• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের খুলনা, বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলের দাওয়াতী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ০৫ সদস্যকে বাগেরহাট থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩, ৮:৩৩ অপরাহ্ন / ৯১
নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের খুলনা, বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলের দাওয়াতী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ০৫ সদস্যকে বাগেরহাট থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনাঃ র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনী, বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার, ছিনতাইকারী, অপহরণ ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।হ এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত চাঞ্চল্যকর এবং আলোচিত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে র‌্যাব জনগনের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

র‌্যাব প্রতিনিয়ত অভিযান ও নজরদারী পরিচালনার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমনে কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর সাথে একত্রিত হয়ে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত জঙ্গি সংগঠন “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” এর আমীর ও শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ প্রায় শতাধিক জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এছাড়াও নিষিদ্ধ ঘোষিত অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে র‌্যাবের নিয়মিত নজরদারী অব্যাহত রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের প্রায় ০৩ হাজার এবং হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে প্রায় ০২ হাজার জঙ্গিকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র‌্যাব। যখনই জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়েছে তখনই র‌্যাব ফোর্সেস সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে জঙ্গিদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই’র তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৬ এর অভিযানে বাংলাদেশ হতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর খুলনা, বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলের দাওয়াতী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত মোঃ তরিকুল ইসলাম (২৩), পিতা-মৃত কামাল গাজী, পিরোজপুরসহ মোঃ আকাশ @ আব্দুল্লাহ (২৩), পিতা-গাউছ মোল্লা, গোপালগঞ্জ, তাজিমুদ্দিন @ জসীমউদ্দীন (২১), পিতা-মোহাম্মদ জাকির ফকির, গোপালগঞ্জ, ইসমাইল হাসান অনিক (২০), পিতা- মতিউর রহমান, মাদারীপুর ও মোঃ রিপন (২০), পিতা-সৈয়দ আহাদুজ্জামান, গোপালগঞ্জদের’কে বাগেরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় উগ্রবাদী পুস্তিকা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম সংক্রান্ত নোট বই।

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর সদস্য। তারা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে তামিম আল আদনানী, হারুন ইজহার, গুনবীসহ বিভিন্ন আধ্যাত্মিক নেতার বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে উক্ত সংগঠনে যোগদান করে। পরবর্তীতে তারা সংগঠনের সদস্য সংগ্রহে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের উপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে সংগঠনের সদস্যদের তথাকথিত জিহাদের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহীহ করে তোলে। এ উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদেরকে তারা বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করতো। এছাড়াও তারা সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভুল তথ্য প্রদান করে তাদের আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন মাদ্রাসা ও সদস্যদের নিকট থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ করতো। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তারা মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো বলে জানা যায়। তারা বিভিন্ন অপব্যাখ্যা ও মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য সদস্যদেরকে উগ্রবাদী করে তুলতো।

গ্রেফতারকৃত তরিকুল গোপালগঞ্জের একটি মসজিদে ইমামতি করতো। সে ২০২১ সালে দিঘলীয়াতে একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়ণকালীন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর ওমর নামের একজন উচ্চপদস্থ সদস্যের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ‘আনসার আল ইসলাম’ এ যোগদান করে। সে ওমর নামের ঐ ব্যক্তির তত্তাবধানে আল কায়েদার বিভিন্ন পেইজ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন সাইট ও বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে প্রবেশ করে পর্যালোচনা করে আরো বেশি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয় এবং নিজে দাওয়াতী কার্যক্রমে যুক্ত হয় এবং সদস্য সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে সে দিঘলীয়াতে মাদ্রাসায় অধ্যয়ণকালীন আবদুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন সহপাঠীকে দাওয়াতী কার্যক্রমের মাধ্যমে সংগঠনে যুক্ত করে। সে গোপালগঞ্জে মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং খুলনা, বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জ এলাকায় দাওয়াতী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এছাড়াও সে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সাথে নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখতো। সে সদস্যদের নিকট থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও এবং বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা সরবরাহ করতো বলে জানা যায়। সংগৃহীত অর্থ ওমর নামক ব্যক্তির কাছ থেকে সংগ্রহ করে সংগঠনের কাজে ব্যাবহার করত বলে জানায়।

গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহ’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে বাগেরহাটের একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়ণরত ছিল। ২০২১ সালে খুলনার দিঘলীয়াতে একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়ণকালীন গ্রেফতারকৃত তরিকুলের মাধ্যমে ‘আনসার আল ইসলাম’ এ যোগ দেয়। সে দিঘলীয়াতে মাদ্রাসায় অধ্যয়ণকালীন তরিকুলের সাথে অন্যান্য সহপাঠীদের মধ্যে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরবর্তীতে বাগেরহাটে মাদ্রাসায় অধ্যয়ণকালীনও দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। দাওয়াতী কার্যক্রমে তার পারদর্শিতার জন্য খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলের দাওয়াতী শাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়াও সে সদস্যদের নিকট থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহের পাশাপাশি মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও এবং বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা সরবরাহ করতো বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত তাজিমুদ্দিন গোপালগঞ্জের স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ইমামতি করতো। সে দিঘলিয়াতে একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালীন গ্রেফতারকৃত আবদুল্লাহর সহপাঠী ছিল। সে ২০২১ সালে আব্দুল্লাহ’র মাধ্যমে আনসার আল ইসলাম এর মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়। সে বিভিন্ন সময় তরিকুল ও আব্দুল্লাহ’র সাথে তার মাদ্রাসা/বাসায় মিটিং করতো। সে তরিকুল এর কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সংগ্রহ করতো। সে তার নিজ এলাকায় দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত ইসমাইল গোপালগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়ণরত ছিল। সে তরিকুলের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ‘আনসার আল ইসলাম’ এ যোগদান করে। সে তরিকুল এর কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সংগ্রহ করতো। সে তার নিজ এলাকা মাদারীপুরে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল এবং বিভিন্ন লোকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতো বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত রিপন ২০২২ সালে আব্দুল্লাহ’র মাধ্যমে আনসার আল ইসলাম এর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করে। গ্রেফতারকৃত রিপন বিভিন্ন সময়ে আব্দুল্লাহ’র সাথে দেখা করে বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা সংগ্রহ করে সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। সে তরিকুল এবং আব্দুল্লাহ’র মাধ্যমে পার্শ্ববতী বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত হয়ে তাদের সাথে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তথাকথিত জিহাদের নামে হিজরত করে পার্শ্ববর্তী দেশে গমনের পরিকল্পনা ও চেষ্টা করেছিল বলে জানা যায়।

(ছবি তৈয়ব আলী পর্বত)