• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন

খুলনায় বিভিন্ন সড়কে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ইট বালু বহনকারী ট্রলি : আতঙ্কে নগরবাসী


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২৩, ৪:৫৬ অপরাহ্ন / ১০৯
খুলনায় বিভিন্ন সড়কে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ইট বালু বহনকারী ট্রলি : আতঙ্কে নগরবাসী

মিশারুল ইসলাম মনির,খুলনাঃ খুলনায় সড়ক-মহাসড়কে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত যান ইট বালু বাহী ট্রলি। কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই বহাল তবিয়তে চলছে এই অঘোষিত যানবাহন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি মাসের ২ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার শিক্ষা অফিস থেকে (খুলনা-ল-১১-৯৮৯০) মোটর সাইকেল যোগে চাঁদপুর কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম (৪৫) খুলনা শহরে যাচ্ছিলেন। তিনি ঘাটভোগ ইউনিয়নের আলাইপুর ব্রীজ পার হয়ে আলাইপুর এলাকার তেমাথা নামক মোড়ে পৌছালে সড়কের পশ্চিম দিক থেকে আসা ট্রলির সাথে মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ তিনি নিহত হন। তিনি সাতক্ষীরার তালা থানার মোড়াকুলিয়া গ্রামের মৃত আলী আহম্মদ সরদারের ছেলে।

২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি সকালে রূপসা উপজেলার শিয়ালি এলাকায় ট্রলির ধাক্কায় নছিমনের চালকসহ চারজন গুরুতর আহত হয়। আহতরা হলেন তপন বৈরাগী (৫০), বিদুর হালদার (৪৫), শিপন বিশ্বাস (৩৫) ও ভোগিরত বিশ্বাস (৪২)। একই বছর ২২ মার্চ রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের আনন্দনগর গ্রামে বেপরোয়া ট্রলির চাকায় পিষ্ট হয়ে ওই গ্রামের আকবর আলী সরদারের মেয়ে ও আনন্দ নগর ইফতেদায়ী মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী আখি মনি (৭) নামে এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়। ২০২০ সালে ৮ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে রূপসার নেহালপুর গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক মোঃ লুৎফর রহমানের ছেলে শিশু পুএ মোঃ মহিদুল ইসলাম (১০) ইটবাহী ট্রলির ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়।

ভূক্তভোগি মহলের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রূপসা উপজেলার নৈহাটী কালিবাড়ি এলাকায় অবাধে চলাচলা করে আসছে ইটবাহী ট্রলি। এ সড়ক দিয়ে বেপরোয়াভাবে চালানো হয় ইট বহনকারী সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ট্রলি । এ ট্রলি বন্ধে কথা বলার মতো কেউ নেই। পুলিশ ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ম্যানেজ করেই এ ট্রলি চলাচল করে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এইসবএলাকায় দাপিয়ে বেড়ায় অর্ধশতাধিক ট্রলি।
ট্রলির ধাক্কায় কেউ মারা গেছেন আবারও কেউ পংগুত্ববরণও করছেন।

একই বছর ট্রলির ধাক্কায় রূপসার শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা মোঃ শওকত শেখের ছেলে মোঃ রবিউল ইসলাম, শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা মোঃ ইদ্রিস আলীর ছেলে মোঃ রমজান আলী, নৈহাটী এলাকার বাসিন্দা মোঃ শাহজাহান শেখের ছেলের মোঃ রাসেল, নেহালপুর এলাকার বাসিন্দা মোঃ সাহেব আলীর ছেলে মোঃ মাইনুল ট্রলির ধাক্কায় গুরুতর আহত হওয়ার পর তাকে চিকিৎসা দেওয়া হলেও তার একটি পা কেটে ফেলা হয়। অর্থের অভাবে তিনি সঠিক সেবা পাইনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

