• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৭:১৪ পূর্বাহ্ন

সাংবাদিক আর সাংবাদিকতার ভিন্নরুপ


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ৪, ২০২৩, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন / ১২৪
সাংবাদিক আর সাংবাদিকতার ভিন্নরুপ

আওরঙ্গজেব কামালঃ বর্তমানে সাংবাদিক আর সাংবাদিকতার ভিন্নরুপ ব্যপক লক্ষনীয়। গোটা সমাজ আজ এ বিষয়ে চিন্তিত। দ্বিধাগ্রহস্ত সংবাদ মাধ্যম নিয়ে জনসাধারন আতংকৃত। সাংবাদিকতা এখন যেন ভিন্নরুপে দাঁড়িয়েছে। একদিকে রাজনৈতিক চাপ অপরদিকে সাংবাদিকরা সাংবাদিকতাকে ভিন্নরুপে চর্চা করছে। সাংবাদিকতাকে পূঁজি করে ভিন্ন পেশার লোক এই পেশাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। নানা বিধ অপকর্ম সাধন করে তারা নিবিঘ্নে তাদের মিশন বাস্তবায়ন করে চলছেন। ফলে জাতীর বিবেক আজ নানা ভাবে পদ দলিত হচ্ছে। প্রকৃত সাংবাদিকরা অনেকেই কোন ঠাঁসা হয়ে পড়েছে । তথা সাংবাদিক সমাজ আজ হুমকীর মুখে। সাংবাদিক আর সাংবাদিকতা এক নয়। গলায় আইডি কার্ড ঝোলালে সাংবাদিক হওয়া যায়না । সংবাদপত্র কিংবা গণমাধ্যমে যারা কাজ করেন তারা কি প্রত্যেকেই সাংবাদিক ? বাস্তবে সাংবাদিকতা পেশার সকল পেশাজীবীই হয়ে উঠতে পারেন না প্রকৃত সাংবাদিক। তাই ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্তরা কোন কোন সাংবাদিককে ক্ষাণিকটা অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। সংবাদপত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চতুর্থ স্তম্ভ।
সাংবাদিক হতে হলে অবশ্যই তালে সাংবাদ লিখতে হবে এবং সাংবাদিকতা বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। সাংবাদিকতার প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো তাকে সব বিষয় সম্পর্কে কিছু কিছু জ্ঞানতে হবে। সাংবাদিক হচ্ছেন ‘জ্যাক অব অল ট্রেড মাস্টার অব নান। এই ধারণা এখন অবিকল আর কার্যকর বলে মনে হয় না। সাংবাদিকতায় কৌশল ও বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান দুটোই অত্যন্ত জরুরি। সাংবাদিকতা ক্রমেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পরিবর্তনশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে। প্রতিনিয়ত সাংবাদিকতার ধরন ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন হচ্ছে। তাই সাংবাদিকতা পেশার বিষয়ে জানতে হবে প্রতিটি সাংবাদিককে। এখন বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকতা পেশার ধরন আমূল পাল্টে গেছে। সংবাদপত্র এখন আর টিভি ও অন লাইন সাংবাদিকতার সঙ্গে পেরে উঠছে না। তাছাড়া সংবাদপত্র প্রকাশ করাও এখন অনেক ব্যয়বহুল ব্যাপার হয়ে উঠেছে। তবে সংবাদপত্রের ভবিষ্যতের স্বার্থেই এখন সাংবাদিকতায় ‘বিশেষজ্ঞতার প্রয়োজন হয়ে উঠেছে। সাংবাদিকতা কে কিছু সাংবাদিকদের কারনে কতিপয় মানুষ ভিন্ন চোখে দেখলেও সাংবাদিকতা এখনও বেশ সমৃদ্ধ। বৈচিত্র্যময়। এখন সময় এসেছে বিশেষজ্ঞ সাংবাদিকতার। আমাদের তৈরি করতে হবে নানা বিষয়ে ‘বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক। সব সাংবাদিকেরই নানা বিষয়ে জ্ঞান বা ধারণা থাকবে। কিন্ত আজকাল সাংবাদিকতার পেশা হচ্ছে যেন ’নিজেকে নিজে বড় করে দেখা’র অবস্থা্। নিজের স্বার্থের কারনে অপর সাংবাদিককে ছোট করে দেখা। নানা স্বার্থে সংবাদপত্রকে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে; সৎ সাংবাদিকদের বিতর্কিত করা