• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০১:৫৫ পূর্বাহ্ন

আজ সেই ভয়াল ১৩ এপ্রিল : রাজশাহীর চারঘাট গনহত্যা দিবস


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১৩, ২০২৩, ৫:০৭ অপরাহ্ন / ১১৩
আজ সেই ভয়াল ১৩ এপ্রিল : রাজশাহীর চারঘাট গনহত্যা দিবস

মোঃ মোজাম্মেল হক, চারঘাট, রাজশাহীঃ আজ ১৩ই এপ্রিল রাজশাহীর চারঘাট গনহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে চারঘাট উপজেলার সারদা থানাপাড়া, গোরশহরপরে, কুঠিপাড়া ও চারঘাট গোপালপুরসহ চারঘাটের আশেপাশের প্রায় ৫ শতাধিক মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছিল। তাই প্রতি বছরের মত এবারেও চারঘাট গনহত্যা দিবস হিসেবে যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হলো। দিবসটির কর্মসূচি মোতাবেক সকালে বৈধ্য ভুমিতে গিয়ে শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

এরপর সকাল ৯ টায় পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে অবস্থিত স্মৃতি স্ত্যম্ভে চারঘাট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন এর নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা আওয়ামী লীগ, চারঘাট পৌর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চারঘাট পৌর মেয়র একরামুল হক এর নেতৃত্বে পৌর আওয়ামী লীগ, থানাপাড়া সোয়ালোজ এর পক্ষ থেকে সোয়ালজের নির্বাহী পরিচালক রায়হান আলীর নেতৃত্বে থানাপড়া গ্রামের শহীদ পরিবারের সদস্যরা এবং চারঘাট পদ্মা বড়াল থিয়েটার ও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলো পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। দিবসটি উপলক্ষে থানাপাড়া সোয়ালেজে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া নিজ নিজ শহীদ পরিবারের সদস্যরা কবর জিয়ারত করেন এবং শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন বলে জানিয়েছেন গনহত্যায় লাশের স্তুপ থেকে ফিরে আসা রায়হান আলী।

উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালের ১৩ ই এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে চারঘাটের শান্তিপ্রিয় মানুষ চৈত্রের হাড়ভাঙ্গা খাটুনী শেষে একটু বিশ্রামের আশায় বিছানা ছুই ছুই ঠিক সেই সময় মেশিনগানের গুলির শব্দ কম্পিত হয়ে উঠে এলাকা, আতংকিত হয়ে এলাকাবাসি প্রানভয়ে ছুটাছুটি শুরু করে দেয়। এ সময় থানাপাড়াসহ আশেপাশের অনেকেই আশ্রয নেয় পদ্মার চরে। পাকহানাদাররা তৎকালীন পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার (পিটিসি) বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীতে ঢুকে দুর থেকে দেখতে পায় পদ্মার চরে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের। তারপর তারা দ্রুত চলে যায় পদ্মার চরে আশ্রয় নেওয়া নিরিহ মানুষদের ঘিরে ফেলে।

এ প্রসঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শী থানাপাড়া গ্রামের রায়হান আলী জানান, অস্ত্রে সজ্জিত পাক হানাদার বাহিনী সায়রন বাজিয়ে সারদায় অবস্থিত তৎকালীন পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার লুট করা অস্ত্র উদ্ধার করতে আসে। পাক বাহিনী পুলিশ একাডেমীর ভিতর ঢুকে পদ্মা নদীর চরে ভীত সম্ভ্রস্ত নিরস্ত্র কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু দেখতে পায়। পাক হানাদার বাহিনী পদ্মার চারপাশে জমায়েত লোকজনদের ঘেরাও করে। পুরুষদের অপেক্ষা করতে বলে এবং নারী ও শিশুদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। শুরু হয় ব্রাশফায়ার, সারি সারি স্বজনের মৃতদেহ। শুধু গুলি করেও ক্ষান্ত হননি হানাদার পাকবাহিনী, মৃত্যু নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে লাশগুলো এক জায়গায় করে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার পর প্রতি বছর থানাপাড়াবাসি তথা চারঘাটবাসী এ দিবসটি যথাযোগ্য মযাদার সাথে পালন করে আসছে।