• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৭:০৪ অপরাহ্ন

পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে জঙ্গিরা : অর্থের বিনিময়ে ‘কেএনএফ’ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ তালিকা প্রকাশ ৫৫ জনের


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২২, ২০২২, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন / ৮১
পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে জঙ্গিরা : অর্থের বিনিময়ে ‘কেএনএফ’ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ তালিকা প্রকাশ ৫৫ জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাঙামাটি ও বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে জঙ্গিরা। মাসিক ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে সেখানে থাকা কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) একাধিক প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার অর্ধশতাধিক জঙ্গিকে। পাহাড়ে আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনের পাশাপাশি নতুন করে সমতলে নামধারী জঙ্গি সংগঠন গুলো যুক্ত হওয়ায় চরম উৎকণ্ঠায় আছেন স্থানীয়রা। গত ১০ অক্টোবর থেকে জঙ্গি ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযানে নামে যৌথ বাহিনী। ওই দিনই র‌্যাব ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে ৩৮ জঙ্গির নাম প্রকাশ করে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে অস্ত্রগুলোসহ নতুন জঙ্গি সংগঠন হিন্দাল শারক্বিয়ার সাত সদস্য ও কেএনএফের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে যৌথ বাহিনী। তারা হিন্দাল শারক্বিয়ার আমিরের নাম ও শূরা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ছয়জনের নাম বলেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। গতকাল বেলা ১১টায় বান্দরবানে র‌্যাব কার্যালয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া পরিচালক কমান্ডার মো. খন্দকার আল মঈন জানান, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৫৫ যুবককে এ সংগঠনে যুক্ত করেছে।
এই সংগঠনের আমির হলেন আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ। শূরা কমিটির সদস্যরা হলেন দাওয়াতি শাখার প্রধান আবদুল্লাহ মাইমুন, সামরিক শাখার মাসুকুর রহমান, সামরিক শাখার দ্বিতীয় ব্যক্তি মারুফ আহমেদ, অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার মোশারফ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টা শামীম মাফুজ। তাদের প্রশিক্ষণ দিতে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা রাঙামাটি ও বান্দরবান বেছে নিয়েছে তারা। পার্বত্যাঞ্চলে সশস্ত্র সন্ত্রাসী উপজাতি সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সহায়তায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তিন বছরব্যাপী এ প্রশিক্ষণের বিষয়ে ২০২১ সালে কেএনএফের প্রতিষ্ঠাতা নাথান বমের সঙ্গে জঙ্গিদের চুক্তি হয়েছিল। তিনি বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১০ অক্টোবর কেএনএফ ও জঙ্গিদের একটি গোপন আস্তানা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তখন থেকে চলমান অভিযানে গতকাল রাতে সাইজামপাড়া থেকে সাতজন জঙ্গি ও রোয়াংছড়ি বাজার এলাকা থেকে তিন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে নয়টি এসবিবিএল কার্তুজ বন্দুক, ৫০টি গুলি, ৬২টি কার্তুজের খাপ, ছয়টি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), একটি দেশি পিস্তল, একটি ওয়াকিটকি, ইউনিফর্মসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। ১০ জনকে গ্রেফতারের পর আরও সাত জঙ্গির নাম পাওয়া গেছে। গ্রেফতার জঙ্গিরা হলেন পিরোজপুরের শাহ আলমের ছেলে ইমরান হোসাইন ওরফে শাওন (৩১), সুনামগঞ্জের মৃত সৈয়দ আবুল কালামের ছেলে সৈয়দ মারুফ আহমদ ওরফে মানিক (৩১), ঝিনাইদহের মৃত গোলাম কিবরিয়ার ছেলে কাওসার শিশির (৪৬), সিলেট বিয়ানীবাজারের ফয়জুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর আহমেদ ওরফে জনু (২৭), বরিশালের নয়ন মৃধার ছেলে মোহাম্মদ ইব্রাহিম আলী (১৯), সিলেটের আতিকুল আলমের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে বাপ্পী (২৩), সিলেটের চাতকের আবদুস সালামের ছেলে রুফু মিয়া (২৬)। গ্রেফতার কেএনএফের সদস্যরা হলেন রোয়াংছড়ির বাজার এলাকার লালমুন সয় বমের ছেলে জৌথান স্যাং বম (১৯), লালমিন সম বমের ছেলে স্টিফেন বম (১৯) ও জিক বিল বমের ছেলে মালসম বম (২০)। সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, বিভিন্ন সময়ে হিজরতের নামে নিখোঁজ হওয়া তরুণদের মধ্যে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে পার্বত্যাঞ্চলে প্রশিক্ষণের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। সেই তথ্যের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নে এবং ওই ইউনিয়নসংলগ্ন বান্দরবানের রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলায় যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করে। প্রায় দুই সপ্তাহের অভিযানে সাফল্য পাওয়া গেছে। আল মঈন বলেন, অর্থের বিনিময়ে চুক্তির ভিত্তিতে কেএনএফ তাদের গোপন আস্তানায় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। অভিযানে এখন পর্যন্ত তাদের একটি আস্তানা ধ্বংস করা হলেও আরও একাধিক গোপন আস্তানা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভিযানে আজ পর্যন্ত উভয় পক্ষের কেউ হতাহত হননি। যত দিন অভিযান প্রয়োজন, তত দিন পর্যন্ত অভিযান চলবে। অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তির পর তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বেশ কয়েকটি নামধারী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। তার মধ্যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট সংক্ষেপে ইউপিডিএফ, এমএন লারমা অর্থাৎ সংস্কারপন্থি, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, মারমা লিবারেল পার্টি (মগ পার্টি) ও কুকি চিন ফ্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। এবার তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া। পাহাড়ের গহিন বন জঙ্গলকে নিরাপদ আস্তানা হিসেবে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে জঙ্গিরা।

যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন : কমান্ডার মঈন বলেন, আমরা জানতে পেরেছি দেশের কুমিল্লা থেকে ১৫, সিলেট ৭, পটুয়াখালী ৬, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে চারজন করে, বরিশাল ৩, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও ঝালকাঠি থেকে দুজন করে এবং নেত্রকোনা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, মাগুরা, সুনামগঞ্জ, ঝিনাইদহ, টাঙ্গাইল ও চাঁদপুর থেকে একজন করে মোট ৫৫ যুবক জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার যোগদান করেছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, এসব সদস্যকে প্রশিক্ষণের জন্য রাঙামাটি ও বান্দরবানের দুর্গম অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন- মো. দিদার, তাহিয়াত চৌধুরী, আহাদ, মশিউর রহমান, সাখাওয়াত হোসাইন, আরিফুর রহমান, মো. নাঈম হোসেন, শামীম মিয়া, আল আমীন ফকির, আমিনুল ইসলাম, নাজমুল আলম নাহিদ, শেখ আহমদ মামুন, মো. আস সামি রহমান, সাদিক, হাসান সাইদ, বায়েজিত, জুয়েল মুসল্লি, ইমরান বিন রহমান শিথিল, সাইফুল ইসলাম তুহিন, আল-আমীন, ইমরান, শিশির আহমেদ, হাবিবুর রহমান, মুহাম্মেদ, মো. আবু জাফর, যুবায়ের, নিহাল আবদুল্লাহ, মাহমুদ তাকয়া, আমীর হোসেন নাহিদ, সালেহ আহমদ, আবদুস সালাম নীরব, ইয়াছিন বেপারী, মো. মিরাজ সিকদার, ওবায়দুল্লাহ সাকিব, জহিরুল ইসলাম, আবু হুবায়রা, আবুল বাশার মৃধা, আকতার সরদার, রিয়াসাদ রাইয়ান, হোসাইন আহমদ, আবু হুরাইরা, তানজিল রহমান, মো. আল মামুন, নিজাম উদ্দীন হিরণ, আবদুল রাজ্জাক খান, সোহেল মোল্লা, নুর মোহাম্মদ জুয়েল, রায়হান, আল আমিন সরদার, জহিরুল ইসলাম, তাওয়াবুর রহমান, লোকমান, জাকারিয়া, রিয়াজ শেখ। তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন সংগঠনটির প্রধান মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ (আমির)। এ ছাড়া দাওয়াতি শাখার প্রধান আবদুল্লাহ মাইমুন, সামরিক শাখার প্রধান মাসকুর রহমান, সহকারী সামরিক প্রধান মারুফ আহমেদ, অর্থ ও গণমাধ্যম ও সমতল শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক মো. শামীম মাহফুজ। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় আদালতের মাধ্যমে গ্রেফতারদের রাঙামাটি কারাগারে পাঠানো হয়েছে।