• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন

ডা: অর্ণা জামান কাঁদলেন এবং সবাইকে কাঁদালেন সিআরপি রাজশাহীর পরিচিতি সভায়


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২৩, ৭:৫৫ অপরাহ্ন / ৬২
ডা: অর্ণা জামান কাঁদলেন এবং সবাইকে কাঁদালেন সিআরপি রাজশাহীর পরিচিতি সভায়

নিজস্ব প্রতিবেদক,রাজশাহীঃ আমরা প্রতিবন্ধীদের কেনো সমাজের থেকে আলাদা করে রাখছি? কেনো আমরা এসকল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের এসমাজের একটি অংশ মনে করতে পারি না? তারাও তো মানুষ। আমরা চেষ্টা করবো সমাজকে ভাগ না করে সকলকে এক কাতারে নিয়ে চলতে। আমার বাবা খাইরুজ্জামান লিটন আমাদের পারিবারিক জায়গাটি যে এমন একটি সমাজসেবা মূলক কাজে দিয়েছে তাতে আমরা গর্বিত। আমি আশা করবো এই জায়গাটিতে সিআরপি ভালো ভাবে জনগনের সেবায় সকলের কল্যাণের জন্য কাজ করবে, সিআরপি রাজশাহী – শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টারের পরিচিতি সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে সুবিধাবঞ্চিত ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সাধারণ মানুষদের সাথে এক কাতারে দেখার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এবং রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ডা: আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা।

আর্তমানবতার সেবায় জনকল্যানে সিআরপি‘কে পারিবারিক ১৫ বিঘা জমি দান করেছেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানের হেনার পুত্র বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন।

বৃহস্পতিবার রাজশাহী জেলার কাটাখালি পৌরসভার কাপাসিয়া বাজারের পাশে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন বিভাগীয় উপকেন্দ্র শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টারের প্রস্তাবিত স্থানে পরিচিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।পরিচিতি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খাইরুজ্জামান লিটন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাসিক মেয়র সিআরপি ও সুবিধা বঞ্চিত জনগনের বিষয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর আগ থেকে আমি ও আমার স্ত্রী শাহীন আকতার রেনী, আমরা দুজনে পক্ষাঘাতগ্রস্ত, পঙ্গু ও প্রতিবন্ধীদের কল্যানে কাজ করছি। এ সংক্রান্ত কয়েকটি সংগঠনের সাথে জড়িত থেকেও কাজ করেছি। তখন থেকে মনে হতো, তাদের জন্য স্থায়ীভাবে যদি কিছু করতে পারতাম। সেই চিন্তা থেকে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তুলতে ১৫ বিঘা জমিটি সিআরপিকে প্রদান করেছি। চিকিৎসা সেবাসহ এই প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে কর্মসংস্থান শুরু হবে।

এ সময় মেয়র পরিবারের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহীন আক্তার রেনী, রাজশাহীর মতো জায়গায় সিআরপি চালু হলে শুধু নগরীই নয় রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখান থেকে সেবা নিতে পারবে। এছাড়াও স্থানীয় এলাকা বা তার আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

অন্যদিকে বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে সুবিধাবঞ্চিত ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সাধারণ মানুষদের সাথে এক কাতারে দেখার প্রত্যয় ব্যাক্ত করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এবং রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ডা: আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা বলেন, আমি ডাক্তার হওয়ার আগে অর্থাৎ যখন এমবিবিএস পড়বো বলে ভেবেছিলাম। সেইসময় আমার বাবার (মেয়র লিটন) কাছে একটা প্রতিশ্রুতি চেয়েছিলাম, যে আমার একটা স্পেশালাইজড হসপিটাল দরকার। যেখানে আমি চিকিৎসা দিতে পারব এবং সেটা রাজশাহীতেই দরকার।

অর্ণা জামান বললেন, এখানকার মানুষ ঢাকায় গিয়ে হয়তো অনেকের আবাসন ব্যবস্থার সমস্যা থাকে, অনেকের খাওয়ার সমস্যা থাকে, আর্থিক সংকট থাকে। এই যে কষ্টগুলো যখন চোখের সামনে থেকে দেখা লাগে খুবই কষ্ট পাই। এজন্য বাবার কাছ থেকে কথা নিয়েছিলাম যে, আমাকে একটা হসপিটাল করে দিতে হবে এবং অবশ্যই আমি যেন সেটার একটা দেখভাল করার সুযোগ পায়।

আমাদের কাপাসিয়ার এই বাগানটি ১৬ বিঘা জায়গার উপর, সুন্দর একটা জায়গা এবং আমি মনে করি, হয়তো আমার বাবার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এখানে বিশাল বড় বাংলো করে, বাড়ি করে, সুইমিং পুল এটাচ করে, পিছে বাগান করে রাজমহল গড়ে তুলতে পারতেন। রাজশাহীতে অনেক ভূমিদস্যু হয়েছে, জলদস্যুও আছে, বালুদস্যুও আছে কিন্তু বাবার মতো এরকম মনের মানুষ নাই।

