• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন

রাজধানীতে হলুদ জ্যাকেটধারীদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ মানুষ : নাম দেয়া হয়েছে সিটি ট্যাক্স


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১৯, ২০২৩, ৯:৩৯ অপরাহ্ন / ৯০
রাজধানীতে হলুদ জ্যাকেটধারীদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ মানুষ : নাম দেয়া হয়েছে সিটি ট্যাক্স

মোঃ রাসেল সরকার,ঢাকাঃ রাজধানীতে সিটি ট্যাক্সের নামে প্রকাশ্য চাঁদাবাজিতে অস্থির হয়ে উঠেছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। এখন প্রকাশ্যেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে এই চাঁদাবাজি চলছে। এমনকি রিকশা-ভ্যান থামিয়েও পথচারীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে টাকা। সিটি করপোরেশনের সিল লাগানো জ্যাকেট পরে এই চাঁদা আদায় করা হলেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এভাবে চাঁদা আদায় অবৈধ।

রাজধানীর কোথাও একটি গাড়ি থামল, কেউ গাড়ি থেকে মালামাল নিয়ে নেমেছেন হঠাৎ দেখবেন রশিদ নিয়ে একজন হাজির। হাতে টাকার রশিদ ধরিয়ে দিয়ে বলবে এটা সিটি ট্যাক্স। আপনি যে মালামাল নিয়ে শহরে পা রেখেছেন অথবা মালামাল নিয়ে শহর ছেড়ে অন্য কোথাও যাচ্ছেন সে কারণে আপনার কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে। আবার কোনো পার্কিং প্লেসে গাড়ি থামিয়েছেন এজন্য ট্যাক্স দিচ্ছেন। রাজধানী জুড়েই এখন এ ভাবে পথচারীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে চাঁদা। মানুষ নীরবে এই চাঁদার টাকা দিয়েও যাচ্ছেন। যারা এই চাঁদার টাকা নিচ্ছেন তারা বলছেন সিটি করপোরেশন তাদের লিজ দিয়েছে সিটি ট্যাক্স আদায়ের জন্য। রাস্তার মোড়ে মোড়ে হলুদ জ্যাকেট পরিহিত এই চাঁদাবাজরা এখন রাজধানীর বাসিন্দাদের কাছে আঙ্ককের কারণ। বড় কোনো লাগেজ বা ব্যাগ নিয়ে রিকশা বা ভ্যানে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়ার সময়ও তাদের ট্যাক্স দিতে হচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোনো মানুষ রাস্তা দিয়ে একটি ব্যাগ বা মালামাল নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন বা কোনো টার্মিনালে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন তার কাছ থেকে অর্থ আদায়ের নাম দেয়া হয়েছে সিটি ট্যাক্স বা সিটি টোল। হাতে রশিদ নিয়ে টোলের নামে এই অর্থ আদায় রাজধানীতে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। টোল আদায়কারীরা যাকে তাকে পথে ধরে টাকা নিচ্ছে। যিনি টাকা দিচ্ছেন তিনি জানতেও পারছেন না এটা বৈধ না অবৈধ!

রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তান, মহাখালী, গাবতলী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, বাবুবাজার ব্রিজ, পোস্তগোলা, সদরঘাট ও কমলাপুর রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায় চাঁদা আদায়ের এই দৃশ্য। কোনো পথচারী হাতের ব্যাগ-বোঝাসহ গাড়িতে উঠতে গেলেই তাকে টোলের টোকেন ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। যারা এই টোল নিচ্ছে তাদের বক্তব্য হচ্ছে এটি বৈধ। একজন মানুষ কোনো মাল নিয়ে গাড়িতে উঠছেন বলেই তাদের কাছ থেকে এই টোল আদায় হচ্ছে। রাজধানীর মতিঝিল ও গুলিস্তান এলাকায় দেখা যায় এভাবে বেশ কয়েকজন যুবক সাধারণ পথচারীদের কাছ থেকে টোল আদায় করছে। এমনকি যারা গাড়িতে উঠবেন না, কিন্তু হাতে ভারী ব্যাগ বা অন্য কোনো মালামাল রয়েছে তাদের কাছ থেকেও এই চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।

রাতে হলুদ জ্যাকেট পরিহিত এই চাঁদাবাজরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের হাতে থাকে লেজার লাইট। মোড়ে মোড়ে তারা ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপসহ মালামাল আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহৃত গাড়ি থামিয়ে চাঁদা আদায় করছে। রাজধানীর গোপীবাগ এলাকার বাসিন্দা রফিকুল জানান, তিনি দু’টি ফ্যান কিনে রাজধানীর নবাবপুর রোড থেকে বাসায় ফিরছিলেন। কাপ্তানবাজার এলাকায় তার কাছ থেকে ৩০ টাকা আদায় করা হয় সিটি ট্যাক্সের নামে। রফিকুল বলেন, মানুষ এই হলুদ জ্যাকেটের চাঁদাবাজিতে এখন দিশেহারা। এই জ্যাকেটের ওপর সিল মারা আছে সিটি করপোরেশনের।

এ দিকে কোনো কোনো এলাকায় এই চাঁদা আদায়ের জন্য রাস্তার ওপর পরিকল্পিতভাবে খানাখন্দক খুঁড়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে। ঢাকা-ডেমরা রুটের একাধিক পথচারী বলেন, ফ্লাইওভার থেকে নেমেই গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে চালানোর সুযোগ নেই। সামনে চৌরাস্তা মোড়ে খানাখন্দকে ভরা। সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই গাড়ির গতি কমে যায়। আর এই সুযোগে পরিবহন চাঁদাবাজরা গাড়ি থামিয়ে চাঁদার টাকা হাতিয়ে নেয়।

এ দিকে সিটি করপোরেশনের নামে ট্যাক্স আদায় করা হলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা বলেন, এভাবে কাউকে টাকা আদায়ের অনুমতি সিটি করপোরেশন দেয়নি। সিটি করপোরেশনের সিল মারা জ্যাকেট পরে এভাবে টাকা আদায় অবৈধ। সিটি করপোরেশনের পরিবহন বিভাগ থেকে টার্মিনাল এলাকাগুলো ইজারা প্রদান করা হয়। এর বাইরে এভাবে অর্থ আদায়ে কারো অনুমতি নেই। কেউ এভাবে অর্থ আদায় করলে তা অবৈধভাবে করছে।