• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৪:০২ পূর্বাহ্ন

সাভার আশুলিয়ায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে মানুষ অতিষ্ঠ


প্রকাশের সময় : মে ২০, ২০২৩, ২:৫৪ অপরাহ্ন / ৪০
সাভার আশুলিয়ায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে মানুষ অতিষ্ঠ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার, ঢাকাঃ সাভার ও আশুলিয়ায় দিন দিন কিশোর গ্যাং এর উৎপাত বেড়েই চলছে। সম্প্রতি সময় সাভারের ব্যাংক কলোনীতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে উঠতি বয়সের কিশোররা। নারীদের উত্ত্যক্তকরণ থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই, মাদক বহনসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে রয়েছে তাদের সম্পৃক্ততা। এলাকাভিত্তিক ছোট-বড় গ্যাং তৈরি করে এসব অপরাধ কর্ম- কান্ড দিন দিন বেড়েই চলছে।

এদের উৎপাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মানুষ। উঠতি বয়সের এসব মাস্তানদের পাশাপাশি সাভারে সন্ত্রাসী ও টপটেররদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব সন্ত্রাসীদের হাতে রয়েছে বিভিন্ন অস্ত্র। সম্প্রতি সাভার পৌর এলাকার ব্যাংককলোনীর ৫ নং ওয়ার্ডে সাগরের নেতৃত্বে এক শিক্ষার্থীর উপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করা হয়। পরে এই ঘটনায় মারধরের শিকার কিশোরের মা তাসলিমা বেগম বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এঘটনার জেরে ওই কিশোরের মাকে অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি প্রদান করেন গ্যাং প্রধান মান্না। সাভার মডেল থানায় মামলা দায়েরের পর কিশোর গ্যাং সদস্য মামলার আসামী সাগরকে আটক করেছে সাভার মডেল থানা পুলিশ।

কিশোর গ্যাঙের হাতে আহত ওই কলেজ শিক্ষার্থীর নাম তারেক হোসেন শাহেদ (১৬)। তিনি ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার দেউলি গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে। বর্তমানে তারা সপরিবারে সাভারের ব্যাংক কলোনী এলাকার ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। সাভার মডেল থানা মামলার অভিযুক্তরা হলেন, সাগর (১৪), সম্রাট (১৫), রবিন (১৫), আরিফ (১৪) ও বিপুল (১৪) তারা সবাই সাভার পৌরসভার ব্যাংক কলোনী এলাকার বাসিন্দা।

মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, গত ১১মে বিকেলে সাভার পৌরসভার ব্যাংক কলোনী এলাকার বালুর মাঠে তার বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলতে গেলে সেখানে পূর্ব শত্রুতার জেরে মামলার অভিযুক্তরাসহ আরো ৭/৮জন মিলে শাহেদের বন্ধু আ. মান্নানকে (১৮) মারপিট করতে থাকে। এসময় শাহেদ তার বন্ধুকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করতে থাকে। এক পর্যায়ে অভিযুক্ত সাগর তার হাতে থাকা সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে শাহেদের আঘাত করলে ডান হাতের কনুইয়ের দিকে মারাত্মকভাবে কেটে যায়। পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক এসআই সুদীপ কুমার গোপ জানান, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা থানায় ৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার রাতে প্রধান আসামী সাগরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

ইতিপূর্বে সাভার পৌর এলাকার গার্লস স্কুল রোড কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এতে আকাশ হোসেন নামে এক কিশোরকে কুপিয়েছে অপর গ্যাংয়ের সদস্যরা। কিশোর সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আকাশের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে পালিয়ে যায়।

সাভার উপজেলার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও উঠতি মাস্তানদের একটি তালিকা পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরির সন্ত্রাসীদের নাম এ তালিকায় স্থান পেয়েছে। উঠতি মাস্তানদের পাশাপাশি চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম রয়েছে এ তালিকায়। সম্প্রতি মাদক বিরোধী অভিযান এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইতিমধ্যে পূর্বের তালিকাকে হালনাগাদ করা হয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

অভিজ্ঞ মহলের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিক তালিকা তৈরি ও হালনাগাদ করলেও সন্ত্রাসীরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অপরদিকে উপজেলার পাড়া মহল্লায় উঠতি মাস্তানদের উৎপাতে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জনজীবন অতিষ্ঠ। কোথাও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়, আবার কোথাও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সহযোগী অনুচর হিসেবে সক্রিয় থাকছে এসব উঠতি বয়সি মাস্তানরা।

এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী মো. মাহফুজ বলেন, ব্যাংক কলোনীতে পাড়াভিত্তিক গড়ে তোলা হচ্ছে ছোট-বড় অপরাধী গ্যাং। তারা নারীদের উত্ত্যক্ত, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি থেকে শুরু করে জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাই-রাহাজানির সঙ্গে। তাদের অনেকের কাছে রয়েছে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র রয়েছে।

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক সাহা জানান, অপরাধীরা যে-ই হোক, তাদেরকে কাহুকে ছাড় দেওয়া হবে না।