• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন

ময়মনসিংহ ও শেরপুরে হাতির আক্রমণে ২২ দিনে ছয় প্রাণহানি


প্রকাশের সময় : মে ১২, ২০২৩, ১১:০৮ পূর্বাহ্ন / ৩৬
ময়মনসিংহ ও শেরপুরে হাতির আক্রমণে ২২ দিনে ছয় প্রাণহানি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ ও শেরপুরঃ ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলার সীমান্ত এলাকায় হাতির আক্রমণে ২২ দিনের ব্যবধানে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে এক বন্য হাতিরও মৃত্যু হয়। ওই এলাকাগুলোতে হাতি-আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় জনমানুষের। তবে পরিবেশবিদদের দাবি, বনাঞ্চল রক্ষা না করতে পারলে হাতি-মানব দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যাবে। ময়মনসিংহ প্রশাসনের তথ্য মতে, গত ২ মে জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামে ফসল রক্ষা করতে গিয়ে বন্য হাতির আক্রমণে মারা যান ইদ্রিস আলী (৫০) নামের এক পল্লী চিকিৎসক। গেল ঈদুল ফিতরের দিনে একই উপজেলায় হাতির পায়ে পৃষ্ট হয়ে মারা যান ফরজুল ইসলাম (৩০) নামের এক কৃষক। গত ১৮ এপ্রিল ধোবাউড়া উপজেলায় হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে প্রাণ যায় শিশু সুমন আহমেদের (১২)। শেরপুর প্রশাসনের তথ্য মতে, গত ১৪ এপ্রিল শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সিংগাবরুনা ইউনিয়নের বালিঝুরি রেঞ্জের মালাকোচা বিটে বন্য হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয় আব্দুল করিম (২৮) নামের এক ব্যক্তির।একই উপজেলার মালাকুচা এলাকায় ১ মে হাতির আক্রমণে মারা যান আব্দুল হামিদ (৫৫) নামের আরও এক ব্যক্তি।

গত ২৫ এপ্রিল নালিতাবাড়ীর উপজেলার মধুটিলা ইকোপার্ক সংলগ্ন কালাপানি এলাকায় বোরো ক্ষেতে হাতির আক্রমণে গুরুতর আহত হন বিজয় সাংমা (৫২) নামের এক আদিবাসী। জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ এপ্রিল রাতে মারা যান তিনি। এ ছাড়া ৬ মে ঝিনাইগাতি উপজেলার পশ্চিম বাকাকুড়া গ্রামের কৃষক নুহু মিয়ার বৈদ্যুতিক ফাঁদে এক হাতির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বন বিভাগ ওই কৃষককে আসামি করে মামলাও করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৯ বছরে চার জেলার সীমান্তে হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৫ জন মানুষ। আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৩২ জন।</p></div>
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৯ বছরে চার জেলার সীমান্তে হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৫ জন মানুষ। আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৩২ জন। হালুয়াঘাটের গাজীরভিটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মান্নান বলেন, গত কয়েকদিনে এ ইউনিয়নে হাতির আক্রমণে দুজন প্রাণ হারিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সীমান্ত এলাকায় ফাঁদ বসিয়ে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন এ ইউপি চেয়ারম্যান। একই উপজেলার ভূবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া বলেন, “হাতি তাড়ানোর ফাঁদে আমার ইউনিয়নে একজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সীমান্ত এলাকার মানুষ হাতির ভয়ে নির্ঘুম রাত পার করছেন। অনেকে নিজ বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও আশ্রয় নিচ্ছে। তিনি বলেন, “সন্ধ্যার পরই ৩০ থেকে ৩৫টি হাতি একসঙ্গে পাহাড় থেকে নেমে খাবারের সন্ধানে ফসল নষ্ট করা শুরু করে। ফসল রক্ষা করতে গেলেই মানুষের উপর চড়াও হয় হাতির পাল। বনবিভাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, উদ্যোগ না নিলে কোনোভাবেই মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারবেন না।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের গোপালপুর বিট (হালুয়াঘাট ও নালিতাবাড়ী এ বিটের অংশ) কর্মকর্তা মাজাহারুল হক বলেন, হাতি ঠেকাতে দুই কিলোমিটারজুড়ে সৌর বিদ্যুতের ফাঁদ বসানো হয়েছে; কিছু কাজ চলমান। আরও অন্তত ২৫ কিলোমিটার ফাঁদ বসানো হলে হাতি প্রবেশ অনেকটাই বন্ধ করা যাবে। এদিকে, হাতির আক্রমণে প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ময়মনসিংহ পরিবেশ রক্ষা উন্নয়ন আন্দোলনের সভাপতি অধ্যক্ষ শাহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ থেকে নিরসনে উভয় দেশের সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে; বনায়ন বাড়াতে হবে। বনাঞ্চল ধ্বংসের কুফল উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বিচারে বন উজার করার কারণে হাতির পাল খাবার না পেয়ে লোকালয়ে চলে আসছে। মানুষের ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষতি করছে। মানুষও পাল্টা হাতির ওপর চড়া হওয়ার ফলে উভয়ে মারা যাচ্ছে।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকতা আ ন ম আব্দুল ওয়াদুদু বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০২৩ এই দীর্ঘ ৯ বছরে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৫ জন মানুষ। আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৩২ জন। এই সময়ের মধ্যে মানুষের হামলাসহ নানা কারণে ৩০টি হাতিও মারা গেছে। প্রায় দুই হাজারের অধিক হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে আরও দুই হাজার। এ পর্যন্ত সরকার প্রায় ৬৯ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এ বিভাগের চার জেলায় ১৬০ কিলোমিটারের মত সীমান্ত রয়েছে। এসব সীমান্তের করিডোর দিয়ে ভারতের মেঘালয় থেকে শতাধিক বন্য হাতি বর্তমানে বাংলাদেশে ঢুকছে।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে শেরপুরের ঝিনাইগাতি সীমান্তে ১৩ কিলোমিটার জুড়ে সৌর বিদ্যুতের ফাঁদ নির্মাণ করা হয়েছিল। আর্থিক সংকটের কারণে সংস্কার না করায় তা নষ্ট হয়ে পড়েছে বলেন জানান তিনি। বিভাগীয় এ বন কর্মকর্তা বলেন, নতুন ভাবে সেখানে ৮ কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ নির্মাণকাজ চলমান আছে। গোপালপুরে দুই কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ২৫ কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ নির্মাণ করার পাশাপাশি সীমান্তে কাঁটাযুক্ত গাছ লাগানোর প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এসব বাস্তবায়ন হলে বন্য হাতির আক্রমণ অনেকটাই কমে আসবে বলে তার দাবি।