
কুতুবউদ্দিন তালুকদারঃ সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার চামরদানী, দক্ষিণ বংশিকুন্ডা, উত্তর বংশিকুন্ডা ও মধ্যনগর সদর ইউনিয়নের বন্যার পানি কমলেও বাড়ছে বানভাসিদের চরম দুর্ভোগ, কমেনি খাদ্য সংকট মানুষ চরম বিপাকে। এম পি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, বন্যায় কবলিত ক্ষতিগ্রস্ত বানবাসী আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষের মাঝে খিচুড়ি ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন, চাহিদার তুলনামূলক পাচ্ছে না ত্রাণ সামগ্রী, গ্রাম অঞ্চলের কেউ কেউ আংশিক শুকনো খাবার পেলেও, অনেকের ভাগ্যে শুকনো খাবার এবং ত্রাণের ছুঁয়াও মিলছে না দুর্ভাগা বানবাসীদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কিছু এনজিও প্রতিনিধি বা হৃদয় বান দানশীল ব্যক্তিরা পরিমাণে কম হলেও বারংবার শুধুই আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনো খাবার বিতরণ করছেন। গ্রামাঞ্চলে পড়ে থাকা বানবাসী মানুষের কেউ নিচ্ছেন না খুঁজ খবর । এই ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে উপজেলার চার ইউনিয়নের সবকটি গ্রামগঞ্জ। বন্যায় কবলিত মানুষদের খাবার ও বিশুদ্ধ পানিয় জলের অভাবে বানভাসি মানুষেরা পড়েছে দূর্দশার কবলে,শেষ নেই হাড়ভাঙ্গা খাটুনির, ঘটেনি হতাশার অবসান, টানা চার মাসের শুরু হয়েছে। দুর্য়োগ একের পর এক দুর্যোগ চলছেই অবিরাম, বৈরী আবহাওয়ায় লাঞ্ছনা শিকার হাওর পাড়ের মানুষ, মানুষ এখন কি করবে কোথায় যাবে দুশ্চিন্তায় দিশেহারা। বৈশাখের বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে ৩০ ভাগ, অবিরাম বৃষ্টিতে পঁচে নষ্ট হয়েছে ২০ ভাগ ধান,ফলে অর্ধেক ধান পেয়ে আশায় বুক বেধে ছিল কৃষকেরা। এখন আবার দুই দফায় ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতি হয়েছে বিশাল পরিমাণে, ভেঙেছে ঘর বাড়ি, পানিতে ডুবে মরেছে গবাদিপশু গরু ,ভেসে গেছে পুকুরের মাছ ও হাঁস মুরগী।
মধ্যনগর উপজেলায় চলছে দুর্ভিক্ষের মানবিক বিপরর্যয়। পানিবন্দি মানুষের বন্ধ হয়েছে চুলার রান্না করা খাবার, বিত্তশালীদের চোর ডাকাতের ভয়ে ঘুম হয়েছে হারাম, দেখা দিয়েছে পয়নিস্কাশনের সমস্যা। ঘরে বাহিরে চলছে কান্নার রোল আর আহাজারি। বানভাসিদের কান্নায় ভারি হয়েছে মধ্যনগরের আকাশ বাতাস।
এবারের বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ দাড়িয়েছে সীমাহীন,দেখা দিয়েছে রোগবালাই,ছড়িয়ে পরছে কলেরা ডাইরিয়া,আক্রান্ত হচ্ছে জ্বরে,নেই কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা। গবাদিপশুর খাদ্যের অভাবে মরণদশায় নেমেছে বানবাসী মানুষ গুলো। গত ১৯৭৪- ১৯৮৮-২০০৪ সালের পর ইতিহাসে এ বছরের বন্যার ভোগান্তি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেশি। মধ্যনগরসহ চার ইউনিয়নের মানুষের বৈশাখের ফসল হানী এবং বন্যায় পানিবন্দি হয়ে এসব এলাকার ৬০ ভাগ মানুষ সর্বহারার পথে নেমে হয়েছে হতদরিদ্র, সবচেয়ে ভোগান্তির মধ্যে আছে মধ্যনগরের বানভাসি মানুষ, অনেকের গৃহপালিত পশু, গরু ছাগল, হাঁস, মুরগী ভেসে গেছে ঢলের পানিতে, যেগুলো আছে তা-ও খাদ্যের সংকটে পরেছে গ্রীহাস্তালি। এক্ষেত্রে ফসল হানী ও বন্যার ক্ষয় ক্ষতি পূরণে সরকারের আর্তিক সহায়তা খুবেই জরুরি বলে, মনে করছেন এলাকার বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ,মধ্যনগর হাওর অঞ্চলের মানুষ গুড়ে ধারাতে সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহয্যের হাত বাড়াতে এলাকাবাসী জানাচ্ছে জোর দাবী।
এদিকে বানভাসি মানুষ ঘর ছেড়ে আশ্রয়ের খোঁজে দ্বিক বিদিক ছুটছে হরদম তাদের গৃহপালিত পশু নিয়েও পড়েছেন বিপাকে। যেখানেই ছুটছেন গৃহপালিত পশুদের সাথে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক পরিবারের নিজস্ব নৌকা না থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে পানিবন্দি অবস্থায় বাড়িঘরে আটকা পড়ে থাকতে হচ্ছে। তাছাড়া হাট-বাজারগুলোতে পানি ঢুকে পড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। এসব বানভাসি মানুষের জন্য এখন শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও নিরাপদ আশ্রয় জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে জনমনে ভীতি আর উৎকন্ঠা কাজ করছে। রাস্তাঘাট,ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোতে পানি ঢুকে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে গোটা হাওর অঞ্চলের উপজেলাগুলো। আর এই সুযোগে চিড়া, মুড়ি, কুপিবাতি, মোমবাতি, গ্যাস সিলিন্ডারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটতে ব্যস্ত এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা।স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন এত পানি এর আগে তারা কখনো দেখেননি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আরো ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় বন্যার পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। স্থানীয় শতবছরের অনেকেই বলছেন এই বন্যা ২০০৪,১৯৮৮ কিংবা ১৯৭৪ সালের বন্যার চেয়েও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বাসা বাড়িতে পানি থাকায় রান্না করতে না পারায় সবচেয়ে বেশি খাদ্য সংকটে ভুগছে বানভাসি মানুষ। মানুষের সারা বছরের খুরাক ধান চাল সবাই পানির নিচে।বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। নেই বিদ্যুৎ। অনেক এলাকা অন্ধকারে নিমজ্জিত। গত ২/৩ দিন ধরে নেই যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মোবাইল নেটওয়ার্ক। জরুরী ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন। যারা দিনমজুর তারা কাজে যেতে পারছেন না, আয় রোজগার বন্ধ রয়েছে । রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সুনামগঞ্জের সবকটি উপজেলার সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে । এদিকে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছ, সরকারি বেসরকারি মিলে ১৫০ টি আশ্রম কেন্দ্রে খোলা হয়েছে। এতে ৫ হাজারেরও অধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের ৫ টি টিম বিভিন্নভাবে ভাগ হয়ে উপজেলাব্যাপী উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এবং বন্যার্তদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মোহাম্মদ রাহান কবির আশ্রম কেন্দ্রে সরেজমিন পরিদর্শন করে আশ্রম কেন্দ্রে ঠাই নেয়া বানভাসিদের মধ্যে রান্নাকরা খাবার বিতরণ করেন।সরেজমিনে রবিবার দুপুরে শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের মনদিয়াতা সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রম কেন্দ্র গিয়ে এর আশপাশের প্রায় ১০০ পরিবারের অধিক পরিবার আশ্রয় নেয় সেখানে, গৃহপালিত পশু গরু ছাগল শিশুদের নিয়ে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ গত ৫ দিন ধরে খেয়ে না খেয়ে দিনরাত পর করছেন।মুজরাই, কামালপুর, মনদিয়াতা, জয়পুর,গুলাবাড়ি সহ ৫/৭ টি গ্রামের মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে কথা হয় হামিদা বেগম ( ৭০) এর সাথে।তারা এসময় কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,আমারা খাওন চাই
আপনার মতামত লিখুন :