শ্রীরামপুর এলাকার মোঃ মিজানের পিতা ভ্যান চালক আঃ ওহাব (৬০) ইলাইপুর মোড়ে ট্রলির সাথে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হলে কিছুদিন চিকিৎসা দেওয়ার পর তিনি মারা যান।২০১৬ সালে শ্রীরামপুর, নৈহাটী, নেহালপুর মিস্ত্রিপাড়া এলাকার ভূক্তভোগি ও সচেতন মহলের আন্দোলনের মুখে ট্রলি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে নৈহাটী কালিবাড়ী বাজারে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তৎকালীন সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কিছু শর্ত বেঁধে দিয়েছিলেন। শর্তগুলো হচ্ছে, যাদের একাধিক ট্রলি আছে তারা শুধু একটি মাত্র ট্রলি চালাবে। আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিকে ট্রলির ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় যাওয়ার কথাও বলেন তিনি।
ইদানিং মহানগরীতেও দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন কয়েকশত যন্ত্রদানব ট্রলি। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে শহরে চলাচল করলেও নীবর রয়েছে প্রশাসন।

ট্রাফিকের সামনে এসব অবৈধ যান চলাচল করছে দাপটের সাথে। আতঙ্কগ্রস্থ থাকতে হচ্ছে নগরের বাসিন্দাদের। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশুরা ও তাদের অভিভাবকরা থাকেন আতঙ্কে। এসব যানে চালকরা যেন প্রতিযোগিতায় নামেন রাস্তায়। ২০১৬ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সারাদেশে ২২টি জাতীয় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার অটোরিকশা, টেম্পো ও অযান্ত্রিক যানবাহন চলা নিষিদ্ধ করেছিল। তখন বলা হয়েছিল, ভবিষ্যতে যেসব সড়ক-মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে, সেসব মহাসড়কের পাশে ধীরগতির যানবাহন চলায় বাইলেন নির্মাণ করা হবে। কিন্তু সেই ঘোষণা ও প্রজ্ঞাপনের চার বছর পরও মহাসড়কে অরাজকতা বন্ধ হয়নি।
উদ্যোগ নেওয়া হয়নি ধীরগতির থ্রি-হুইলারের জন্য বিকল্প লেন তৈরির। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের পর বারবার চেষ্টা করেও দেশের ২২ মহাসড়কে নসিমন, করিমন, আলমসাধু, ভটভটিসহ অনিয়ন্ত্রিত যান চলা বন্ধ করা যায়নি। এসব অবৈধ যানবাহনের কারণে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে সড়ক-মহাসড়ক। অটোরিকশা, ইজিবাইক, লেগুনা, নসিমন, টেম্পো, ভটভটি, আলমসাধু, মাহেন্দ্রসহ অবৈধ যানবাহনের কারণে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্কুল কলেজ ছাত্র/ছাত্রিীর অভিবাবকরা মন্তব্য করেছেন, ‘দুর্ঘটনায় অনেকের জীবন প্রদীপ নিভে যাচ্ছে। কার্যকরী পদক্ষেপ নিলে এটা বন্ধ করা সম্ভব বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটা চালায় অদক্ষ শিশু শ্রমিকেরা

মাসোয়ারা পায় ডিউটি রত ট্রাফিক পুলিশরা অদক্ষ চালক ও বেপরোয়া গতি অহরহ পথচারীদের প্রাণনাশের কারণ হচ্ছে। তাই অচিরেই বন্ধ হোক এই ঘাতক বাহক এই ট্রলির কারণে অনেক মানুষের প্রাণ অকালে ঝরে গেছে। এটা বন্ধ হওয়াটা খুব জরুরি।

দিন রাত সবসময় নিয়মিত ভাবে চলাচল করছে রাস্তা দিয়ে এই ঘাতক যান বাহন ইট বালু ভর্তি ট্রলি এমনকি বিকট শব্দে শহরের রাস্তার পাশে বাড়িগুলোতে ঘুমাতে পারছেন না মানুষ।সচেতন মানুষের দাবি কবে পাব আমরা এর থেকে মুক্তি পাবো।