হচ্ছে; মহান পেশার আদর্শ উদ্দেশ্য উল্টে দেয়া হচ্ছে। সাংবাদিকতা বাণিজ্যের ভিড়ে সংবাদপত্র এবং প্রকৃত সাংবাদিকরা অপসৃয়মাণ। মর্যাদা সম্পন্ন পেশা দিনদিন মর্যাদা হারাচ্ছে। শূদ্ধতার মাঝে ঢুকে পরেছে নাম সর্বস্ব অপ-সাংবাদিকতা। অশিক্ষিত, কুশিক্ষিতরা অর্থের বিনিময়ে পত্রিকার পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে মোটর বাইকে সাংবাদিক লিখে,গলায় কার্ড ঝুলিয়ে নানা বিধ সুযোগ নিয়ে হরদম প্রতরণায় করছে। যা সাংবাদিকতা আর সংবাদপত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ। গুটি কয়েক নামধারী সাংবাদিকের কারণে সংবাদপত্র আজ মর্যাদা হারাচ্ছে। আসলে সমস্যাটা কোথায়? দেশে হরেদরে সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহারের সুযোগ সংবাদপত্রের মানহানী করছে। এসব কার্ডধারী সাংবাদিকরা নিজেরা সংবাদ তৈরী করতে পারে না।অথচ অপারের সংবাদ কপি বা নকল করে ফেসবুকে প্রচার করে নিজেদের সাংবাদিক হিসাবে জাহির করে। যে কারনে মানুষ সাংবাদিকদের সাংঘাতিক বলতে দিধাবোধ করছে না। এটাই কি সাংবাদিকতা ? আসলে কিন্তু তা নয়, সাংবাদিকতা হচ্ছে একটি মহান পেশা যাদের রিপোর্টের উপর নির্ভর করে একটি কমিউনিটি, একটি জাতি, একটি দেশ। তাদের বিশ্বস্থ রিপোর্টের উপর বিশ্বাস করেই জনগণ যেমন জানতে পারে তাদের আকাঙ্খিত বিভিন্ন খবরাখবর, জানতে পারে রাষ্ট্রের ভালো মন্দের খবর। জনগণের বিশ্বস্ত বন্ধু হচ্ছেন সাংবাদিক সমাজ। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই সাংবাদিকদের স্থান সবার উপরে। যে কারনে সকলে বলে একমাত্র সাংবাদিক ছাড়া বিশ্বের আর কাউকে ভয় করি না। সুতরাং সহজেই বুঝা যায় একজন সাংবাদিকের কলমের জোর কত ধারালো। এ জন্যই বলা হয় পেন ইজ মাইটার দ্যান দা সোয়ার্ড”, তরবারীর চেয়েও কলম শক্তিশালী। আজকেই এই ডিজিটাল জমানায় পদার্পন করে আমরা পেয়েছি হোয়াটসঅ্যাপ, ফেইসবুক সহ বিভিন্ন ধরণের সুযোগ সুবিধা যার মাধ্যমে স্বাধীন ভাবে নিজেদের মতামত জনগণের কাছে অতি সহজেই এবং অল্প সময়ের মধ্যেই পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌছে দিতে পারি লেখনি এবং ভিডিও’র মাধ্যমে। যে কারনে সাংবাদিকরাও কাজে লাগাতে পারছেন সকল সুবিধা। কিছু না জেনেও তারা সাংবাদিক হয়ে যাচ্ছে। কিছু সংখ্যক ইয়াং জেনারেশনের কথিত সাংবাদিকরা নিজেদেরআত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে সাংবাদিক সমাজকে যেমন কলুষিত করছে, ঠিক একই ভাবে সাংবাদিক নামধারী একটি গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ আদায়ের জন্য অবৈধ ভাবে টাকা রোজগারের লক্ষ্যে কাজে লাগিয়ে সৎ সাংবাদিকতার মূল্যায়ণকে কলঙ্কিত করেছে। এখন এদের দৌরাত্ম চরমে পৌঁছে গেছে। সারা দেশে সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে আশংকাজনক হারে বেড়েছে কথিত সাংবাদিকদের দৌরাত্ম। এরা মিডিয়ার মালিকে ভূল বুঝিয়ে টাকার আইডি কার্ড সংগ্রহ করে যানবাহনের স্টিকার লাগিয়ে নানাবিধ অবৈধ্য পন্থায় লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমন নীতিহীন কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। গুজব ও অপপ্রচার বাড়িয়েছে। তাদের এই কর্মকান্ডে পেশাদার সাংবাদিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংবাদ মাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব ‘সাংবাদিক’দের দায় নিতে হচ্ছে প্রকৃত সাংবাদিকদের। আমি জানি সাংবাদিক হতে