• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০২:৩৬ অপরাহ্ন

এবার আসন বুঝে নৌকার মাঝি : নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জের, কপাল পুড়বে বিতর্কিত এমপি-মন্ত্রীদের


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩, ৪:০৬ অপরাহ্ন / ১৪৭
এবার আসন বুঝে নৌকার মাঝি : নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জের, কপাল পুড়বে বিতর্কিত এমপি-মন্ত্রীদের

বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকাঃ মুখে না না করলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে লড়বে বিএনপি। আর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নির্বাচনে অংশগ্রহণের এই সম্ভাবনার ভিত্তিতে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সে কারণে নির্বাচনী আসন বুঝে নৌকার (দলীয় প্রতীক) মাঝি (প্রার্থী) নির্ধারণ (মনোনয়ন দান) করবে দলটি। এ জন্য কয়েক ধাপে সম্ভাব্য প্রার্থী যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি আসনেই বিকল্প প্রার্থীর তালিকা বানানো হয়েছে। বিএনপি অংশগ্রহণ করছে ধরে নিয়েই মুসাবিদা করা হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়ে আসার মতো ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হবে নৌকা। এ জন্য অনেক এমপি-মন্ত্রীর কপাল পুড়তে পারে। দলের উচ্চপর্যায়ে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন সংস্থা, ব্যক্তি ও দলীয়ভাবে আগ্রহী প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে দলের বিশেষ বর্ধিত সভা, কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক, সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ভাষ্য, জরিপের ভিত্তিতেই (আগামী নির্বাচনে) মনোনয়ন মিলবে। জনপ্রিয়তায় যিনি এগিয়ে থাকবেন, তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। বর্তমান সংসদে আছেন কিংবা একাধিকবার এমপি হয়েছেন বলেই যে এবারও মনোনয়ন পাবেন সে নিশ্চয়তা নেই।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিদের মধ্যে অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে বিতর্কিত কিংবা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। অবস্থা এখন এমন যে, এলাকায় নিজ দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাই নির্বাচনে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন। দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেছেন কেউ কেউ। আবার পক্ষে না থাকায় দলের পদ-পদবি থাকলেও অনেক নেতা-কর্মীকে হামলা-মামলা দিয়ে ঘরছাড়া করেছেন বর্তমান সংসদের একাধিক দলীয় এমপি। শুধু এমপিই নয়, একাধিক মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার দফতরে জমা পড়েছে। ব্যাপকভাবে যাচাই-বাছাই করে অনেক তথ্য ও অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামনের নির্বাচনে এমপিদের আমলনামা দেখেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। যারা বিতর্কিত হয়েছেন, যাদের পক্ষে দলের নেতা-কর্মীরা নেই, তাদের এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে না। কারণ হিসেবে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা বলছেন, বিএনপি মুখে যতই বলুক, তারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে বিএনপির প্রার্থী দেখে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া হবে। কারণ তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় অনেক এমপির প্রতি নির্বাচনী এলাকার জনগণ বা দলীয় নেতা-কর্মীরাও খুশি নন। তাদের প্রার্থী করা হবে না। অন্যদিকে যেসব আসন দুটি বা অধিক উপজেলা নিয়ে গঠিত সেখানে বিএনপির প্রার্থীর এলাকা ও ভোটার বিবেচনায় নিয়ে নৌকার প্রার্থী করা হতে পারে। কারণ যে উপজেলায় ভোটার সংখ্যা বেশি সেই উপজেলা থেকে বিএনপির প্রার্থী আর কম ভোটার এলাকায় আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী করা হলে ঝুঁকি থেকে যায়। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, যদিও জাতীয় নির্বাচনে আঞ্চলিকতা ফ্যাক্টর নয়, কিন্তু কিছু শঙ্কা থেকেই যায়। তৃণমূলে অনেক ব্যক্তি আছেন যারা দলমত নির্বিশেষে জনপ্রিয়। সে কারণেই এবার আসন বুঝে নৌকার মাঝি দেবে আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকায় নানান কারণে জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, উপদল, গ্রুপিং এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। তৃণমূলজুড়ে কোথাও কোথাও ‘ভাই লীগ’, এমপি লীগ’সহ নানামুখী বলয়ভিত্তিক রাজনীতির প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে অনেকে নিজের গ্রুপ বা বলয় শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিএনপি-জামায়াত পরিবার থেকে আসা বিতর্কিতদের নানাভাবে কাছে টেনে নিয়েছেন। ফলে দলের অনেক ত্যাগী, পরিশ্রমী, পরীক্ষিত বা দুর্দিন-দুঃসময়ের নেতারা অভিমান করে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন। চ্যালেঞ্জের এই নির্বাচনে যেন দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে মাঠে নামানো যায়, প্রার্থী মনোনয়নের সময় সেই বিষয়টি মাথায় রাখা হবে। যাকে মনোনয়ন দিলে ভোটের স্রোত পক্ষে থাকবে এমন নেতাকেই নৌকার মাঝি করা হবে। শতাধিক আসনে এবার নতুন মুখ দেখা যেতে পারে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন দলটির হাইকমান্ড।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা এই দলটিকে দীর্ঘ সময় ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সবকিছু তাঁর নখদর্পণে। সে কারণেই তিনি দল হোক, আর নির্বাচনে মনোনয়ন হোক, সময়োপযোগী করে সাজিয়ে থাকেন সবকিছু- এবারও সেভাবেই সাজাবেন। তিনি আরো বলেন, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দিতে হবে। অবশ্যই তাকে সৎ ও নির্ভীক হতে হবে, এমন প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। সবার আমলনামা নেত্রীর কাছে আছে। বারবার মাঠ জরিপ করে তিনি আমলনামা নিচ্ছেন। সেই আমলনামা অনুসারে কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে কেউ রেহাই পাবেন না, কেউ না। সে যত বড় নেতাই হোক, আর যত বড় যেই হোক কেউ রেহাই পাবেন না।

দলীয় সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের অনেক এমপি-মন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তাদের অনুগত নেতারা মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে-অপকাশ্যে বিরোধিতা করছেন। দলীয় মাঠ জরিপে উঠে এসেছে, ওই সব এমপি বা মন্ত্রীর নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার অবস্থাও নাজুক। কারণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর অনেক এমপি-মন্ত্রী তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পরিণামে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তাদের দুর্ব্যবহারে তৃণমূলের অনেক ত্যাগী-পরিশ্রমী ও পরীক্ষিত-পদবঞ্চিত দুর্দিন-দুঃসময়ে আন্দোলন-সংগ্রামের সক্রিয় থাকা নেতা রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। বিতর্কিতরা কোনো ভাবেই ছাড় পাবেন না। তাদের সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। যেসব এমপি-মন্ত্রীর কারণে নেতায় নেতায় বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে তাদের আর কোনোভাবেই নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হবে না।