• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় পৌর ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে ইউএনও-এর চিঠি জালিয়াতি : তদন্তের নির্দেশ


প্রকাশের সময় : মে ৪, ২০২৩, ৪:৪৯ অপরাহ্ন / ১২০
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় পৌর ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে ইউএনও-এর চিঠি জালিয়াতি : তদন্তের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জঃ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদের চিঠি জালিয়াতি করে সড়ক বিভাগের আওতাধীন কোটালীপাড়া-রাজৈর (জেড- ৮০৩২) সড়কের চেইনজ (০৭+৭০০ মি: হতে ১৭+১৪০ মি:) রাধাগঞ্জ-ফুলগাছা পর্যন্ত গণউন্নয়ন প্রচেষ্টকতৃক বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সহায়তায় কোটালীপাড়ার অংশে রোপিত গাছ অপসারণ চেয়ে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি প্রেরণ করেছেন কোটালীপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাবেক ভিপি চৌধুরী সেলিম আহম্মেদ ছোটন।

এ ব্যাপারে ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি প্রেরণ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ। এই প্রেক্ষিতে বিষযটি তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

জানা গেছে, রাজৈর-কোটালীপাড়া সড়কে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির অধীন ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে ১৩৪৫ টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়। তার মধ্যে জীবিত ১২৪৫টি গাছ বন বিভাগ কতৃক ২০১৭ সালে ৭১ লক্ষ ২৪ হাজার ৬২৪ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু তৎকালীন গাছগুলো অপসারণ করা হয়নি। বর্তমানে সড়কটি প্রধানমন্ত্রীর সংসদীয় আসনভুক্ত এবং প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত প্রতিনিধি মো: শহীদ উল্লাহ খন্দকার কয়েক দফায় সড়কটির উন্নয়ন কাজ করার জন্য মৌখিকভাবে তাগিদ প্রদান করেন। ফলে সড়কটির উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ করার লক্ষ্যে সড়কের দুই পাশের গাছ সমূহ কর্তণসহ অপসারণ করা অতি জরুরি। ফলে ২০১৭ সালে প্রাক্কলিতমূল্যে বর্তমান সময়ে উক্ত সড়কে বিদ্যমান ১২৪৫টি গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রয়ের বিষয়ে মতামতের জন্য কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওহায়িদের চিঠি জালিয়াতি করে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে কোটালীপাড়া পৌর শাখার সভাপতি চৌধুরী সেলিম আহম্মেদ ছোটন একটি চিঠি প্রেরণ করেন।

পবর্তীতে বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কায্যালয় থেকে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওহায়িদকে জানানো হলে জালিয়াতির বিষযটি ধরা পরে। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা জুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। পরবর্তীতে ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি প্রেরণ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ।

ব্যবস্থা নেয়ার ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে সদয় অবগত করা যাচ্ছে যে, এত সূত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত পত্রের সাথে ত্রি-পক্ষীয় বনায়ন চুক্তিনামা (উপজেলা পরিষদ, গণ উন্নয়ন প্রচেষ্টা ও উপকার ভোগীদের) প্রেরণ করার বিষয়ে উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার, গোপালগঞ্জ মহোদয় নিম্নস্বাক্ষরকারীকে টেলিফোনে নির্দেশনা প্রদান করেন। তাৎক্ষণিকভাবে উপ পরিচালক, স্থানীয় সরকার, গোপালগঞ্জ মহোদয়কে অবগত করা হয় যে, উরু স্মারক ও বিষয়ে জেলা প্রশাসক, গোপালগঞ্জ বরাবর কোন পত্র প্রেরণ করা হয়নি। উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার, গোপালগঞ্জ মহোদয়ের নির্দেশক্রমে অত্র দপ্তরের নথি যাচাই-বাছাই করা হয়।

