• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০২:৫৪ অপরাহ্ন

কুমিল্লায় আবাসিক হোটেল গুলোতে প্রকাশেই চলছে রমরমা পতিতা মাদক ও জুয়াসহ অপরাধীদের ভয়াবহ কর্মকাণ্ড


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০২৩, ২:৩২ পূর্বাহ্ন / ১০২
কুমিল্লায় আবাসিক হোটেল গুলোতে প্রকাশেই চলছে রমরমা পতিতা মাদক ও জুয়াসহ অপরাধীদের ভয়াবহ কর্মকাণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক,কুমিল্লাঃ কুমিল্লা আবাসিক হোটেলগুলোতে চলছে রমরমা যৌন ব্যবসা ও অপরাধীদের ভয়াবহ কর্মকাণ্ড। কে না খায়? নেতা, প্রশাসন, সাংবাদিক সবাইকে ম্যানেজ করেই ব্যবসা করেন তারা প্রতি মাসে ১২ লাখ টাকা মাসোয়ারা দেন জনৈক আবাসিক হোটেল মালিকরা।

কুমিল্লা সেনানীবাসের অদুরে জেলা সদরের আমতলী থেকে কোটবাড়ি বিশ্বরোড পর্যন্ত ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে একাধিক আবাসিক হোটেল নামের পতিতালয়,জুয়া ও মাদকের আখড়া। প্রকাশ্যে দিনরাত ২৪ ঘন্টা মহাসড়কের পাশে মাদক জুয়া ও অনৈতিক দেহব্যবসা সহ নানা অপকর্মের এসব আখড়া এখন ওপেন সিক্রেট। নামে আবাসিক হোটেল হলেও এ সব প্রতিষ্ঠান মুলত অপরাধীদের আখড়া।

প্রাশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী, স্থানীয় নেতা, বখাটে, রংবাজ ও কতিপয় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে প্রকাশ্যেই চলছে নানা অপকর্ম।

করনাকালে বা তার আগে পরে জেলা প্রশাসন, র‌্যাব পুলিশ ও ডিবির অভিযানে বিভিন্ন সময় এ সব আখড়ায় অভিযান পরিচালনা করেছে। সে সব অভিযানে পতিতা, খদ্দের, বিপুল পরিমাণ মাদক ও জুয়ার টাকাসহ আটকও করা হয়েছে অনেককে। তবে অদৃশ্য কারণে দীর্ঘ দিন ধরেই নির্বিঘ্নে অবলিলায় বুক ফুলিয়ে মহাসড়কের পাশে অপকর্মের আখড়া, পতিতালয় চালিয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা।

অবশ্য এ সব অপকর্মের হোতা হোটেল মালিকদের দাবি ভিন্ন, পরিচয় গোপন করে তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় সে সব তথ্যও। তাদের দাবী একেবারে মাগনা এসব ব্যবসা করেন না তারা প্রতি মাসে প্রতিটি আখড়া বা কথিত আবাসিক হোটেল চালাতে মাসোহারা দিতে হয় স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় অসাধু সদস্য, পাতিনেতা, জনপ্রতিনিধি, রংবাজসহ কথিত সাংবাদিকসহ বিশেষ শ্রেনীর লোকজনকে।

আলেখারচর ও ঝাগুজুলি এলাকার এক আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলে তার ভাষ্য, আমরা এ সব মাগনা করি না ব্যবসা, কারে না দেই টাকা, কেডায় না খায়? একটা হোটেল চালাইতে সব মিলাইয়া মাসে ১০/১২ লাখ টাকা মাসোহারা দেই। এলাকার পোলাপান, মেম্বার, নেতা, প্রশাসন, সাংবাদিক কত জনরে দেওয়া লাগে খবর লন গিয়া। তিনি আরো বলেন, নিউজ করবেন করে দেখেন নিউজ করলে কিছু হয়না মিয়া আইসা চা খাইয়া যাইয়েন।

কুমিল্লা সেনানীবাসের ২০০গজ পূ্র্ব থেকে শুরু করে তিন কিলোমিটারের মধ্যেই গড়ে উঠেছে ৮ থেকে ১০টি আবাসিক হোটেল নামের এ সব পতিতালয়। পুলিশি অভিযানের ভয় বা প্রশাসনিক ঝামেলা না হওয়ার মোটামুটি নিশ্চয়তা থাকায় মহাসড়কের পাশের আবাসিক হোটেল নামের পতিতালয় গুলো এক প্রকারে হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী, ডাকাত, জুয়ারি, পতিতা ও মাদক কারবারিদের অভয়ারণ্য। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ সহ নানা কারনে এসব হোটেলে রাত্রীযাপনের জন্য সাধারণত কেউ যাতায়াত করে না।

