• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন

গোপালগঞ্জে শুরু হয়েছে ৫ দিনব্যাপী কবি সুকান্ত মেলা


প্রকাশের সময় : মার্চ ২, ২০২৩, ১২:০৯ অপরাহ্ন / ৬৫
গোপালগঞ্জে শুরু হয়েছে ৫ দিনব্যাপী কবি সুকান্ত মেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জঃ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শুরু হয়েছে ৫ দিনব্যাপী কবি সুকান্ত মেলা। এই মেলাকে ঘিরে উপজেলাব্যাপী বইছে উৎসবের আমেজ। নবরুপে সেজেছে কবির বাড়ী ও আশপাশের এলাকা। এ মেলা চলবে আগামী রবিবার পর্যন্ত। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করে।

এ মেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচায্যের আসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে পড়বে সকলে মাঝে এমনটিই প্রত্যাশা, সাংস্কৃতিক প্রেমীদের। তবে এ মেলা ঘিরে নানা পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে, জেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, কিশোর কবি সুকান্ত ভট্রাচার্য্যরে জন্মদিন ১৫ই আগষ্ট হলেও শোকের মাস হওয়ায় কয়েক মাস আগেই উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের উনশিয়া গ্রামে কবির পৈত্রিক ভিটায় সুকান্ত মেলার আয়োজন কর হয়।

বুধবার রাতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে এ মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহাবুবুল আলম। এ সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ, কোটালীপাড়া পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র মতিয়ার রহমান হাজরা, অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন সরদার, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লক্ষ্মী সরকার, শেখ হাসিনা আদর্শ সরকারি মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ কুমার ভাবুক, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান বুলবুল, প্রেসক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান বুলু, উদীচী কোটালীপাড়া শাখার সভাপতি অশোক কর্মকার, কবি মিন্টু রায়, শিক্ষক হাবিবুর রহমান মুকুল উপস্থিত ছিলেন।

এ মেলা ঘিরে নবরূপে সেজেছে কবির বাড়ী ও আশপাশের এলাকা। কবি ভক্ত, সাংস্কৃতিক প্রেমী আর এলাকাবাসী কবি সুকান্তের পৈত্রিক ভিটায় উপস্থিত হয়ে এ মেলাকে করে তুলেছেন প্রাণবন্ত। প্রতিদিন সুকান্ত মঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা পরিবেশন করেছেন গান ও নাচ। মেলা উপলক্ষে বসেছে স্টল। স্টলগুলোতে কবি সুকান্ত ভট্টাচায্য ছাড়াও বিভিন্ন কবির লেখা বই স্থান পেয়েছে। এ মেলা দেখতে গোপালগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে এসেছে নানা বয়সের মানুষ। মেলাটি চলবে আগামী রবিবার পর্যন্ত। এ মেলা উপলক্ষে বসেছে খাবার, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন দোকান।

কোটালীপাড়ার জাহিদুল ইসলাম বলেন, উনশিয়া গ্রামে কবি সুকান্ত মেলা হচ্ছে শুনে দেখতে এসেছি। দেখে খুব ভাল লাগেছে। তবে কবির পৈত্রিক বাড়ী ঘিরে এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবী জানাচ্ছি।

গোপালগঞ্জে থেকে আসা প্রীতি লতা বলেন, কবি সুকান্ত মেলায় বেশ কয়েকটি বইয়ের ষ্টল বসেছে। তবে তা তুলনামূলকভাবে কম। এছাড়া বইয়ের সংখ্যাও কম। আমরা চাই মেলায় আরো বেশি বইয়ের স্টল দেয়া হোক আর বইয়ের সংখ্যাও বাড়ানো হোক। তবে মেলার সার্বিক সব কিছু্ই ভাল হয়েছে।

কবি ও আবৃত্তি শিল্পী প্রদ্যোৎ রায় বলেছেন, যুগাবতার হয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম পাললিক ভূখণ্ড আমাদের বাংলাদেশে যত মহামানব এসেছেন, কবি সুকান্ত তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি কেবল একজন কবিই নন, তিনি একজন অনন্য ত্রাতা। তিনি নিপীড়িত মানবতার মুক্তির জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছেন।

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের আদর্শকে বর্তমান যুব সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আশা করি, এই মেলার মধ্যে দিয়ে কিছুটা হলেও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে বাঙালি জাতি বা আগামী প্রজন্মের কাছে আমরা তুলে ধরতে পারব।

কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, দেশী-বিদেশী পর্যাটকরা এখানে এসে কিশোর কবির বাড়ির পয্যাবেক্ষণ করতে পারে সেজন্য পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হবে। যাতে দেশে বিভিন্ন স্থান থেকে আগতরা কিশোর কবি সুকান্ত সম্পর্কে জানতে পারে।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, আমরা শুধু মেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। যশোরের মধু মেলার মত সুকান্ত মেলাকেও ওই রূপে নিতে চাই। এ মেলার অংশ হিসাবে কবির সাহিত্য সম্ভার নিয়েও একটি বই মেলা করা হবে। সুকান্ত ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা সুকান্ত পদক দেয়াসহ ৭ দিনের মেলা চালু করবো। এ মেলাকে আরো প্রাণবন্ত করতে আরো নানা পরিকল্পনার কথা জানান, জেলা প্রশাসক।

প্রসঙ্গত, ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট কবি সুকান্ত ভট্রাচার্য্য কলিকাতার কালীঘাটের মহিমা হালদার স্ট্রিটে মামা বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নিবারন ভট্রাচার্য্য ও মাতা সুনীতি দেবী। ১৯৪৭ সালের ১৩ মে মাত্র ২১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ছাড়পত্র, ঘুম নেই, পূর্বাভাস, অভিযান, হরতাল-তার উল্লেখ যোগ্য কাব্যগ্রন্থ। কবির প্রতিটি কবিতায় অনাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে।