• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১০:৪৭ অপরাহ্ন

ফরিদপুরের মধুখালী ডুমাইনের বাঁশ-মেহগনি বাগান যেন প্রতারকদের সদর দপ্তর!


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২২, ২০২২, ৭:৩০ অপরাহ্ন / ৯৬
ফরিদপুরের মধুখালী ডুমাইনের বাঁশ-মেহগনি বাগান যেন প্রতারকদের সদর দপ্তর!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ফরিদপুর: ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) গ্রামগুলোর প্রায় প্রতিটা বাঁশঝাড় ও মেহগনি বাগান বিকাশ প্রতারক চক্রের সদর দপ্তর হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। তবে বিকাশের ফাঁদে পড়ে টাকা খোয়ানোর ঘটনা নতুন কিছু নয়।

মোবাইল ব্যাংকিং প্লাটফর্ম বিকাশের নতুন মাত্রাযুক্ত করা অ্যাপসও সেই ফাঁদ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। ফলে ফরিদপুরের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষভাবে অভিযান পরিচালনা করলেও বন্ধ হচ্ছে না ভয়ঙ্কর এই প্রতারণা। গত ১৬ অক্টোবর জেলা সদর উপজেলার কানাইপুর বাজারে রুমন দত্ত নামে একজনের বিকাশের দোকান থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেন আমিরুল নামে এক প্রতারক। সম্প্রতি রুমনের দোকান থেকে ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন প্রতারক আমিরুল। এর পরেই রুমনের মোবাইলফোনে কল আসে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে। সেখান থেকে রুমনকে বলা হয় যে বিকাশ নম্বরে ক্যাশ আউট করেছেন তাকে আপনি চেনেন কিনা? অথবা এই নম্বরের লোকটিকে পেলে আমাদের জানাবেন। তারই ধারাবাহিতাই গত ১৬ অক্টোবর প্রতারক আমিরুল ফের টাকা উত্তোলন করতে এলে তাকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে স্বীকার করেন- তিনি একজন ডুমাইন গ্রামের বিকাশ প্রতারক। পরে তাকে আটকে রেখে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় খবর দেওয়া হয়। প্রতারক আমিরুলের কাছে থেকে গাঁজা, দুইটি মোবাইল, রূপার চেনসহ জব্দ হয় ৫ হাজার টাকা। পরে আমিরুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডুমাইন গ্রামের প্রায় আম বাগান, মেহগনি বাগান ও বাঁশ বাগানে বিকাশ প্রতারকদের অভায়ারণ্য। কয়েকজন প্রতারককে তাদের বিকাশ প্রতারণার কর্মকাণ্ড চালাতেও দেখা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাকালে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রতারকরা ইয়াবা সেবন করার সরঞ্জাম ও পায়ের সেন্ডেল ফেলে দৌড়ে করে পালিয়ে যায়। অন্যদিকে, তিন থেকে চারটি মোটরসাইকেল বেপরোয়া গতিতে সাংবাদিকদের নজরদারিতে রাখে প্রতারকরা। যেন সাংবাদিকরা দ্রুত ডুমাইন গ্রাম থেকে চলে যান। স্থানীয়দের দাবি এই চক্রের সদস্যরা হলেন, সোহাগ, দুলাল, সৌরভ, রাজন, সৌখিন, খোকনসহ তাদের সিন্ডিকেট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাগান মালিক বলেন, এই অঞ্চলের বেশিরভাগ ছেলেরা বিকাশ প্রতারণার কমকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িনোসহ চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ ভয়ঙ্কর অপরাদের সঙ্গেও পড়ছে। এদের মধ্যে রয়েছে কয়েকজন অস্ত্রধারী ক্যাডার; এরা এতটাই বেপরোয়া যে এদের বিরুদ্ধে কোনো বাগান মালিক ভয়ে কথা বলতে সাহস পান না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডুমাইন গ্রামটি সীমান্তবর্তী হওয়াই প্রতারক সদস্যরা অনেকটাই বেপরোয়া। একদিকে মাগুরা জেলার গড়াই নদী ও অন্যদিকে রাজবাড়ীর জেলার সীমান্তবর্তী। মূলত ফরিদপুরের প্রশাসন বরাবরের মতোই অভিযান পরিচালনা করলেও প্রতারক সদস্যরা গড়াই নদী পার হয়ে মাগুরা ও রাজবাড়ী সীমান্ত পার হয়ে চলে যায়।

এ বিষয়ে ডুমাইনের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন জানান, আমি কিছুদিন ধরে নির্বাচিত হয়েছি। এর মধ্যেই বিকাশ প্রতারকদের নিয়ন্ত্রণে ও তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর জন্য কাজ চলছে। কয়েকদিন আগে তার ইউপিতে স্থানীয়দের নিয়ে একটি সচেতনমূলক সভা করেছেন বলেও জানান তিনি। ৬-৭ মাসের মধ্যেই বিকাশ প্রতারণাকারীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান।

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান বলেন, বিকাশ প্রতারকরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বসে বিকাশ প্রতারণা কমকাণ্ড চালিয়ে থাকে। কয়েকদিন আগেও জেলার কানাইপুর বাজার থেকে একজন বিকাশ প্রতারককে প্রতারণাকালে আটক হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করে কারাগারে পাঠাই। এছাড়া জেলায় প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে কাজ চলছে।