এছাড়াও বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগের কথাও জানা যায় অনুসন্ধানে, হোটেলের নির্দিষ্ট দালাল চক্রের মাধ্যমে পতিতাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে নানা ভাবে ফুসলিয়ে দরিদ্র নারী ও মেয়েদের ভালো চাকরি ও ইনকামের প্রলোভনে ফেলে কিংবা বিয়ের প্রলোভনে অসহায়, বিপদগ্রস্ত নাবালিকা কিশোরী ও নারীদের এনে এ সব হোটেলে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করে। এ সব আবাসিকে গিয়ে ব্যবসায়ী চাকুরীজীবি, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার নাগরিকদের অনেকেই নানা ভাবে ব্লাকমেইলিং এর শিকার হয়ে হারিয়েছেন সর্বস্ব।

এলাকাবাসীর অভিযোগ শুধু পতিতা মাদক কারবার বা জুয়ার আসরই নয় এসব হোটেলে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীসহ শিশু কিশোরদেরও যাতায়াত করতে দেখা যায়। তাদের দাবি স্থানীয় প্রশাসনেরও এ সব অজানা নয়। প্রতিবাদ করলে উল্টো মামলা হামলা হয়রানির ভয় রয়েছে। অবৈধ টাকার জোরে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট তাদের হয়ে কাজ করে। এছাড়াও প্রতিবাদ করলে উল্টো মিথ্যা নারী নির্যাতন, ধর্ষণের মামলা এবং মাদক দিয়ে ফাঁসানোর ভয়ে কেউ সরাসরি তাদের বাঁধা দেয়ার সাহস করে না।

প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে কি ভাবে এমন অপরাধ করে বহাল তবিয়তে রয়েছে সে বিষয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

আশপাশের এলাকার যুব ও তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করছে জানিয়ে, এসব অপকর্ম বন্ধে স্থানীয় এলাকাবাসী সদর আসনের সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র‌্যাব ও ডিবি সহ সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জোরালো আহ্বান জানান তারা ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় বিগত দু’বছর ধরে কোন অভিযান না হওয়ায় অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এ সব আখড়া গুলো। এর আগে হোটেল বৈশাখী, রাজধানী, অভী, কুমিল্লা হাইওয়েসহ প্রায় প্রতিটি আবাসিক হোটেলেই অভিযান চালিয়ে অনৈতিক ব্যবসাসহ গুরুতর অপরাধ নজরে আসায় সীলগালা করা হয়। আটক করা হয় পতিতা, খদ্দের, মাদক কারবারিসহ আখড়ার কর্মচারীদের, জব্দ করা হয় মাদক ও যৌন উত্তেজক ঔষধসহ বিভিন্ন মালামাল । তবে মুল হোতা হোটেল মালিক ম্যানেজাররা ধরা ছোঁয়র বাইরে থাকায় স্বল্প সময়ে আটককৃতদের জামিনে ছাড়িয়ে এনে আবারো পুরোদমে শুরু করে অপরাধ বাণিজ্য! সীলগালা করা এ সব অবৈধ হোটেলের তালাও খুলে যায় খুব অল্প সময়ে!

অনৈতিক দেহ ব্যবসাই শুধু নয়, কুমিল্লা মহারসড়ক এলাকার ডাকাত, ছিনতাইকারী ও মাদক কারবারিদের নিরাপদ আশ্রয় এ সব আবাসিক হোটেল। তথ্য রয়েছে প্রশাসনিক অভিযান নেই অভয় দিয়ে এসব আবাসিকের কক্ষে নিয়মিত বসে জুয়া ও মাদকের আসর।

অনতিবিলম্বে অবৈধ ও অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনার নিরাপদ আশ্রয়স্থল এসব আবাসিক হোটেলে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা, মুল হোতাদের গ্রেফতার ও অবৈধ ব্যবসা বন্ধে উদ্যোগ নেয়ার দাবী সচেতন নাগরিক সমাজের।