তিনি আরো বলেন, আজকের এই সিআরপি রাজশাহী সেন্টার যেটি আমার দাদা শহীদ এ এইচ এম কামরুজ্জামান হেনা এবং জাহানারা জামান আমার দাদি তাদের নামে হচ্ছে এখানে রাজশাহীর পার্শ্ববর্তী এলাকা নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, বগুড়া, রংপুর পর্যন্ত, খুলনা পর্যন্ত অনেক মানুষ আছে যাদের চিকিৎসা সেবার খুবই কষ্ট তারা আসবেন, সেবা নিবেন এবং সুস্থ হবেন ।

আমার ভালো লাগে এই বাচ্চাগুলো এত ট্যালেন্টেড আপনারা বিশ্বাস করতে পারবেন না তাদের ছবি আঁকা দেখলে তাদের কথা শুনলে। তারা যখন কালচারাল প্রোগ্রামগুলো করে, আমি গিয়েছি দেখেছি আমার ভেতরটা কষ্টে ফেটে যায়। এই বাচ্চাগুলোর পেছনে যারা কাজ করেন তাদেরও সেই অবদান এই চিকিৎসকরাও যারা কষ্ট করে সারাদিন রাত পরিশ্রম করছে তাদের জন্য।

ডা: অর্ণা আরো বলেন, আমরা একটা সুস্থ সমাজ ও অসুস্থ সমাজ দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছি কেনো। কেন আমরা একটা সমাজ হতে পারছি না, সবাই একটা হতে পারছি না কেন, সবাই সুস্থ হতে পারছি না কেন, কেন মানতে পারছিনা ওরা আমাদের, আমাদেরই অংশ। আজ যদি আমার সন্তান প্রতিবন্ধী হয় আমি কি তাকে ফেলে দিব, আমি কিভাবে মা হিসেবে তাকে ফেলে দিব আমি পারবো না।

আমি দেখেছি আমার মাকে কষ্ট পেতে,আমরা যখন অসুস্থ থাকি, আমার এই শারীরিক গঠনের কারণে মানুষ যখন বিভিন্ন কথা বলে ভাবী আপনার মেয়ে মোটা হয়ে যাচ্ছে এত খাওয়ান। আমি সত্যি বলছি বাসায় তেমন খাবার হয় না বা লুকিয়ে খাবার অভ্যাস আমার নেই। কিন্তু এখন হয়ে গেছি এরকম কি করব, ডাক্তার হিসেবে আমিও জানি এটা খারাপ। আমি চেষ্টা করিনি নিজেকে ঠিক করার আমি করবি ইনশাল্লাহ।

আমি একটা জিনিস প্রমাণ করেছি যখন আমি রাজনীতি করতে এসেছিলাম। সবাই বলেছিল মোটা মেয়ে মিছিল করতে পারবা না, একটা ককটেল পড়লে সেখান থেকে পালাতে পারবে না, কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে সরতে পারবা না।

আমি প্রমাণ করেছিতো আমি পারছি। আমি আমার বয়সের তুলনায় যে জায়গায় আসার দরকার তার চেয়ে উঁচু জায়গায় এসেছি। আমি আমার বয়সের তুলনায় যে জায়গায় আসার দরকার তার চেয়ে উঁচু জায়গায় এসেছি। আমি মনে করি এটা আমার যোগ্যতা, আমার মনে সেই ইচ্ছা ছিল আমার মাথায় সে শক্তি ছিল সেজন্য আমি পেরেছি এবং অটিস্টিক সুবিধাবঞ্চিত বঞ্চিত এসকল শিশুদের সঠিক চিকিৎসা দিলে তারাও পারবে।

রাজশাহীর এ পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্রতি বছর ৫ হাজার মানুষ স্ট্রোকের চিকিৎসা ও অন্যান্য শারীরিক প্রতিবন্ধকতার চিকিৎসা পাবেন। এছাড়া স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি, কৃত্রিম অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তৈরি, ফিজিওথেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা নিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।

রাজশাহীতে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পক্ষে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের (সিআরপি) প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি অ্যান টেইলর বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমার আনন্দ প্রকাশের ভাষা নেই। শহরের মধ্যে সড়কের পাশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ১৫ বিঘার একটি জমি পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষের কল্যানে সিআরপিকে দান করলেন মাননীয় মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন ও তাঁর পরিবার। আমরা রাজশাহীতে সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র-সিআরপি এর আদলে আরেকটি পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তুলবো। সেখানে প্রতি বছর এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা পাবেন। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন, টিআরপি’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইদুর রহমান।

পরিচিতি সভায় উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী জেলা পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক আব্দুল বাতেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান, সিআরপি’র সদস্য মুশতাক আহমেদ সহ রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।