• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৬:৩২ পূর্বাহ্ন

লক্ষ্মীপুরের মেঘনা তলদেশের বালু লুটে নিচ্ছে ভোলার বহুল আলোচিত শামীম-নকীব বাহিনী! : বালুদস্যুপনার ভাঙ্গনে ছোট হয়ে আসছে কমল নগর, বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট!


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ১৩, ২০২১, ৩:৪৪ অপরাহ্ন / ৩৫১
লক্ষ্মীপুরের মেঘনা তলদেশের বালু লুটে নিচ্ছে ভোলার বহুল আলোচিত শামীম-নকীব বাহিনী! : বালুদস্যুপনার ভাঙ্গনে ছোট হয়ে আসছে কমল নগর, বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট!

নিজস্ব প্রতিবদকঃ প্রমত্ত্বা মেঘনার অব্যহত ভাঙনে লক্ষ্মীপুর জেলার জনবহুল জনপদ কমলনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর অতি জোয়ারের ফলে যেমনি মেঘনা তীরবর্তী বসতিগুলোর ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে, তেমনি ভাঙনের স্বীকার হচ্ছে হাজারো পরিবার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমল নগর উপজেলার সীমান্তবর্তী মেঘনা নদী হতে পার্শ্ববর্তী জেলা ভোলার একদল দুর্বৃত্ত গত কয়েক বছর যাবৎ রাত-দিন পালা করে বালু কেটে নিযে যাচ্ছে। অত্র এলাকার মেঘনা নদীর তলদেশ হতে অবৈধভাবে বালু কাটার ফলে কমল নগর উপজেলার আয়তন দিন দিন ছোট হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট, চলছে ভাঙা-গড়ার খেলা। সরেজমিন মেঘনা নদীর কমল নগর অংশে তথ্যানুসন্ধানকালে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি তিনটি ড্রেজার মেশিন দ্বারা নদীর তলদেশ হতে বালু কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এসব ড্রেজারগুলো কাদের জিজ্ঞেস করলে তারা জানান, এগুলো ভোলা জেলা আ’লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জহুরুল ইসলাম নকীব ও তার আপন ভাতিজা আনোয়ার হোসেন শামীম মোরাদারের।

মেঘনায় মৎস্য শিকারী জেলেরা জানান, বালু লুটেরা এচক্রটি কমল নগর উপজেলার মেঘনা নদীর প্রায় দশ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নিজেদের দখলদারিত্ত্বে রেখে নদীর তলদেশ হতে বালু লুটের মহোৎসব চালাচ্ছে। এদের বাহিনীর লোকদের কেউ বাধা দিতে সাহস করছে না। জেলেরা আরো জানায়, ভোলা শহর ও সেখানকার জল-স্থলের দূই মূর্তিমান আতঙ্কের নাম জহুরুল ইসলাম নকীব ও তার ভাতিজা আনোয়ার হোসেন শামীম মোরাদার। তাদের দাপটে ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মেঘনার জেলেরা সর্বদাই আতঙ্কিত ও ভীত-সন্ত্রস্ত থাকতে হয়।

তথ্যমতে, চারটি ড্রেজার দ্বারা এচক্রটি প্রতিদিন কমল নগরের মেঘনা তলদেশ হতে প্রায় ১৪/১৫ লাখ টাকার বালু তুলে বিক্রি করছে। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে গত ১০ বছর ধরে ভোলার বালুদস্যুখ্যাত শামীম-নকীব বাহিনী মেঘনার বুকে জেগে উঠা নতুন নতুন চরাঞ্চল সমূহ কেটে বিরান করে ফেলেছেন বলেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আ’লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সেখানকার জেলা সদরের কাঁচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান পদ বাগিয়ে নেন জহুরুল ইসলাম নকীব। মেঘনা তীরবর্তী ঠিক কমলনগর উপজেলার অপর প্রান্তে অবস্থিত ভোলার কাচিয়া ইউনিয়নটি। মূলতঃ সেইখানে বসেই কমল নগরের মেঘনা নদীর বালু লুটের নাটাই ঘুড়াচ্ছেন শামীম-নকীব বাহিনী।

