• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ন

রাজধানীর জুরাইন ডিপিডিসি অফিসে ঘুষ না দিলেই গায়েবী মামলা


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ২৮, ২০২৩, ৭:২৩ অপরাহ্ন / ৭১
রাজধানীর জুরাইন ডিপিডিসি অফিসে ঘুষ না দিলেই গায়েবী মামলা

মোঃ রাসেল সরকার,ঢাকাঃ চাহিদা মাফিক ঘুষের টাকা না দিলেই বিদ্যুৎ গ্রাহকদের নামে গায়েবী মামলা দিয়ে তাদেরকে সর্বশান্ত করার খেলায় মেতে উঠেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড (ডিপিডিসি) এনওসিএস-জুরাইনের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ শফিক। ‘ঘটনা সত্য কিংবা মিথ্যা প্রমান হবে আদালতে’ প্রকৌশলী আহমেদ শফিকের এমন নির্দেশনায় তার ঘুষ বানিজ্য সিন্ডিকেটের মুলহোতা সহকারী প্রকৌশলী সাকরুল আলম দনিয়া এলাকার ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিন সরকার ও তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ইমরান হোসেনের নামে ১২জন ভিন্ন ব্যক্তির মিটারের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পাওনা দাবী করে ১২টি গায়েবী মামলা ঠুকে দেন। এনিয়ে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জানা গেছে, কদমতলী থানাধীন দক্ষিণ দনিয়া এলাকার ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিন সরকারের নিজ নামের বিদ্যুতের মিটার ছাড়া অন্য মিটার গুলোর সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। আর ইমরান হোসেন তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মাত্র। তারপরেও ডজনখানেক গায়েবী মামলা দেয়া হয়েছে এই ব্যবসায়ীর নামে। আর এসব গায়েবী মামলার ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা হাতিয়ে নেয়ার প্রতিবাদে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব ও ডিপিডিসির মহাপরিচালক সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন নাছির উদ্দিন ও তার কর্মচারী ইমরান হোসেন। এতে আরো বেশী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে প্রকৌশলী আহমেদ শফিক সিন্ডিকেট। নাছির উদ্দিনকে শায়েস্তা করতে আদা-জল খেয়ে মাঠে নামেন । প্রকৌশলী আহমেদ শফিক সহকারী প্রকৌশলী সাকরুল আলমের নির্দেশে তার অধীনস্ত সুপারভাইজার আশরাফুল ৭/৮ জনের একটি টিম নিয়ে ১৭জানুয়ারী-২০২৩ তারিখ বিকাল ৫টার দিকে ১৪৮৩ দক্ষিণ দনিয়াস্থ ওসমান মিয়ার বাড়ীর বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। বিদ্যুতের কর্মকর্তা আশরাফুল আলম এসময় সোনিয়া নামক এক নারী শ্রমিককে চড়-থাপ্পর মারলে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় এবং জান্নাত বেগম নামের এক মহিলা সোনিয়ার নানী আমেনা বেগমকে খবর দেয়। আর এঘটনায়ও নাছির উদ্দিনকে ১ নাম্বার আসামী করে ৫জনের নামে কদমতলী থানায় মামলা দায়ের করেন প্রকৌশলী আহমেদ শফিক । যদিও নাছির উদ্দিন এঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমান রয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের কর্মকর্তারা সরকারী কর্মকর্তা হওয়ার গরমে পুরো এলাকাজুড়ে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। জুরাইন ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ শফিক বাদী হয়ে কদমতলী থানায় নাছির উদ্দিনের সাথে তারা কর্মচারী ইমরান হোসেন, স্থানীয় বাড়ীওয়ালা একই পরিবারের তিন ভাই ওসমান গংদের সহ ১৫/২০জন অজ্ঞাতকে আসামী করে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের মারধরের আঘাত প্রাপ্ত বৃদ্ধ মহিলা আমেনা বেগম থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ মামলাটি গ্রহন না করায় বিদ্যুতের ওই ৮কর্মকর্তার নামে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।