চিঠিতে আরো বলা হয়, নথি যাচাইতান্তে দেখা যায় ২নং সূত্রের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের আওতাধীন কোটালীপাড়া-রাজৈর (জেড-৮০৩২) সড়কের চেইনজ ০৭+৭০০ মিঃ হতে ১৭+১৪০ মি: (রাধাগঞ্জ-ফুলগাছা) পর্যন্ত সড়কের দুই পার্শ্বে অবস্থিত গণউন্নয়ন প্রচেষ্ট কর্তৃক বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সহায়তায় কোটালীপাড়া উপজেলার অংশে রোপিত গাছ অপসারণ বিষয়ে মতামত প্রদানের নিমিত্ত বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, সামাজিক বন বিভাগ, ফরিদপুর বরাবর একটি পত্র প্রদান করা হয় (কপি সংযুক্ত)।

আরো বলা হয়েছে, ০৩নং সূত্রোই পত্রের উৎস অনুসন্ধানে জানা যায় যে, জনাব চৌধুরী সেলিম আহমেদ (ছোটন), সাং-পশ্চিমপাড়, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ (সভাপতি, পৌর ছাত্রলীগ, কোটালীপাড়া) উক্ত স্মারকের পত্রটির প্রাপক পরিবর্তন করে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, সামাজিক বন বিভাগ, ফরিদপুর এর হলে জেলা প্রশাসক, গোপালগঞ্জ বসিয়ে ফটোকপি করে উপ পরিচালক, স্থানীয় সরকার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, গোপালগঞ্জ এর নিকট দাখিল করেন। এ প্রেক্ষিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি দায় স্বীকার করেন এবং লিখিত একটি মুচলেকা প্রদান করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন (কপি সংযুক্ত)। এমতাবস্থায়, উক্ত প্রতিবেদন মহোদয়ের সদয় অবগতি ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবসা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হলো।

এ বিষয়ে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, গাছ অপসারণের বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর কোন পত্র প্রেরণ করা হয়নি। বিষয়টি আমাকে টেলিফোনের মাধ্যমে জানানো হয়। কোটালীপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাবেক ভিপি চৌধুরী সেলিম আহম্মেদ ছোটন স্মারকের পত্রটির প্রাপক পরিবর্তন করে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, সামাজিক বন বিভাগ, ফরিদপুরের স্থলে জেলা প্রশাসক গোপালগঞ্জ বসিয়ে ফটোকপি করে উপ পরিচালক, স্থানীয় সরকার, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিকট দাখিল করেন। ওই ছাত্রলীগ নেতা চৌধুরী সেলিম আহম্মেদ ছোটনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি দায় স্বীকার করেন এবং লিখিত একটি মুচলেকা প্রদান করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত কোটালীপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাবেক ভিপি চৌধুরী সেলিম আহম্মেদ ছোটন এ ব্যাপারে কিছু বলতে না চাইলেও সংবাদটি না করার জন্য প্রতিবেদকে অনুরোধ করেন।

এ ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান মুন বলেন, কোন সরকারি কর্মকর্তার চিঠি বা স্বাক্ষর জালিয়াতি করা বেআইনি। তবে এ ব্যাপারে আমি এখনো কিছু জানি না। যদি আমাদের কাছে এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ আসে তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুর রহমান জানান, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কায্যালয়ের স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচারক আজহারুল ইসলামকে তদন্তের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগেও কোটালীপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাবেক ভিপি চৌধুরী সেলিম আহম্মেদ ছোটন কোটালীপাড়ায় সুইচ গেটের মোট ৩টি শীট পাইল বেআইনিভাবে উঠিয়ে বিক্রির চেষ্টা করে। পরে জানাজানি হলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে ৩টি শীট পাইল জমা দেয়। পরে একটি অঙ্গীকার নামা জমা দেয় যে, ভবিষ্যৎতে এমন কোন বেআইনিমূলক কার্যক্রমে আর লিপ্ত হবো না। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে কমিউনিটি ক্লিনিক, পূরাতন প্রাইমারি স্কুল ভবন, ব্রীজের টেন্ডার ছাড়া ভাঙ্গার অনেক অভিযোগ রয়েছে।