• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৩:১০ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গোপালগঞ্জের এক ইউপি চেয়ারম্যানের খোলা চিঠি


প্রকাশের সময় : জুন ২৬, ২০২১, ১১:৩৭ অপরাহ্ন / ২৫৩
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গোপালগঞ্জের এক ইউপি চেয়ারম্যানের খোলা চিঠি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গোপালগঞ্জের এক ইউপি চেয়ারম্যানের খোলা চিঠি যা হুব হু তুলে ধরা হলো।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা
আমার সালাম নিবেন।আশা করি ভালো আছেন। বর্তমানের পেন্ডামিক সিচুয়েশনে ভালো থাকাও দুঃসাধ্য। তবু আপনার সুচিন্তিত ব্যবস্থপনায় এখনও দেশের মানুষ খুবই ভালো আছে। আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আমাদের চিন্তার রাজ্যে বিশাল জ্যাম লাগিয়ে দিয়েছে। আমরা শঙ্কিত আগামী দিনগুলো নিয়ে। কি হবে আমাদের? দেশের এমন অবস্থায় আপনার হাতের সবগুলো ইন্সট্রুমেন্ট এ্যাপ্লাই করে ফেলেছেন। এখনও পরিস্থিতি আপনার নাগালের বাইরে যায়নি। কিন্তু প্রতিদিন যেভাবে আক্রান্ত এবং মৃত্যু হার বাড়ছে তাতে করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা, মানুষের খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য চাহিদা পুরণ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাড়াবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
আমরা বাঙ্গালীরা অতিমাত্রায় হুজুগে, আবেগপ্রবণ এবং উদাসীন। গত ৪৭৮ দিনেও আপনার সব বাহিনী শত চেষ্টা করেও আমাদের অন্তত মাস্কটাও পরাতে পারেনি। আপনি লকডাউন দেন; আমরা ফাঁকডাউন খুঁজে নিয়ে সেখান থেকে সব কাজ করি। আপনি আমাদের ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করেন; আমরা ঘরের মধ্যে আরো লোক জড়ো করে চালভাজা, মুড়ি, চানাচুর সহযোগে ক্রিকেট অথবা ফুটবল খেলা দেখি আর বেটিং করি। আপনি পুলিশ নিয়োগ দেন এগুলো নিয়ন্ত্রণের ; আমরা বাগানে বসে তাস খেলি, দেশি গাঁজা অথবা ইয়াবা সেবন করি আর সরকারের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করি। পুলিশ দেখলে মুখে মাস্ক লাগাই, গলির ভিতর ঢুকে কোন এক বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নেই। আবার পুলিশ চলে গেলে যেইকে সেই। এ যেন ছোটবেলার কানামাছি খেলা। আমাদের কোন ভয় নেই।আমরা এমনভাবে চলছি যেন করোনা আমাদের কিছুই করতে পারবেনা। আসলে আমরা কাকে ফাঁকি দিচ্ছি? নিজেদেরইতো। সেটা বুঝাবে কে? কি অদ্ভুত আমাদের দেশের মানুষের আচরন। আপনি একা কতটুকু করতে পারবেন? আমরা যদি নিজেদের রক্ষা করার দ্বায়িত্ব নিজেরা না নেই?

মাননীয় নেত্রী
আপনাকে পরামর্শ দেওয়ার দুঃসাহস আমাকে মানায় না।এ কাজটা আমি করতেও পারিনা। তবে আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে যেটুকু আসে লিখে ফেলি।আগেও আমি অনেকের নাম দিয়ে তাদের মুখের কথ্যভাষায় আপনাকে খোলাচিঠি লিখেছি।জানি আপনার কাছে পৌছেনি আমার সে লেখাগুলো।তবু হৃদয়ের আসনে আপনাকে বসিয়ে আমি সেখানেই আমার চিঠিগুলো পোস্ট করি। বিশ্বাস করুন প্রায়ই আমার চাওয়ার সাথে আপনার গৃহিত পদক্ষেপ কাকতালীয়ভাবে অনেকটা মিলে যায়। আমি আশায় থাকি কোন একদিন সত্যিই আমার একটা খোলা চিঠি আপনার হাতে পৌঁছবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
এই মুহুর্তে সারাদেশে আপনার ঘোষিত লকডাউন কার্যকর করলে অনেক মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। অনেকের বাবা, সন্তান,স্বামী চাকরি হারাবে। ঠিকমতো চিকিৎসা না পেলে অনেক গরীব বিনা ওষুধে মরে যাবে। আল্লাহ না করুন সামান্য একটা অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাবেও অনেকের প্রান সংহার হতে পারে। চাকরি হারানো মানুষগুলো ক্ষুধার যন্ত্রনায় নিতে পারে বেআইনি পদক্ষেপ। সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পড়বে আরো চাপে। আর দেশবিরোধী চক্র চাতক পাখির মত অপেক্ষায় আছে একটা বিশৃংখল অবস্থা তৈরীর। এমতাবস্থায় নেত্রী আপনি নিচের পদক্ষেপগুলো নিয়ে একটু ভেবে দেখতে পারেন।

১) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে খুব সহযেই ঐ এলাকার দিনমজুর, ছোট চাকরিজীবী, বাসের হেলপার,ড্রাইভার, দোকনের কর্মচারী এদের তালিকা নিতে পারবেন।

২) আমার ধারনা প্রতিটি ঘরে অন্তত একমাসের খাবার মজুদ আছে অথবা সমপরিমান টাকা আছে। আপনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে ওখান থেকে কার্যকর একটা তালিকা এই সময়ের মধ্যে খুব দ্রুততার সাথে করে ফেলুন।

৩) করোনা লকডাউনে কারা সবথেকে বেশী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সেটা আগে বিবেচনা করতে হবে। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষকি করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়? সম্ভবত না। যারা স্থানীয় কৃষি-অকৃষি শ্রমিক তাদের আয় বন্ধ হয়না।আবার তারা মোটামুটি সবার কাছ থেকে এক্সট্রা সাহায্যও পায়। ক্ষতির সম্মুখীন হয় ছোট চাকরিজীবী, দোকানের কর্মচারী, বাসের হেলপার-ড্রাইভার, খাদ্যপন্য ব্যতীত অন্যান্য ছোট দোকানদার, ছোট ছোট ব্যবসায়ী যাদের মুলধনের বড় একটা অংশই ধার কর্জ করে আ’না। সুতরাং আপনার দেওয়া করোনা বিশেষায়িত সাহায্য কেবলমাত্র এই শ্রেনীর লোকদেরই দিতে হবে আগে।

৪) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি চারমাসের একটা কঠোর লকডাউন দিন।এরমধ্যে তিনমাস উপরোক্ত শ্রেনীর লোকদের খাদ্য এবং কিছু নগদ সাহায্য করুন। চেষ্টা করুন সবাইকে টিকার আওতায় আনা যায় কিনা। আশা করা যায় আল্লাহ রহমত করলে এর মধ্যেই করোনা মহামারীর প্রকোপ কমে যাবে।

৫) তিন মাসের খাদ্য এবং নগদ সহায়তায় যে অর্থ ব্যয় হবে তা আপনার বাজেটের থোক বরাদ্দ থেকেই সংকুলান হবে। যদি তা নাহয় তাহলে আপনি বিকল্প হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়নে যে পরিমান টিআর, কাবিখা,কাবিটা’র বরাদ্দ দেন এবৎসর ওগুলো খাদ্য সহায়তার কাজে লাগান।

৬) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নগদ সহায়তা কোনভাবেই মোবাইলে বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে বা ব্যাংকের মাধ্যমে দিবেন না। আমরা এখনও এ ব্যাপারে যথেষ্ট শিক্ষিত হইনি। ওতে ঝামেলা এবং হয়রানি বেশী হচ্ছে। ফলে উপকারভোগী কৃতজ্ঞতা প্রকাশের চেয়ে গালাগাল করছে বেশী। এগুলো প্রতিটি ইউনিয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসারের মাধ্যমে দিলে আশা করি কোন সমস্যা হবেনা।

৭) মাননীয় নেত্রী আপনি জানেন আপনার প্রতিটি প্রকল্পে ওয়েস্টেজ নামক একটা খাত থাকে ২% থেকে ১০% পর্যন্ত এখাতে খরচ হয়। কাজেই আপনার দেওয়া সাহায্য থেকেও এমনটা হতে পারে। গতবার আপনার দেওয়া করোনাকালীন সাহায্য থেকে যে সকল চেয়ারম্যান বা মেম্বারগন অসদুপায় অবলম্বন করেছেন তাদের পরিমান ২% এর মত। তার অর্থ ৯৮% জনপ্রতিনিধিই সঠিকভাবে ত্রানকাজ চালিয়েছেন। আপনি জেনে খুশি হবেন যে গোপালগঞ্জের একটা ইউনিয়ন থেকেও এমন অভিযোগ আসেনি। সারাদেশে ৪,৫৭১ টি ইউনিয়নের মধ্যে এমন সামান্যকিছু ইউনিয়নে যদি কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেও থাকে সেটা আমলে নিয়েই ত্রানকাজ চালাতে হবে। জনপ্রতিনিধিরাই মানুষের খোঁজ খবর বেশী রাখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

৮) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতিটি এলাকায় আপনার সরকারি গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি, এসবি,এনএসআই, ডিজিএফআই) আছে। তাদের কাছে সকল চেয়ারম্যানদের আমলনামও আছে। আপনি প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দ্বায়িত্ব দেন যেন তার আওতাধীন ইউপিসমুহকে তিনভাগে ভাগ করেন। লাল, হলুদ এবং সবুজ। সবুজ শ্রেনীভুক্ত ইউপিসমুহতে কোন পাহারাদার দরকার নেই, হলুদ শ্রেনীভুক্ত ইউপি’তে ট্যাগ অফিসারের সাথে সাথে ইউএনও মহোদয়ের নেতৃত্বে একটা টিম ঝটিকা সফর করবেন আর লাল শ্রেনীভুক্ত ইউপি সমূহে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে হবে।তবে ব্যাপারটা খুবই গোপনীয়তার সাথে করতে হবে যাতে চেয়ারম্যানগন ডিমোরালাইজড না হন।

৯) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিকের ডাক্তার এবং স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটা টিম গঠন করে প্রতিটি ইউনিয়নের জনগনকে যখন যেমন দরকার মোবাইল টেক্সটের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন।

১০) সবশেষে খুবই স্পর্শকাতর একটা কথা বলি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই অতিমারির সময় একটা পক্ষই থাকবে এমন যারা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে টুপাইস কামানোর পাশাপাশি সরকারকে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন অন্তর্ঘাতমুলক মুলক কার্যকলাপ করতে পারে। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আপনি স্থানীয় কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা এবং যদি সম্ভব হয় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের ন্যুনতম ভাতার বিনিময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি কাজে লাগাতে পারেন।

মাননীয় নেত্রী
আজ আর নয়। অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রটি মার্জনা করবেন। আপনাকেই সবকিছু বলা যায়।আপনার কাছেই দাবী করা যায়। আপনি চিন্তাশীল, দয়ালু একজন মানবিক রাস্ট্রনায়ক। আপনি ভালো থাকুন। তাহলেই ভালো থাকবে বাংলাদেশ। আল্লাহ আপনাকে সকল বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করুন।
আমীন।

ইতি
সফিকুর রহমান চৌধুরী (টুটুল)
চেয়ারম্যান
গোবরা ইউনিয়ন, গোপালগঞ্জ সদর।