• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৮ অপরাহ্ন

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ : নির্মাণকাজ পেতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৪, ২০২১, ১:০৫ অপরাহ্ন / ৫৮৫
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ : নির্মাণকাজ পেতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা

ঢাকা : বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পেতে রাশিয়া, পশ্চিম ইউরোপ ও আমেরিকার কয়েকটি দেশের মধ্যে জোর কূটনৈতিক দেনদরবার শুরু হয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি জিটুজি অর্থাৎ (সরকারের সঙ্গে সরকারের) চুক্তির ভিত্তিতে হবে। সংশ্নিষ্ট সূত্র বলছে, এ জন্যই কাজটি পেতে একাধিক দেশ থেকে সরকারি পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। স্যাটেলাইটটি নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস (পিডব্লিউসি) কারিগরি ও বাণিজ্যিক দিক পর্যালোচনা করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এর ধরন ও সর্বোচ্চ উপযোগিতা পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় পশ্চিম ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোকে এগিয়ে রাখা হয়েছে। কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- কানাডা, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি। তবে এ প্রকল্পের শুরু থেকেই রাশিয়ার পক্ষ থেকেও জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পরিচালনায় গঠিত রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ জানান, চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিবেচনায় যে দেশের কোম্পানি যোগ্য বিবেচিত হবে, তাদেরই নির্বাচন করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যেই স্যাটেলাইটি উৎপেক্ষণ করা হবে। সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়া সময়মতো শেষ হলে এই সময়ের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ করা যাবে বলে জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটি নির্মাণ করেছিল ফ্রান্সের খ্যাতনামা কোম্পানি থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস এবং উৎক্ষেপণ করে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি স্পেস এক্স। বঙ্গবন্ধু-১ ছিল সম্প্রচারধর্মী স্যাটেলাইট। টেলিভিশন সম্প্রচার ও ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের জন্য এটি ব্যবহূত হচ্ছে। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু-২ হচ্ছে অপটিক্যাল ভিএইচআর-সার (সিনথেটিক অ্যাপারচার রাডার) সমন্বিত ক্যাটাগরির। এটি বিভিন্ন অঞ্চলের ভূমি ও সমুদ্র এলাকার ছবি তোলা, ভূমির মানচিত্র তৈরি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, সমুদ্রভিত্তিক ব্লু-ইকোনমি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত তথ্য এবং নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কাজে সহায়তা দেবে।

কারিগরি দৌড়ে যারা এগিয়ে: জানা যায়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে যে দেশের কোম্পানির সক্ষমতা বেশি প্রমাণিত হবে, তারাই এগিয়ে থাকবে। এর বাইরে কূটনৈতিক দক্ষতার বিষয়টিও রয়েছে। তবে কারিগরি সক্ষমতার বিষয়টিই বেশি প্রাধান্য পাবে। এখন পর্যন্ত ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার চেয়ে এগিয়ে আছে। তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসি বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট অপটিক্যাল ভিএইচআর-সার ক্যাটাগরির জন্য ১৫টি অপটিক্যাল ও একটি সার সমন্বিত স্যাটেলাইটের সুপারিশ করেছে। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় দেশগুলোর কোম্পানির পর্যাপ্ত সক্ষমতা রয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়ার কোম্পানির সক্ষমতা অনুযায়ী পাঁচটি স্যাটেলাইটের বাইরে তারা সমন্বয় করতে পারবে না। শুধু পাঁচটি অপটিক্যাল স্যাটেলাইট পাঠানো হলে এটি থেকে ডাটা ইমেজ পেতে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগবে এবং তা বর্ষার অকার্যকর থাকবে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটে অপটিক্যাল ভিএইচআর স্যাটেলাইটের টার্গেট লাইফটাইম পাঁচ বছর এবং সার স্যাটেলাইটের লাইফটাইম আট বছর ধরা হয়েছে। এই শর্ত পূরণের সক্ষমতাও কেবল ইউরোপ-আমেরিকার কোম্পানিগুলোরই রয়েছে। রাশিয়ার কোম্পানির তৈরি অপটিক্যাল স্যাটেলাইটের লাইফটাইম তিন বছর।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটের টার্গেট রেজুলেশনের জন্য ভিএইচআর ডাটা এক মিটারের কম হতে হবে। গুগল আর্থ, অ্যাপল ম্যাপিংয়ে জন্য এক মিটারের কম দৈর্ঘ্যের ভিএইচআর ডাটা ব্যবহার করা হয়। কারণ ভূমি পর্যবেক্ষণে এই সক্ষমতা ইউরোপের একাধিক দেশ, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির আছে। রাশিয়ার কোম্পানির নেই।

সুপারিশের তথ্যে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক পরিষেবা গ্রহণে বড় ক্রেতা হতে পারে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো। রাশিয়ার কোম্পানি স্যাটেলাইট নির্মাণ করলে ইউরোপ ও আমেরিকার কোম্পানির পরিষেবা গ্রহণ না করার আশঙ্কা বেশি। বিশেষ করে মার্কিন কাটসা (কাউন্টারিং আমেরিকা’স অ্যাডভারসারিজ থ্রো স্যাংসন অ্যাক্ট) নীতিমালা-সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে রাশিয়ার স্যাটেলাইট থেকে ইউরোপ-আমেরিকার কোনো কোম্পানির পরিষেবা গ্রহণ না করার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। একই সঙ্গে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ইস্যু রয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকার বিরোধিতা সত্ত্বেও সম্প্রতি রাশিয়া নিজস্ব স্যাটেলাইটগুলোর একটিতে ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ধ্বংসাত্মক উপগ্রহ পরীক্ষা করে ট্র্যাকযোগ্য এক হাজার ৫০০টিরও বেশি অরবিটাল ধ্বংসাবশেষ তৈরি করেছে। ফলে রাশিয়ার স্যাটেলাইটের বিষয়ে আগের চেয়ে আরও বেশি রক্ষণশীল নীতি নিয়েছে ইউরোপের দেশগুলো।

সংশ্নিষ্ট সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশে যে দুটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র রয়েছে তার বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু-১ এবং বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট পরিচালনায় সমজাতীয় সিস্টেম থাকা উচিত। তা না হলে পরিচালনার ক্ষেত্রে বারবার জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং দুটি স্যাটেলাইটের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজেও বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে। জানা যায়, বঙ্গবন্ধু-২ লিও (লো আর্থ অরবিট) প্রযুক্তির স্যাটেলাইট হবে। স্যাটেলাইট ইমেজিং মার্কেটে লিও স্যাটেলাইটের প্রায় ৯০ শতাংশ বাজারই ইউরোপের কোম্পানির দখলে।

এসব বিষয়ে বিএসসিএলের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, কারিগরি সক্ষমতার বিষয়টি নির্মাণ পর্যায়ে নানাভাবে কমবেশি করা যায়। যেমন ১৫টি অপটিক্যাল স্যাটেলাইটের যে সক্ষমতা তা পাঁচটি স্যাটেলাইট দিয়েও করা সম্ভব। ইমেজ রেজুলেশনও প্রয়োজন অনুযায়ী নির্ধারণ করা সম্ভব। কারিগরি ও ব্যয়- সব দিক বিবেচনায় নিয়ে যোগ্যতম কোম্পানি নির্বাচন করা হবে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট নির্মাণে প্রাথমিকভাবে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। তবে নির্মাণ পর্যায়ে ব্যয় কিছুটা কমবে বলেই আশা করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট নির্মাণেও ব্যয় কমেছিল।