• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৪:৪৬ অপরাহ্ন

জুতা পলিশ করে সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করেছেন দুলাল দাস


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১৭, ২০২২, ৩:৩৬ অপরাহ্ন / ৬৮
জুতা পলিশ করে সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করেছেন দুলাল দাস

মোস্তাইন বীন ইদ্রিস (চঞ্চল),খুলনা: দুলাল চন্দ্র দাসের বয়স ৬৫ বছরের কাছাকাছি। জুতা পলিশের কাজ করেন। মানুষের নানা কথা শুনেও নিজের পেশা ধরে রেখেছেন। তবে ছেলেদের আর এই পেশায় আনেননি। তাঁদের লেখাপড়া করিয়েছেন। দুলাল দাসের তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবার বড় মেয়ে। তাঁকে পড়াশোনা করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলের মধ্যে একজন স্নাতকোত্তর শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। পরিবার নিয়ে থাকেন সাতক্ষীরায়। আর ছোট ছেলে একটি কোম্পানিতে কাজ করেন। মা, স্ত্রী, ছোট ছেলেসহ ছয়জনের সংসার দুলাল দাসের।

দুলাল দাস বলেন, শত কষ্ট হলেও ছেলেমেয়েদের কখনো আমার পেশায় নিয়ে আসিনি। তাদের লেখাপড়া করানোর চেষ্টা করেছি। এ পেশায় মানুষের কাছে নানান কথা শুনতে হয়। আমার ছেলেরা এমন কথা শুনুক, সেটা আমি চাইনি। তাঁর সঙ্গে কথা হয় খুলনার ময়লাপোতা এলাকায়। মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে একটি অফিসের ছায়ায় বসে জুতা পলিশ করছিলেন। কথায় কথায় দুলাল দাস বলেন, এখন আর শরীর আগের মতো নেই। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানান রোগ। মাজাব্যথা, ঘাড়ব্যথা লেগেই আছে। অন্য রোগও আছে। তাই প্রতিদিন আসতে পারি না। একদিন এলে পরের দিন আসি না।

দুলাল দাসের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের আরাজি গ্রামে। খুলনা শহর থেকে সেটির দূরত্ব প্রায় ২৮ কিলোমিটার। মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ভারতের শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নেন। দেশ স্বাধীন হলে ফিরে আসেন। সেই সময়ের কথা মনে করে তিনি বলেন, ঘরে খাবার নেই, চারদিকে হাহাকার। এমন সময়ে টিকে থাকতে কাজ করা ছাড়া আর কোনো পথ ছিল না। মানুষের বাড়িতে গরু রেখেছি, দিনমজুরের কাজ করেছি। চেয়েচিন্তে বিভিন্ন জায়গা থেকে খেয়েছি। এক বেলা খাবার জুটলে অন্য বেলায় না খেয়ে থাকতে হয়েছে। এক সময় জুতা পলিশ শুরু করি। ৪৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই পেশায় আছি।

জুতা পলিশের জন্য ডুমুরিয়া থেকে খুলনায় আসেন দুলাল। আবার সন্ধ্যায় ফিরে যান। শহরের বিভিন্ন অফিস তাঁর চেনা। হেঁটে হেঁটেই বিভিন্ন অফিসে ধরনা দেন তিনি। কারও জুতা পলিশ করতে হবে কি না জানতে চান। কেউ জুতা পলিশ করতে চাইলে বা সেলাই করতে দিলে তিনি সুবিধামতো কোনো জায়গায় বসে কাজ করে দেন।