• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:১৭ পূর্বাহ্ন

ছেলে হত্যার বিচার না দেখা পর্যন্ত আত্মা শান্তি পাবে না আকলিমার


প্রকাশের সময় : মে ১৬, ২০২৩, ১:০৯ অপরাহ্ন / ৫২
ছেলে হত্যার বিচার না দেখা পর্যন্ত আত্মা শান্তি পাবে না আকলিমার

(পল্লবীর শাহিন হত্যার দুই বছর আজ! এক বছরেও শেষ হয়নি অধিকতর তদন্ত! কারামুক্ত সাবেক এমপি আউয়ালসহ ১৯ আসামি!! জামিনে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে আসামিরা!!!)

এম রাসেল সরকারঃ আমার ছেলে শাহিনকে যারা হত্যা করেছেন তারা জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তারা আমাদের পরিবারকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই। তাদের বিচার না দেখা পর্যন্ত আমার আত্মা শান্তি পাবে না। ২০২১ সালের আজকের দিনে (১৬ মে) রাজধানীর পল্লবীতে প্রকাশ্যে কুপিয়ে শাহিন উদ্দিনকে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পূর্ণতে নিহতের মা আকলিমা বেগম এসব কথা বলেন।

আকলিমা বেগম বলেন, সবই স্বাভাবিকভাবে চলছে। অথচ আমার ছেলেটায় আজ নেই। এ হত্যার সঙ্গে যে জড়িত, যার জন্য নারাজি দিলাম তার নামটায় দেওয়া হচ্ছে না। ছেলে হত্যার বিচার নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। আমার চাওয়া, যেন বেঁচে থাকা অবস্থায় ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি।

তিনি আরও বলেন, দুই বছর হলো ছোট ছেলেকে হারিয়েছি। অথচ এখনো বিচার পেলাম না। খুনিরা বড় ছেলের ওপর ক্ষিপ্ত। তাকে হত্যার পরিকল্পনা করছে তারা। এখন আমার বড় ছেলেকে নিয়ে ভয় হচ্ছে। ছোট ছেলেকে হত্যার পর খুনিরা জামিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন তারা দ্বিতীয় খুন করতে কোনো ভয় করবে না। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক মনির হোসেন বলেন, এ মামলায় দুইজন আসামি পলাতক রয়েছে। তাদের ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত সাবেক এমপি আউয়ালসহ ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামলার তদন্ত শেষ হলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবো।

২০২১ সালের ১৬ মে শাহিন উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের পর ওই রাতেই নিহতের মা আকলিমা বেগম বাদী হয়ে পল্লবী থানায় সাবেক এমপি আউয়ালসহ ২০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলায় এমএ আউয়ালকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া অন্য আসামিরা হলেন-ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুমন, মো. আবু তাহের, মুরাদ, মানিক, মনির, শফিক, টিটু, কামরুল, কিবরিয়া, দিপু, আবদুর রাজ্জাক, মরন আলী, লিটন, আবুল, বাইট্যা বাবু, বড় শফিক, কালু ওরফে কালা বাবু, নাটা সুমন ও ইয়াবা বাবু।

মামলার পর প্রধান আসামি লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এমএ আউয়ালসহ ১৯ আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে সবাই জামিনে রয়েছে। জামিনে থাকা অন্য আসামিরা হলেন-তরিকুল ইসলাম, সুমন ব্যাপারী, মো. মুরাদ, নজরুল হাসান বাবু, রবি তালুকদার, গোলাম কিবরিয়া, মো. দিপু, নুর মোহাম্মদ হাসান, আবু তাহের, মো. টিটু, ইকবাল নুর, তুহিন মিয়া, হারুনুর রশিদ, মো. শরিফ, জহিরুল ইসলাম, কালা বাবু ও মো. লিটন।

তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ মামলায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এমএ আউয়ালসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার হোসেন। ২০২২ সালের ১২ মে আদালত শাহিনুদ্দিনের মা আকলিমার নারাজির আবেদন গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি অধিকতর তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আগামী ২১ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

মামলার এজাহারে আকলিমা বেগম বলেন, ২০২১ সালের ১৬ মে বিকেল ৪টার দিকে সুমন ও টিটু নামের দুই যুবক শাহিন উদ্দিনকে জমির বিরোধ মেটানো হবে জানিয়ে ফোন করে ডেকে নেন। শাহিন উদ্দিন মোটরসাইকেলে পল্লবীর ডি-ব্লকের ৩১ নম্বর সড়কের ৪০ নম্বর বাসার সামনে গেলে সুমন ও টিটুসহ ১৪ থেকে ১৫ জন মিলে তাকে টেনেহিঁচড়ে ওই বাড়ির গ্যারেজে নিয়ে যায়।

এসময় শাহিন উদ্দিনের ছয় বছরের ছেলে মাশরাফি গেটের বাইরে ছিল। গ্যারেজে নিয়ে তাকে সন্ত্রাসীরা চাপাতি, চায়নিজ কুড়াল, রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এরপর তাকে ওই গ্যারেজ থেকে বের করে ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে আবার কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।