মামলা বিবরনে জানা গেছে প্রকৌশলী আহমেদ শফিক ও সহকারী প্রকৌশলী সাকরুল আলমের নির্দেশে তার অধীনস্ত সুপারভাইজার আশরাফুল ৭/৮ জনের একটি টিম নিয়ে ১৭জানুয়ারী-২০২৩ তারিখ বিকাল ৫টার দিকে ১৪৮৩ দক্ষিণ দনিয়াস্থ ওসমান মিয়ার বাড়ীর বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। এসময় ঐ বাড়ীর ভাড়াটিয়া সাইফুলের বলপ্রেস করাখানার শ্রমিক সোনিয়া বিদ্যুতের লোকজনের কাছে বিদ্যুতের লাইন কাটার বিষয়টি একাধিকবার জানতে চান। বিদ্যুতের কর্মকর্তা আশরাফুল আলম উত্তেজিত হয়ে সোনিয়াকে সজোড়ে থাপ্পর মেরে মাটিতে ফেলে দেন। সোনিয়াকে মারার খবর শুনে তার নানি আমেনা বেগম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তার নাতনিকে মারার কারন জানতে চান এবং বিদ্যুতের গাড়ীর সামনে দাড়িয়ে থাকেন। ফলে বিদ্যুতের লোকেরা গাড়ী উপর দিয়ে উঠিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েও তাকে সরাতে পারেনা। বিষয়টি মামলার আসামী আশরাফুল মোবাইল ফোনে অফিসের প্রকৌশলী আহমেদ শফিক ও সাকরুলের সাথে আলোচনা করে বাশের লাঠি হাতে নিয়ে গাড়ী থেকে নেমে এসে আমেনা বেগমকে এলোপাথারী চর-থাপ্পর দেয়া সহ লাঠি দিয়ে পিটুনি দেন। এসময় স্থানীয় জনতা বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের থামানো চেষ্টা করলেও তাদের উপরও চড়াও হয়ে উঠেন। অতপর স্থানীয় জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদেরকে ধাওয়া করলে তাঁরা আহত আমেনাকে ফেলে রেখে দ্রুত চলে যায়। আর এই ঘটনাটিতেও নাছির উদ্দিন সরকারকে হুকুমের আসামী করে মামলা দায়ের করেন প্রকৌশলী আহমেদ শফিক।

সুত্র জানায়, এই মামলায় নাছির উদ্দিন সরকারকে জড়ানোর মুল উদ্দেশ্য হলো নাছির উদ্দিন সরকার ইতিমধ্যে এসব কর্মকর্তার ঘুষ বানিজ্য ও নিজের নামের গায়েবী মামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ দিয়েছেন। সেই অভিযোগের সঠিক তদন্ত হলে অকর্মকারী কর্মকর্তাদের নিশ্চিত শাস্তি হবে। ফলে নাছির উদ্দিন সরকারকে দমন করতে এই মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড (ডিপিডিসি) এনওসিএস-জুরাইন এর নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ শফিক, সহকারী প্রকৌশলী সাকরুল আলম, সহকারী প্রকৌশলী খাইরুল বাশার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল ফারুক আফ্রাদ, উপ-সহকারী প্রকৌশলী এস এম কামাল হোসেন, সাবস্টেশন ইঞ্জিনিয়ার আরাফাত ও সিএসএস সুপারভাইজার সাদ্দাম হোসেন গং একে অপরের যোগসাজসে ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিনকে হয়রানি করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার উদেশ্যে তার নামে ৮টি এবং তার কর্মচারী মো: ইমরান হোসেনের নামে ১২টি মিথ্যা মামলা/ভুতুরে মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় নাছির উদ্দিন বিচারকের জারিকৃত সমন প্রাপ্ত হয়ে নির্ধারিত সময়ে হাজিরা দেন। পাশাপাশি এসব ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের মাননীয় সচিব ও ডিপিডিসির মহাপরিচালক সহ বিভিন্ন দপ্তরে দায়ের করা হয়। কিন্তু অভিযোগ দেয়ার পর গায়েবী মামলার বাদী সহকারী প্রকৌশলী সাকরুল আলম উক্ত বিষয়ে অবগত হয়ে ডিপিডিসির হেড অফিস থেকে টাস্কফোর্স টিম নিয়ে ৭নভেম্বর-২০২২ তারিখে নাছির উদ্দিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে অভিযান পরিচালন করে। অভিযানকালে টাস্কফোর্স টিম নাছিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে কোন অনিয়ম না পেয়ে চলে যাওয়ার সময় সহকারী প্রকৌশলী সাকরুল আলম পরবর্তীতে ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়ে আসবেন বলে হুমকি প্রদান করে। আর হুমকি অনুযায়ী তারা নিজেরাই অপকর্ম ঘটিয়ে আবারো নাছির উদ্দিন সরকারকে জড়িয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে ১২টি গায়েবী মামলার নথিসুত্রে প্রকৃত মিটার মালিকের স্বাক্ষাতকার গ্রহন করা হয়। যার মধ্যে সিআর-১৯৪/২২নং মামলায় উল্লেখিত বিদ্যুতের মিটার নং-ডিএইচকেই-৬৭১৮ এর মালিক এমআইটি ইলেকট্রিক প্রোডাক্টসের সত্ত্বাধিকারী বাবুল হোসেন। তিনি ২২৩১৯০০০নং গ্রাহক হিসেবে নিজেই এই মিটারটি ব্যবহার করে নিয়মিত বিল পরিশোধ করেন। এই মিটারের সাথে নাছির উদ্দিন বা ইমরান হোসেনে কোন সম্পর্ক নেই বলে জানান। অথচ এই মিটারে ১লাখ ৫৪ হাজার ২৩ টাকা বকেয়া আছে এবং মিটারের ব্যবহারকারী নাছির উদ্দিন ও ইমরান হোসেন উল্লেখ করে মামলা করেন সহকারী প্রকৌশলী সাকরুল আলম। আর এই মামলায় স্বাক্ষী প্রদান করেন জুরাইন ডিপিডিসির উপ-সহকারী প্রকৌশলী এস এম কামাল হোসেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল ফারুক আফ্রাদ ও সুপারভাইজার সাদ্দাম হোসেন। যদিও স্বাক্ষী হিসেবে মিটারের মালিক বাবুল হোসেনের নাম প্রথমেই থাকার প্রয়োজন ছিলো অথবা নাছিরের বিরুদ্ধে তার কোন অভিযোগের ভিত্তিতে এমন মামলা হতে পারতো। যেখানে মিটারের মালিক বাবুল বলছেন তার মিটারের সাথে নাছির উদ্দিন ও ইমরানের কোন ধরনের সম্পর্ক নেই সেখানে এধরনের মামলা কেন করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ শফিক অনেকটাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং লাগামহীন কথাবার্তা বলতে থাকেন। কোন প্রশ্ন থাকলে লিখিতভাবে জানানোর পরামর্শ দেন।

