• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৩:৩৫ অপরাহ্ন

সাভারের আশুলিয়ায় শেখ হাসিনা প্রজন্মলীগের নামে চাঁদাবাজি ও প্রতারণার অভিযোগ


প্রকাশের সময় : জুলাই ১৯, ২০২২, ৪:৪২ অপরাহ্ন / ২১৬
সাভারের আশুলিয়ায় শেখ হাসিনা প্রজন্মলীগের নামে চাঁদাবাজি ও প্রতারণার অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধিঃ সাভারের আশুলিয়ায় স্ব-ঘোষিত “জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রজন্মলীগ” প্রতিষ্ঠা করে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বেলাল চৌধুরী ওরফে বি. চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে গৃহনির্মাণ কালে চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বি. চৌধুরী “জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রজন্মলীগ” নামের একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি পরিচয়ে ওই এলাকায় নানা অপকর্ম করে চলেছেন। প্রতিবাদ করলেই মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি কমিটির একটি কাঠামো সাজিয়ে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ২০০০ টাকায় ফর্ম বিক্রি করছেন বলে প্রমান রয়েছে। এছাড়া চাঁদাবাজিসহ না অপকর্ম করছেন অকপটে। বেলাল হোসেন চৌধুরী নোয়াখালী জেলার বাসিন্দা। তিনি তার পরিবারসহ আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নে বসবাস করছেন।

চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার শিকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হলের নিরাপত্তা কর্মী কাঞ্চন বলেন, আমার ভাগনি জামাইকে তৃতীয় শ্রেণীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেয় বেলাল চৌধুরী। প্রথমে ২ লাখ টাকা ও নিয়োগপত্র পাওয়ার পরে বাকি ৪ লাখ টাকা পরিশোধের কথা ছিল। পরে আমি ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকা তুলে দেই। কিছু দিন অতিবাহিত হলে তিনি বলেন বাকি ৪ লাখ টাকাও আগেই পরিশোধ করতে হবে। এই ৪ লাখ টাকা না দিলে নিয়োগ হবে না বলে তিনি জানিয়ে দেন। পরে বাধ্য হয়ে আরও ৪ লাখ টাকা আমি তাকে দিয়ে দেই। এরপর থেকে বেলাল নানা ভাবে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি টাকা ও চাকরি কিছুই দেন না।

পরবর্তীতে স্থানীয় ভাবে সালিশের মাধ্যমে আমাকে ১ লাখ টাকা ও বাকি টাকার চেক প্রদান করেন। বাকি টাকা পরিশোধ করে চেক ফেরত নেবেন বলে সকলের সম্মুখে কথা দেন তিনি। কিন্তু টাকা পরিশোধ করে চেক ফেরত নেওয়ার তারিখ আসলে তিনি সব কিছু অস্বীকার করেন। এখন ওই টাকা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। আমি গরীব মানুষ, টাকাটা ঋণ করে দিয়েছি। বেলাল চৌধুরী আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমি তার শাস্তি দাবি করছি।

চাঁদার ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক সেনা সদস্য বলেন, আমি বি চৌধুরীর বড় ভাইকে চৌধুরীর ওরফে কামাল চৌধুরীর মাধ্যমে একটি জমি কিনে বাড়ি নির্মানের প্রস্তুতি নেই। বাড়ি নির্মানকালে বেলাল চৌধুরী আমার কাছে এসে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তিনি বলেন, ১ লাখ টাকা পুলিশকে দিতে হবে আর ৫০ হাজার টাকা তারা খেয়ে ফেলবেন আমি বিষয়টি আমার ছেলেকে জানালে, আমার ছেলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশি পাহারায় আমরা বাড়ির কাজ সম্পন্ন করি। পরবর্তীতে বি চৌধুরী তার দলবল নিয়ে আমার বাড়িতে এসে আমি ও আমার ছেলেসহ পরিবারের ওপর হামলা করে।

এছাড়া জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রজন্মলীগের কমিটি গঠনের কথা বলে ফরম প্রতি ২ হাজার টাকা আদায় করেছেন এই চৌধুরী। ফরম ক্রয় করা রাকিব ইসলাম ভুবন বলেন, “জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রজন্মলীগ” আওয়ামীলীগের একটি অঙ্গসংগঠন এবং তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পরিচয় দিতেন বি. চৌধুরী। এই কমিটির সভাপতি পরিচয়ে তিনি আমাদের কমিটিতে আসার আহ্বান করেন।

এ সময় একটি ফরম দিয়ে আমাদের প্রলুব্ধ করেন এবং ২ হাজার করে টাকা আদায় করেন। খোঁজ নিয়ে শুনি এ ধরনের কোন সংগঠন আওয়ামী লীগে নেই। আমি প্রথমে ১০০০ টাকা দেই। পরে সাভার কলেজ ছাত্রলীগের ভাইদের কাছে বিষয়টি বললে তারা বলেন এ ধরনের কোন সংগঠন নেই। পরে বুঝলাম আমরা প্রতারণার স্বীকার হয়েছি।

জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রজন্মলীগের কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত বি. চৌধুরী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রজন্মলীগের কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য সকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ভাত খাচ্ছি, খেয়ে ফোন দেবো। পরবর্তীতে তিনি আর ফোন দেন নি এবং রিসিভও করেন নি।

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আগেও আমরা পেয়েছি। ঘর দেওয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাতের ঘটনাও সেখানে আছে। এ ঘটনায় এক নারীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনা হবে।