• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৬:০১ পূর্বাহ্ন

স্ত্রীর চেয়ে সম্পদ কম : মুরাদের বার্ষিক আয় ১৪ লাখ


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৮, ২০২১, ২:৩৯ অপরাহ্ন / ২১০
স্ত্রীর চেয়ে সম্পদ কম : মুরাদের বার্ষিক আয় ১৪ লাখ

ঢাকা : সময়ের আলোচিত ও সমালোচিত নাম ডা. মুরাদ হাসান। একদিন আগেও তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। কিন্ত শেষ রক্ষা হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য ও অশালীন কথোপকথনের অডিও ফাঁস হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসানের স্থায়ী ঠিকানা জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার দৌলতপুর উত্তর গ্রামে। পেশায় চিকিৎসক হলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় আয়ের উৎসের কলামে পেশা বা চাকরি থেকে সরাসরি কোনো আয় প্রদর্শন করেননি তিনি।

ডা. মুরাদ হাসানের আয়কর বিবরণী ও হলফনামা বিশ্লেষণ করে তার বাৎসরিক আয় ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ২৯৩ টাকা এবং বাৎসরিক ব্যয় ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকার হিসাব পাওয়া যায়। তার উল্লেখযোগ্য সম্পদের মধ্যে রয়েছে দুটি গাড়ি এবং রাজধানীর টঙ্গী ও পূর্বাচলে দুটি প্লটের মালিকানার তথ্য।

তবে মুরাদ হাসানের তুলনায় তার স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসানের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ অনেক বেশি। স্ত্রীর ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, রাজধানীর পুরানা পল্টনে ছয়তলা একটি বাড়ি, বেইলি রোডে একটি ফ্ল্যাট এবং শান্তিনগরের টুইন টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাটের মালিকানার তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলো দান সূত্রে পাওয়া বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঊর্ধ্বতন কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ডা. মুরাদ হাসান ১৯৭৪ সালের ১০ অক্টোবর জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের তালুকদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিয়র রহমান তালুকদার তার পিতা। তিনি এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে পাওয়া তথ্যে আরও জানা যায়, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুরাদ হাসান গৃহ-সম্পত্তি হিসাবে স্থাবর সম্পদের হিসাবের জায়গায় দৌলতপুরের সরিষাবাড়িতে কৃষি জমি হিসেবে ২৫ বিঘার ২/৫ অংশের মালিকানার ঘোষণা দেন। এছাড়া অকৃষি জমি হিসেবে টঙ্গীতে পাঁচ কাঠার ২/৫ অংশ এবং রাজধানীর পূর্বাচলে রাজউক থেকে পাওয়া পাঁচ কাঠা জমির বর্ণনা দিয়েছেন।

হিসাব বিবরণীতে কৃষি জমির মূল্য ঘোষণা না দিলেও টঙ্গীর জমির মূল্য ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং ঢাকার পূর্বাচলের জমির মূল্য ৩৫ লাখ ২৭ হাজার ৯৫০ টাকা দেখিয়েছেন তিনি।

এছাড়া যানবাহন, শেয়ার, ব্যাংকে জমা, আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীসহ প্রভৃতি খাতে এক কোটি ৫০ লাখ তিন হাজার ৯৬৬ টাকা মূল্য হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। ব্যক্তিগত ঋণ দেখিয়েছেন তিন লাখ ৯০ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে জমা দেওয়া আয়কর-বিবরণীতে এমন তথ্য উল্লেখ করেন ডা. মুরাদ।

অন্যদিকে, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুসারে, তিনি কৃষি খাত থেকে বছরে ৬০ হাজার, বাড়ি কিংবা দোকানসহ অন্যান্য খাত থেকে ভাড়াবাবদ এক লাখ ২৩ হাজার ২৯৩ এবং ব্যবসা থেকে ১২ লাখ টাকা আয় করেন। তবে, পেশা ‘চিকিৎসা’ দেখালেও সে খাত থেকে কোনো আয়ের ঘোষণা নেই হলফনামায়।