নির্ভরযোগ্য তথ্যানুসন্ধানকালে ভোলার বিভিন্ন শ্রেনীপেশার লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, জহুরুল ইসলাম নকীব সেখানকার সাংসদ তোফায়েল আহমেদের খুব আস্থাভাজন পরিচয়ে ভোলার বিভিন্ন দপ্তরের পাশাপাশি বিশাল মেঘনা নদীরও একক আধিপত্য লুটে নেন। তাছাড়া লক্ষ্মীপুর সদর আসনের সাংসদ তোফায়েল আহমেদের বেয়াই হওয়ার সুবাদে তার সাথেও নকীবের সখ্যতা রয়েছে। মেঘনার দূইপাড়ের দুই হেভীওয়েট সাংসদের সাথে সখ্যতাকে পুঁজি করে আ’লীগ নেতা নকীব ও তার ভাতিজা আনোয়ার হেসেন শামীম মোরাদার ভোলা এবং লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে বালু লুটের মহোৎসব চালাচ্ছে। বিরামহীন এমন বালুদস্যুনায় মেঘনার প্রবল ভাঙনে যেমনি ছোট হয়ে আসছে ভোলা তেমনি ভাঙনের শিকার হয়ে সর্বোশ্বান্ত হচ্ছে লক্ষ্মীপুর ও কমল নগরের শত শত পরিবার। কমলনগর এলাকার মেঘনা হতে এভাবে বছরের পর বছর বালু উত্তোলনের ফলে ঘনবসতিপূর্ণ এ জনপদটি দিনদিন দেশের মানচিত্র থেকে যে মূছে যাবে সেইদিন আর বেশী দূরে নয় বলে স্থানীয়রা মনে করেছেন।

তথ্যমতে, ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তী মেঘনা নদীর শাহবাজপুর চ্যানেল দিয়ে চট্রগ্রামে যাওয়ার পথে শামীম-নকীবের লেলিয়ে দেয়া নৌ-দস্যুরা সেগুলোর গতিরোধ করে তাতে ব্যাপকহারে চাঁদাবাজী ও লুন্ঠন চালানোর ঘটনা মেঘনা পাড়ের জনপদের সকলেরই জানা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শামীম মোরাদার ভোলার কাচিয়া ইউনিয়নের একটি প্রাইমারী স্কুলের সামান্য বেতনের শিক্ষক ছিলেন। মেঘনায় বালুদস্যুবৃত্তি আর নানা অপকর্মের কারনে চাকুরী ছেড়ে দেন তিনি। শিক্ষকতার চাকুরী ছেড়ে দেয়ার পর থেকেই যেন আলাদ্বীনের আশ্চর্য প্রদ্বীপ পেয়ে বসেন শামীম। দলের কোন পদ-পদবী না থাকলেও শামীম মোরাদার ভোলার আওয়ামী লীগের কাছে আবির্ভূত হয়ে উঠেন শক্তিধর মূকুহটহীন সম্রাট হিসেবে। জেলা শহর ভোলার গাজীপুর রোডের যেখানে সাংসদ তোফায়েল আহমেদের বাসভবন ঠিক তার পূর্বপার্শ্বেই নির্মিত প্রাসাদসম আলীশান পাঁচতলা বাড়ীতে বাস করেন আনোয়ার হেসেন শামীম মোরাদার। তিনি চলাচল করেন, কোটি টাকা মূল্যের লাক্সারিয়াস গাড়ীতে। রাজধানী ঢাকার অভিজাত কয়েকটি এলাকায় নকীব ও শামীমের বেশ কয়েকটি বিলাস বহুল বাড়ী ও ফ্ল্যাট রয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য রয়েছে। সাংসদ তোফায়েল আহমেদের বাড়ীর পশ্চিম পার্শ্বে জহুরুল ইসলাম নকীবের বিলাসবহুল বাড়ী বিদ্যমান। তিনি ভোলায় চড়েন দামী পাজেরো গাড়ীতে। ফ্যামিলি থাকেন ঢাকার ধানমন্ডিতে। তাদের জন্যও সেখানে নানা ব্র্যান্ডের কোটি টাকা মূল্যের কয়েকটি গাড়ী রয়েছে।

জানা গেছে, ভোলার যে পরিবারটি’র একসময় নূন আনতে পান্থা ফুড়াতো সেই পরিবারের সদস্যরা এখন শত শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার উৎস্য কি তা ভোলাবাসীর অজানা নয়। সূত্রমতে, দুর্নীতি, অন্যায়-অত্যাচার ও সীমাহীন জুলুমবাজী করে অস্বাভাবিক সম্পদের মালিক বনে যাওয়ায় বছরখানেক আগে নকীব-শামীমের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ হলেও সেই ফাইলটি আদৌ আলোর মূখ দেখবে কি-না এমন প্রশ্নও রয়েছে ভোলার সূ-শীল ব্যক্তিদের মাঝে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুদকে দায়েরকৃত এ দুই চাচা-ভাতিজার আমলনামার ফাইলটি বহু আগেই তারা মাটি চাঁপা দিয়েছেন। বলে বেড়াচ্ছেন, দুদক তাদেরকে নির্দোষ আর নিষ্পাপের সার্টিফিকেট দিয়েছেন। ফলে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ কোন প্রকার অভিযোগ দিলেও তাদের কিছুই হবে না।

নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়া ও তৎসংলগ্ন সকল নদী হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১ লা ডিসেম্বর জনৈক শেখ ফরিদ নামের এক ব্যাক্তি জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন।