• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১১:২৮ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে এই শেখ আজগর নস্কর? সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর দৌড়ঝাপ শুরু


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১, ২০২৩, ৮:৪৭ অপরাহ্ন / ২০১
বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে এই শেখ আজগর নস্কর? সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর দৌড়ঝাপ শুরু

বিশেষ প্রতিনিধি,ঢাকাঃ বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে এই শেখ আজগর নস্কর? এই শিরোনামে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশিত হলে নিজেকে বাঁচাতে দৌড়ঝাপ শুরু করেচেন। নিজেকে দুধে ধোয়া তুলশিপাতা বানাতে বর্তমানে মরিয়া হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কয়েকজন বড় বড় নেতার কাছে ধর্না দিচ্ছেন তিনি।

জামায়াত বিএনপির পৃষ্ঠপোষক আজগর নস্কর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিভিন্ন জেলায় কমিটি দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদের অপমান করেছেন শেখ আজগর আলী নস্কর। বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবি লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ আজগর আলী নস্কর। একজন বিহারীর সন্তান। দীর্ঘদিন ঠাকুরগাঁও স্থানীয় বিএনপির কর্মী হয়েও বর্তমানে ভোল পাল্টে হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা। মনে প্রানে জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারন করলেও মুখে বুলি ফুটান জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসাবে।

শেখ আজগর আলী নস্করের বাবা বা কোন ভাইয়ের নামের আগে বা পরে শেখ বা নস্কর না থাকলেও তিনি তার নামের আগে ও পরে শেখ এবং নস্কর দুটি পদ জুড়ে দিয়েছেন। তার এ নামের ব্যাপারেও নানা জনশ্রুতি ও জনগুঞ্জন রয়েছে। শেখ আজগর আলী নস্কর কি করে বাংলাদেশ আওয়ামী মৎসজীবি লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হলেন তা নিয়ে চলছে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা।

শেখ আজগর আলী নস্করের প্রথম জীবনে রাজধানীতে এসে মটর গ্যারেজের হেল্পার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করলেও এখন তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক বলে জনশ্রুতি রয়েছে।একজন  যুবলীগ নেতার হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী কি করে বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবি লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হলেন তা নিয়ে রয়েছে নানা গুঞ্জন। দীর্ঘদিন প্রেম করার পর দিনাজপুরের মিনা মেহের নামে এক মেয়েকে ভালবেসে ১৯৯৬ সালে বিয়ে করেন শেখ আজগর আলী নস্কর। শেখ আজগর আলী নস্কর নিজ চরিত্রের কারনে ২০২১ সালে জোর করে স্ট্যাম্প পেপারে স্ত্রী মিনাকে দিয়ে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেন এবং স্ত্রী মিনাকে জোরপূর্বক তালাক দিয়ে বাসা থেকে মারধোর করে বের করে দেন শেখ আজগর আলী নস্কর।

নিজের রাজনৈতিক অবস্থা বুঝতে পেরে অতি সম্প্রতি তিনি রাজধানীর ফকিরাপুলে আবাসিক হোটেলটি বিক্রি করে দেন। শেখ আজগর আলী নস্কর যে কোন সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন বলেও কয়েকটি সুত্র দাবী করে। ওই সুত্র গুলি আরো দাবী করে ইতিমধ্যে শেখ আজগর আলী নস্করের সকল অপকর্ম তদন্তের জন্য দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও কয়েকটি সাংবাদিক টীম মাঠে নেমেছে। সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়ে বর্তমানে দ্বিগুণ বেপরোয়া হয়ে উঠেন শেখ আজগর আলী নস্কর। বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবি লীগের জেলা ও উপজেলায় কমিটি দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। এছাড়াও মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জামায়াত-শিবির, বিএনপিসহ অনেক বিতর্কিতদের সংগঠনের স্থান করে দেন শেখ আজগর আলী নস্কর। ২০২২ সালে মোটা অংকের বিনিময়ে ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের কাউন্সিলে ১১১ হত্যা মামলার আলোচিত আসামী দেলোয়ারকে সভাপতি করেন শেখ আজগর আলী নস্কর।

জামায়াত বিএনপির পৃষ্ঠপোষক আজগর নস্কর বুদ্ধিজীবী দিবসে কমিটি দিয়ে শহীদের অপমান করা হয়েছেঃ সারাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশ কারীদের ঠেকাতে যেখানে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, সেখানে জামায়াত বিএনপির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তাদের পুর্নবাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন খোদ আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আজগর আলী নস্কর। জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত আজগর নস্কর। এ পর্যন্ত কয়েক শ’ জামায়াত বিএনপির নেতাকে পদায়ন করেছেন মৎস্যজীবী লীগে। এমনটি জানিয়েছ সংগঠনের কয়েজন সিনিয়র নেতা।