ডিপিডিসি সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, নাছির উদ্দিনের নামে ৮টি গায়েবী মামলায় অন্তত ২৫ লাখ টাকার বকেয়া বিল পাওনা দেখানো হয়েছে। ডিপিডিসির কর্মকর্তাদের মুল টার্গেট হলো তার কাছ থেকে কৌশলে ৫/৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া। কারন মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে নাছির উদ্দিন আদালত পর্যন্ত দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় ক্লান্ত হয়ে প্রকৌশলী আহমেদ শফিকের দরবারে যেতে বাধ্য হবে। সেই সুযোগে প্রকৌশলী শফিক সিন্ডিকেট ঝামেলা মিমাংসা করার নাটক দেখিয়ে নাছিরের নিকট থেকে ৫/৭ লাখ টাকা ঘুষ বাবদ হাতিয়ে নিবেন অনায়াসে। ঘুষ দিলে এই কর্মকর্তারাই আবার প্রতিবেদন লিখবেন নাছিরের নামে ভুলবশত এধরন মামলা করা হয়ে ছিলো, সে এই ঘটনার সাথে জড়িত নয়। জুরাইন ডিপিডিসির অধীনে ঘুষের বিনিময়ে সমাধান করা এধরনে অসংখ্য মামলা রয়েছে। যেগুলোর নথিপত্র অনুযায়ী তদন্ত করলেই সত্যতা পাওয়া যাবে।

ভুক্তভোগি নাছিরউদ্দিন বলেন, ডিপিডিসির কর্মকর্তারা ইতিপূর্বে আমার এলাকায় অনেকের সাথেই এধরেন ঝামেলা করেছে। মাঝে মধ্যে প্রতিবাদ করেছি। একারেন আমাকে শায়েস্তা করা উদ্দেশ্যে এতো গুলো গায়েবী মামলা দিয়েছে। এখন আবার এই মামলাটিতে জড়িয়েছে। এই মামলার ঘটনার সাথে আমার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। আমি অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি‌। তাছাড়া আমি মিটারের ব্যবহারকারী হয়ে থাকলে আমার নামে মামলা হতে পারতো, কিন্তু আমার কর্মচারী ইমরানের নামে কেন মামলা দেয়া হলো। একজন কর্মকর্তাও এই প্রশ্নের উত্তর দিবে না। তারা আপনার সাথে কথাই বলবে না। তাদের ইচ্ছে মাফিক সব কিছু হতে হবে। নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ শফিক সিন্ডিকেটের মিথ্যার জালে বন্দি হয়ে শাররিক মানসিক ও আর্থিকভাবে চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছি। এই অফিসের কর্মকর্তারা উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে আমাকে ধ্বংস করা খেলায় মেতে উঠেছে।