বিষয়টিই প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি। দেশে একের পর এক সড়ক-মহাসড়কের মতো অবকাঠামো নির্মাণ হলেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। ট্রাফিক পুলিশ তাদের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দেখাতে মামলা করে যাচ্ছে। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হচ্ছে না। দিনে গড়ে ৭২৫টি মামলা দিচ্ছে ঢাকার ট্রাফিক বিভাগ। সব মিলিয়ে গত পাঁচ বছরে ৩৬ লাখ ২০ হাজার ৩১৯টি মামলা করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২৮৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। বর্তমানে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের মোট জনবল রয়েছে ৩ হাজার ৯২৯ জন।

ইন্টারসেকশন ব্যবস্থাপনা, বাস ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ, পথচারী শৃঙ্খলা, হকার নিয়ন্ত্রণ, নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি পার্কিং ও ফুটপাত প্রতিবন্ধকতামুক্ত রাখা তাদের মূল দায়িত্ব। এর বাইরে সড়ক শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিরুদ্ধে মামলা, ভিআইপি ডিউটির মতো দায়িত্বও পালন করে থাকেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।

এদিকে এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান জানান, মামলা কখনই ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। সড়ক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যই কেবল প্রসিকিউশন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। রাজধানীর যানজট নিরসনের পাশাপাশি দুর্ঘটনা রোধেও বিশেষভাবে কাজ করছে ট্রাফিক বিভাগ।

ইন্টারসেকশন ম্যানেজমেন্টসহ বেশকিছু বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েই রাজধানীর যানজট নিরসনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।