কোন সুনির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে না। হুট করেই সাংবাদিক হয়ে যেতে পারে যে কেউ। না, এক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতাও কোন বিষয় নয়। সু-শিক্ষিত ও মানসম্পন্ন সাংবাদিক ও কলামিস্ট এদেশে অনেকেই আছেন, যারা তাদের ক্ষুরধার ও বুদ্ধিদীপ্ত লেখনী দ্বারা সমাজের অনেক অসঙ্গতি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলে আমাদেরকে সমাজ- সচেতন করে তোলেন প্রায়শই। সেই গুটিকয় নমস্য সাংবাদিকের সাথে মিশে গেছে সাংবাদিক নামধারী (লেবাসধারী) কিছু নর্দমার কীট; আসলে এরাই বর্তমানে সংখ্যায় বেশি। এসব অপ-সাংবাদিকতা ইদানীং সাংঘাতিক রকম বেড়ে গেছে। অপ-সাংবাদিক সৃষ্টি এক ধরনের সাংবাদিকতা নির্যাতন। আমরা চাই, সাংবাদিকতা পেশা যেন আগের সৎ ও নির্ভীক চেহারায় ফিরে আসে। যারা সাংবাদিকতার মতো মহান পেশাকে প্রশ্নবৃদ্ধ করছে তাদের কে বয়কট করতে হবে। সাংবাদিকতা একটি স্পর্শকাতর পেশা। আর এখন পত্রিকা বিক্রেতাও নাকি সাংবাদিক। ঠিকমতো নিজের নাম ঠিকানা লিখতে জানে না এমন লোক সাংবাদিক বনে যাচ্ছে রাতারাতি।বিচিত্র ঐ দেশে এটাও স্বাভাবিক। এদের রাহু গ্রাস থেকে সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের বেরিয়ে আসতে হবে। সময় এসেছে এদেরকে চিহ্নিত করবার। এরা আসলে সমাজ সুব্যবস্থার শত্রু। আসুন, আমরা এদের একে একে চিহ্নিত করে এদের মুখোশ উন্মোচন করি আর স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে এদের প্রতিহত করি। হয়ে উঠি দায়িত্ববান পেশাদার সাংবাদিক । প্রকৃত পক্ষে আমাদের দেশে যারা প্রথমত সাংবাদিকতা পেশায় আসে তাদের অনেকেরই প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকে একজন নামকরা সাংবাদিক হওয়ার। কিন্তু এক পর্যায়ে সেটি নষ্ট হয়ে যায় বিভিন্ন মিডিয়া অফিসের কারণে। দিনের পর দিন হয়তো একজন সাংবাদিক ভালো রিপোর্ট করছে কিন্তু ন্যূনতমভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে সম্মানী পাওয়া প্রয়োজন তা কি সে পাচ্ছে, হয়ত না। আর প্রতিষ্ঠানে আছে নানান রাজনীতি। ফলে অনেক আশা নিয়ে সাংবাদিকতা পেশায় আসে একদিন তার মধ্যে ব্যাপক হতাশা তৈরি হয়। ফলে মনের দুঃখে একদিন সাংবাদিকতাকে সে চাকুরি বানিয়ে ফেলে। এরপর আর ওই সংবাদকর্মী অসৎ হতেও দ্বিধা কিংবা কুণ্ঠাবোধ করে না। আমরা এর পরিবর্তন চাই।আমি সর্বশেষ আবারো বলছি-সাংবাদিকতা কোন চাকরি নয়, এটি এক ধরনের দায়ীত্ব। এ এ দায়ীত্ব ভালো কিছু করার। পৃথিবীর আর কোন পেশাতেই এতো স্বাধীনতা ও মানুষের জন্য কিছু করার এমন সুযোগ আর পাওয়া যায় না যেটি কিনা এই পেশায় পাওয়া যায় । কেননা আমি জানি এই দায়ীত্ব কতোটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। আর সেই কারণেই আমি আজীবন সংবাদের সাথে যুক্ত থাকতে চেষ্টা করি। বুঝাতে চেষ্টা করি প্রকৃত ভাবে এই পেশাকে ভাল বাসতে। অর্থ উপর্জনের জন্য এই পেশা কে ব্যবহার না করার জন্য। পরিশেষে বলবো, সকলে জাগ্রত হবে প্রকৃত সাংবাদিকতার মান রক্ষায় । পেশাজীবি হিসেবে একজন সাংবাদিকের কাজই হবে সাংবাদিকতায় সহায়তা করা। অপসাংবাদিকতা থেকে বেরিয়ে নীতি স্বচ্ছ, ইতিবাচক, গণমুখী ও দায়িত্বশীল হবে প্রত্যাশিত সাংবাদিকতা এটাই কাম্য । সাংবাদিকের কাজে কর্মে ও ব্যবহারে দেশের সাংবাদিক সমাজকে অনুপ্রাণিত ও কর্তব্যনিষ্ঠ করে তুলবে এটাই প্রত্যাশা।

লেখক ও গবেষকঃ
আওরঙ্গজেব কামাল
সভাপতি
ঢাকা প্রেস ক্লাব