হলফনামায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ দেখিয়েছেন ২১ লাখ ২৭ হাজার ৩৫ টাকা; বন্ড, ঋণপত্র ও স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগ রয়েছে আড়াই লাখ টাকা; আলিকো ইনস্যুরেন্সে এক লাখ ৩৭ হাজার ২৩১ টাকার বিমা, স্ত্রীর নামে ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের ঘোষণা রয়েছে।

এছাড়া মাত্র আট লাখ টাকা মূল্যের পুরাতন একটি গাড়ি, ৭০ লাখ চার হাজার ৭০০ টাকা মূল্যের নতুন একটি গাড়ির ঘোষণা রয়েছে হলফনামা ও আয়কর বিবরণীতে। নিজ নামে ২৫ ভরি স্বর্ণ এবং স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসানের নামে ১৫০ ভরি স্বর্ণের মালিকানার ঘোষণা রয়েছে সেখানে। এগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বলে উল্লেখ করেছেন ডা. মুরাদ হাসান।

জমি বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত ২০ লাখ, শটগান ও পিস্তলবাবদ তিন লাখ এবং পুঁজি হিসাবে ছয় লাখ টাকার ঘোষণাও রয়েছে হলফনামা ও আয়কর বিবরণীতে।

হলফনামায় স্ত্রীর নামে দান সূত্রে পাওয়া ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকায় ছয়তলা বাড়ি, রাজধানীর বেইলি রোডের বেইলি হাইটস-২ এ একটি ফ্ল্যাট (ফ্ল্যাট নং-১০-ই-২) এবং সন্তানের নামে শান্তিনগরের টুইন টাওয়ারের বি-৫ এর একটি ফ্ল্যাটের মালিকানার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ডা. মুরাদ হাসান ১৯৯০ সালে জামালপুর জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক (এসএসসি), ১৯৯৩ সালে ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ২০০০ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পিজিসি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল করেন।

কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের জেরে বেশ কয়েকদিন ধরে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ডা. মুরাদ হাসান। বিশেষ করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, রাজনীতি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনি জাইমা রহমান এবং সর্বশেষ চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে অশালীন ফোনালাপ ফাঁস হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেত্রীদের বিরুদ্ধেও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন ডা. মুরাদ। তার এমন অস্বাভাবিক আচরণে বিব্রত হন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। একপর্যায়ে সোমবার রাতে ডা. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র পেশ করেন ডা. মুরাদ হাসান। সন্ধ্যায় তা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গৃহীত হয় এবং এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি হয়।

সংসদ সদস্য পদও হারাতে পারেন মুরাদ : এদিকে, মন্ত্রিত্ব হারানোর পর জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয় ডা. মুরাদকে। তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে সুপারিশ করবে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ। এমন প্রেক্ষাপটে দলের প্রাথমিক সদস্যপদও হারাতে পারেন তিনি। এটি হলে সংসদ সদস্য হিসেবে থাকতে পারবেন কি না সে প্রশ্নও সামনে এসেছে।

সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে দুভাবে প্রার্থী হতে পারেন। নির্দিষ্ট কোনো দলের প্রার্থী অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী। কোনো ব্যক্তি ওই দল থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর দল থেকে পদত্যাগ করলে সংবিধান অনুযায়ী তার সংসদ সদস্য পদ থাকে না। ডা. মুরাদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে জামালপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালেও একই আসন থেকে নির্বাচিত হন তিনি।

সংবিধানে যা আছে : সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে। কিন্তু দল যদি কাউকে বহিষ্কার করে সেক্ষেত্রে কী হবে— সংবিধানে সেটি উল্লেখ নেই।

তবে, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোনো সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হইবে কিনা, সে সম্পর্কে কোনো বিতর্ক দেখা দিলে শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য প্রশ্নটি নির্বাচন কমিশনের নিকট প্রেরিত হইবে এবং অনুরূপ ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হইবে।’