• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২০ অপরাহ্ন

আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে অবৈধ ওয়াকিটকি মজুদ করেছিল চক্রটি


প্রকাশের সময় : মে ২৩, ২০২২, ৩:৫৯ অপরাহ্ন / ১৫৫
আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে অবৈধ ওয়াকিটকি মজুদ করেছিল চক্রটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ দেশের সাধারণ মানুষ ওয়াকিটকি বহনকারী ব্যক্তিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে অপরাধীরা ভূয়া ডিবি, র‌্যাব সদস্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ মারাত্মক অপরাধ সংগঠিত করে আসছে। এতে করে একদিকে যেমন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে, অন্যদিকে প্রকৃত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যখন সাদা পোশাকে দায়িত্বপালনের প্রয়োজন হয় তখন জনসাধারণ তাদেরকে ভূয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ভেবে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটাতে অবৈধ ওয়াকিটকি সেট মজুদ-বিক্রি করে আসছিল একটি চক্র। এছাড়া অবৈধ ভাবে বিক্রির মাধ্যমে দেশে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে আসছিল এসব অপরাধে চক্রের মূলহোতাসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। রোববার (২২ মে) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, অলেফিল ট্রেড কর্পোরেশন নামক প্রতিষ্ঠানের মালিক ও চক্রের মূলহোতা মো. আব্দুল্লাহ আল সাব্বির (৩৩), ও সহযোগি মো. আল মামুন (২৭)। এ সময় ওয়াকিটকি সেট ১৬৮ টি, ওয়াকিটকি সেটের ব্যাটারী ৩৫ টি, চার্জার ৩২ টি, এন্টেনা ৬৩ টি, মাউথ স্পিকার ০৬ টি এবং ব্যাক ক্লিপ ০৬ টি জব্দ করা হয়। সোমবার (২৩ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, র‌্যাব-৩ এবং বিটিআরসি এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধ ওয়াকিটকি সেট বিক্রয়কারী চক্রের মূলহোতাসহ দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কর্নেল আরিফ বলেন, গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি যে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় অবৈধভাবে অপরাধীদের নিকট কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট দীর্ঘদিন যাবত বিক্রয় করে আসছে। কিন্তু বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কর্তৃক কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করা দন্ডনীয় অপরাধ। অবৈধ ভাবে ওয়াকিটকি এবং যন্ত্রাংশ মজুদ রেখে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রয়কারী

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভিত্তিতে তিনি জানান, আসামিরা তাদের অলেফিল ট্রেড কর্পোরেশন নামক প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইট এবং ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তারা দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে বেতার যন্ত্র ওয়াকিটকি সেট মজুত করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রয় করে আসছিল। কিন্তু তাদের হেফাজত হতে উদ্ধারকৃত এসকল ওয়াকিটকি এবং যন্ত্রাংশ সংক্রান্তে ধৃত আসামীদ্বয় ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার সংক্রান্ত লাইসেন্স ও কারিগরি গ্রহণযোগ্যতা সংক্রান্ত সনদ বা কোন ধরনের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারে নাই। আসামীদ্বয়ের নিকট হতে উদ্ধারকৃত এসব ওয়াকিটকি সেটের ফ্রিকোয়েন্সী ২৪৫-২৪৬ মেগাহার্জ। এসব ওয়াকিটকি ব্যবহার করে রিপিটার ছাড়া অর্ধ কিলোমিটার পর্যন্ত যোগাযোগ করা সম্ভব। এছাড়াও বহুতল ভবনের মধ্যে উপরতলা হতে নীচতলায় যোগাযোগ করা সম্ভব। এসব ওয়াকিটকির দাম পাঁচ হাজার হতে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত। ব্যাটারীর চার্জ ধারণের ক্ষমতা অনুযায়ী ওয়াকিটকির দামের তারতম্য হয়ে থাকে। এছাড়াও আসামিরা অপরাধীদের নিকট ওয়াকিটকি সেট বিক্রয় করেছে কি না এই বিষয়ে কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, আসামি আল সাব্বির ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক। সে দীর্ঘ ৫ বছর যাবত অবৈধভাবে ওয়াকিটকি সামগ্রী মজুদ রেখে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রয় করে আসছিল। সহযোগী আল মামুন ২ বছর যাবত তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। এ পর্যন্ত তারা দুই হাজার ওয়াকিটকি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অবৈধভাবে বিক্রয় করেছে।

ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার সংক্রান্ত লাইসেন্স ও কারিগরি গ্রহণযোগ্যতা সংক্রান্ত সনদ ব্যতিত পরস্পর যোগসাজশে ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ (সংশোধনী/২০১০) এর ৫৫(৭)/৫৭(৩)/৭৪ ধারার অপরাধ করায় আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান তিনি।

দেশের নিরাপত্তা হুমকির কথা উল্লেখ করে কর্নেল আরিফ বলেন: দেশের সাধারন জনগণ ওয়াকিটকি বহনকারী একজন ব্যক্তিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে অপরাধীরা ভূয়া ডিবি, র‌্যাব সদস্য, ডিজিএফআই সদস্য, এনএসআই সদস্য এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ডাকাতি, রোড ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ মারাত্মক অপরাধ সংগঠিত করে আসছে। এতে করে একদিকে যেমন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে, অন্যদিকে প্রকৃত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যখন সাদা পোশাকে দায়িত্বপালনের প্রয়োজন হয় তখন জনসাধারণ তাদেরকে ভূয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ভেবে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এছাড়াও ওয়াকিটকির মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে অপরাধ সংগঠন করলে পরবর্তীতে অপরাধী শনাক্তকরণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে। যা সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।