তারা জানান, এক সময় জামায়তের পত্রিকা হিসাবে পরিচিত ইনকিলাবে কাজ করতেন বর্তমান কমিটির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক নাসির উল্লাহ নাসির। যিনি এখন আজগর নস্করের অফিসের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছে। নাসির উল্লাহ নাসিরের গ্রামের বাড়ি জামায়তের ঘাটি হিসেবে পরিচিত বি-বাড়িয়া। তিনি জামায়তের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসে সিলেট জেলা কমিটি অনুমোদন দেন শেখ আজগর আলী নস্কর। ওই কমিটিতে সভাপতি করা হয় এম এম নবীকে যিনি জামায়াত পরিবারের সন্তান । টাকার বিনিময় বাগিয়ে নেন ওই সভাপতির পদটি। এ ঘটনায় সিলেট জেলার আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা ক্ষিপ্ত রয়েছেন বলে জানা যায়। সিলেটের আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, কি ভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে কমিটির অনুমোদন দেয়া হলো। বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবি লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক যদি আওয়ামী লীগের প্রকৃত লোক হতেন তাহলে এমন দিনে কমিটি দিতে পরতেন না।

এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবি লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি সহ-সভাপতি নাসরিন আক্তার ও তার স্বামি নুরুল আমিন জামালপুর জেলা বিএনপির নেতা ছিলেন। বর্তমানে তার ছেলে যুবদলের নেতা। বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবি লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল গফ্ফার কুতুবী। তার নিজ জেলা কক্সবাজারারে জামায়তের নাম আসলে প্রথমেই আসে তার পরিবারের নাম। তার পরিবার বাদ দিয়ে জামায়তের রাজনীতি চলে না ওই এলাকায়। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্যজীবী লীগের সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি টাকার বিনিময় ওই পদটি কিনে নেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া গাজীপুর জেলা মৎস্যজীবী লীগের আহবায়ক ও সদস্য সচিব জামায়াত পরিবারের সন্তান। এভাবে আরো অন্তত বিশটি জেলার কমিটি জামায়াত বিএনপির লোকদেরকে পদায়ন করেছেন সংগঠনের সাধরণ সম্পাদক শেখ আজগর আলী নস্কর আর তাকে এই কাজে সার্বিক সহযোগীতা করছেন সংগঠনের কথিত মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান সাঈদ ও বিএনপি প্রেমি সাইফুল আলম মানিক।

সর্বশেষ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের পুর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন তারা। এতে উত্তর মহানগর কমিটির সভাপতি, সাধরণ সম্পাদক দু’জনই বিএনপির নেতা ছিলেন। সভাপতি দেলোয়ার হোসেন আলোচিত সাভারের তাজরিন ফ্যাসন অগ্নিকান্ডে ১১২ হত্যা মামলার আসামি। এছাড়া মহানগর উত্তর আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগে প্রায় সকল নেতাই জামায়াত -বিএনপি ঘরোনার। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মৎস্যজীবী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী মহিদুল ইসলাম ওরফে মইন কাজি মাদারিপুর জেলার শিবচরের যুবদলের কর্মী ছিলেন। আওয়ামী লীগের অফিস পোড়ানো মামলায় তিনি কারাগারেও ছিলেন। শুরুতে এই মইন কাজীকে কাউন্সিল প্রস্তুতি কমটির সদস্য সচিব করেন শেখ  আজগর আলী নস্কর। পরে তার পূর্বের ইতিহাস জানাজানি হলে সম্মেলনে তাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়নি। এরপর মোটা অংকের টাকার বিনিময় তাকে সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ দেয়া হয়। আর এক সহ-সভাপতি ইব্রাহীম খলিল। তিনিও এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০২১ সালের এক চাঁদাবাজি মামলায় জেলে যান। যুগ্ম-সাধরণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি জামায়াত বিএনপি জোট সরকারের আমলে খিলগাঁও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের মামলা দিয়ে ব্যপক হয়রানি করেন। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেন।

কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী লীগে কয়েকজন সহ-সভাপতির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। এখন পর্যন্ত যতগুলো জেলা কমিটি দেয়া হয়েছে তা এই তিন জনের সিদ্ধান্তে।

তারা জানান, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কার্যকরী সভাপতি নিজেদের খেয়াল খুশি মতো যাকে তাকে বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবি লীগের নেতা বানাচ্ছে। এ নিয়ে কয়েকবার কার্যনির্বাহী সভায় বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। অনেকেই পদত্যাগ করার কথা বলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহ-সভাপতি জানান, উত্তরের সভাপতি দেলোয়ারে বিষয় আমরা বার বার আপত্তি করলেও তাকে বাদ দেয়নি শেখ আজগর আলী নস্কর। এছাড়া অন্য দুই নেতাকে উচ্চ মুল্যের উপটৌকন দিয়েছেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মৎস্যজীবী লীগের কয়েকজন সম্পাদক বলেন, দলের যে পরিস্থিতি তাতে আর দল করা যাবে না। কোন কথা তিন নেতার মতের বিরুদ্ধে গেলে হতে হয় অপমান অপদস্থ। গত ২৯ সেপ্টেম্বর কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় ২ জন সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আবুল বাসার ও গফুর চোকদারকে প্রকাশ্যে শারিরিক ভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। তাদের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেয়া হয় এবং তাজরিনের দেলোয়ার তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন তখন ওই তিন নেতা অর্থাৎ সভাপতি সাইদুর রহমান সাঈদ, সাধারণ সম্পাদক শেখ আজগর আলী নস্কর ও কার্যকরী সভাপতি সাইফুল আলম মানিক তাকে নিষেধ করা তো দুরের কথা আরো উৎসাহ দেন। এতে নেতা-কর্মীদের মাঝে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে বলে জানান তারা। শেখ আজগর আলী নস্করের লোকদের কাছে কখন কে লাঞ্ছিত হয় সেই ভয়ে থাকেন তারা।

(চলবে)