• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০১ অপরাহ্ন

আগাম নির্বাচনেও প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১, ২০২৩, ১:৩৯ অপরাহ্ন / ৫৪
আগাম নির্বাচনেও প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকাঃ চলতি বছরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও হঠাৎ আলোচনায় এসেছে আগাম নির্বাচন প্রসঙ্গ। সরকার কিংবা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলা না হলেও আগাম নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় এসেছে ইসির এক সমন্বয় সভা থেকে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর বেরিয়েছে। এ খবর নিয়ে মিশ্র ধারণা থাকলেও বিষয়টিকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও। বিএনপিকে অপ্রস্তুত রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে আগাম নির্বাচন দেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে নির্বাচন আগে নাকি পরে হলো, তা নিয়ে না ভেবে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতেই মনোযোগ রাখছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে দলটি। এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যখনই নির্বাচন হোক, তা প্রতিহত করার হুমকিও তারা দিয়ে আসছে।

প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার ইসির সমন্বয় সভায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করতে নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্দিষ্ট সময়ের আগে নির্বাচন হলেও যাতে কর্মকর্তারা প্রস্তুত থাকেন, সে নির্দেশনাও তিনি দেন সভায়। সিইসি বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখব, সংবিধান অনুযায়ী যেন নির্বাচন করতে পারি। সংবিধানে নির্দিষ্ট সময়ের আগেও নির্বাচন হতে পারে—এমন প্রভিশন (বিধান) আছে। নির্দিষ্ট সময়ের দু-এক মাস আগে ভোট হলেও নির্বাচন করার প্রস্তুতি যেন ইসির থাকে। যদিও ইসির পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, আগাম নির্বাচন বিষয়ে কোনো খবর নেই। ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন সুবিধাভোগীর সঙ্গে কথা বলে যে রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে, আমরাও সেই রোডম্যাপের সঙ্গে মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেন, নির্বাচন সময়ে হোক আর সময়ের আগে হোক, টানা চতুর্থবারের মতো জয় ছিনিয়ে নিতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে নির্বাচনের বছরে বিরোধীদের আন্দোলনের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে দল। তাদের কারও কারও মতে, আগাম নির্বাচনের পরিকল্পনা এখনো অঙ্কুরেই আছে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অক্টোবর-নভেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রাথমিক আলোচনার কথা শোনা যাচ্ছে। ওই নেতারা মনে করেন, জানুয়ারিতে নির্বাচন ধরে নিয়েই বিএনপি আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুই-তিন মাস আগে নির্বাচন হলে দলটি অপ্রস্তুত থাকবে। এ ক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে আওয়ামী লীগের বেগ পেতে হবে না। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য অবশ্য জানান, আগাম নির্বাচন নিয়ে এখনো তেমন আলোচনা বা পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তিনি বলেন, বিরোধী দলের আন্দোলনের রাশ টেনে ধরতে অনেক দেশে আগাম নির্বাচনের প্রচলন আছে। বাংলাদেশে এমনটা কখনো দেখা যায়নি। তবে এবার বিএনপিকে অপ্রস্তুত রাখার জন্য অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে নির্বাচন হলেও হতে পারে। যদিও বিষয়টি বিরোধীদের আন্দোলনের গতি-প্রকৃতির ওপর নির্ভর করছে। সংবিধানে সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে দুটি বিধান আছে। সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরবর্তী ৯০ দিন আর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ভোট হতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করতে চাইলে সরকারকে এ বছরের ১ নভেম্বর থেকে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আর ১ নভেম্বরের আগে নির্বাচন করতে চাইলে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সরকার বিদ্যমান থাকলেও সংসদ বিলুপ্ত থাকবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, সিইসির বক্তব্যের ব্যাখ্যা তিনিই দিতে পারেন। তবে আওয়ামী লীগ সব সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়াটা উচিত। সরকার আগাম নির্বাচন দিয়ে বিএনপিকে অপ্রস্তুত করতে চায়, এমন সন্দেহ দলটির মধ্যেও আছে। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, ক্ষমতাসীনরা তাদের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চায়। আর বিএনপি তাদের অধীনে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচন নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, আলাপ-আলোচনা করে তা সমাধানের সম্ভাবনা খুবই কম। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে দাবি আদায় করা ছাড়া বিএনপির সামনে পথ একটাই—২০১৮ সালের মতো এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া। এবার বিএনপি সেটি করতে চায় না।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে এক ইফতার অনুষ্ঠানে বলেন, সরকার আবারও একটা নতুন নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো রাতে ভোট করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু সেটি এ দেশের জনগণ হতে দেবে না। বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, দল (বিএনপি) যে আন্দোলনের বিষয়ে এবার অনেক বেশি সিরিয়াস, রমজানে কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে সেই বার্তাই দেওয়া হয়েছে। আগাম নির্বাচন করুক আর না করুক, তাদের (সরকার) অধীনে নির্বাচন নয়। এবার গায়ের জোরে নির্বাচন করতে গেলে তা আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিহত করা হবে। বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা যায়, আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের সঠিক আলামত এখনো বিএনপির নজরে আসেনি। তবে নির্বাচনের বছরে সরকারের গতিবিধি তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সরকার কার সঙ্গে কী করছে, বিদেশিদের সঙ্গে বসছে কি না, কেন বসছে, নির্বাচন বিষয়ে কী বলছে; এসব বিষয়েও খেয়াল রাখা হচ্ছে। একই সঙ্গে দলের মধ্যে যাতে কোনোভাবে ভাঙন বা অনাস্থা সৃষ্টি না হয়, সরকারের কোনো ফাঁদে যাতে কেউ পা না দেয়, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে। বিএনপির এক নেতা বলেন, আগাম নির্বাচন শুধু নয়, নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন হলেই তা প্রতিহত করা হবে। সরকারের মনোভাব বুঝেই আন্দোলনের গতি ঠিক করার পরিকল্পনা বিএনপির আছে। নির্দলীয় সরকারের দাবি অগ্রাহ্য করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হলে বিএনপি কী করবে, জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সেটা এ দেশের জনগণ ঠিক করবে। বিএনপি কিছু করবে না, কিছু করারও দরকার পড়বে না। বিএনপি কিছু না করলেও জনগণ করবে। জনগণ আন্দোলন করছে এবং তারাই ঠিক করবে কখন কী করতে হবে।

জানা গেছে, দলের নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে প্রথা ভেঙে রমজানেও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। রমজানের পর সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনকে এক দফার আন্দোলনে রূপ দেওয়ারও পরিকল্পনা আছে। এ প্রসঙ্গে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কখন এক দফার আন্দোলন দরকার, সেটাও জনগণই ঠিক করবে।বিএনপির অনেক নেতা অবশ্য মনে করেন, যেকোনো সময় কিছু একটা ঘটে যেতে পারে। ডিসেম্বরের মধ্যেই কঠোর কর্মসূচি দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করার ব্যাপারে তাঁরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তবে এটা সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করছে বলে তাঁরা মনে করেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারের পদক্ষেপের ওপরই নির্ভর করবে আন্দোলনের কর্মসূচি শক্ত না নরম হবে।