• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০০ অপরাহ্ন

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার এখন লাইফ সাপোর্টে


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩, ১২:১৬ পূর্বাহ্ন / ১৩৯
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার এখন লাইফ সাপোর্টে

গণমাধ্যম বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আমাদের মৌলিক অধিকার। দেশ সকল নাগরিকদের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রযোজ্য । স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এখন বিপন্ন। কিন্ত বর্তমানে সাংবাদিক,সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার এখন লাইফ সাপের্ট রয়েছে। হয়তো পূর্বে থেকে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছিল গনমাধ্যম গুলিকে। দেশের প্রতিটি কোণে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ঘোর বিপন্ন! তার মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা আইন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এখন কোমায় ঘোরপাক খাচ্ছে। সাংবাদিকরা যেন বোবা । ভয়ে কেহ মুখ খুলছে না। প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় এখন সাংবাদিকতা কোথায় দাড়াবে? এ বিষয়ে অবশ্যই সাংবাদিকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। আমি মনে করি শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। এ আইনে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সকল সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সংশোধনের দাবি করছি। সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে তা আগের মতো সাংবাদিক নির্যাতন ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ারে পরিণত হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। আমি মনে করি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেওয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়াল-খুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত একধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেওয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এ ছাড়া আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা এবং সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের কারাদণ্ড ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা সাংবাদিকতাকে একেবারে তলানীতে নামিয়ে দেবে। আমি আবাও এ ধারা সংশোধনের দাবি জানায়।বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় এক ধাপ পিছিয়েছে। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৩তম, স্কোর ৩৫ দশমিক ৩১। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর বারবার আঘাত করা হয়েছে৷এবার সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিককে একেবারে নিচুতে নামিয়ে দিয়েছে। সংবাদপত্র একটি অতি সংবেদনশীল এবং শক্তিমান প্রচার মাধ্যম। বর্তমান ইলেকট্র্নিক মিডিয়ার অভাবনীয় অগ্রগতির পরও এই শিল্পের গুরুত্ব অথবা চাহিদা কোনক্রমেই কমেনি বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। আধুনিক সভ্যতার অক্ষরালোকিত কোন সমাজ বা জাতি সংবাদপত্রহীন জীবন কখনও কল্পনা করতে পারে না। অথচ এই অতি সংবেদনশীল এবং শক্তিমান প্রচার মাধ্যম কেন তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবে। আমরা তো এ জন্যে দেশটা স্বাধীন করেনি। সংবিধান সাংবাদিকদের ক্ষমতা দিয়েছে। এ দেশের সংবিধানে সীমাহীন ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। চিন্তা ও চৈতন্যের স্বাধীনতা প্রদানেও এদেশের সংবিধান কার্পণ্য করেনি। এটি ১৯৭৮ সালে প্রণীত ইউনেস্কোর গণমাধ্যম ঘোষণার সাথে সম্পর্কশীল। যেখানে বিশ্ব শান্তি ও সহমর্মিতা অব্যাহত রাখার স্বার্থে, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা সংরক্ষণে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। তবে আমাদের সংবিধানের মতো শর্তহীন স্বাধীনতা পৃথিবীর অনেক দেশের সংবিধানে স্বীকৃত নয়। এতসত্ত্বেও স্বাধীনতার পর এদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর কতইনা বিপত্তি এসেছিল তার ইয়ত্তা নেই। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে এদেশে সে সময়ে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর মারাত্মক নিপীড়ন ও হুমকি উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি গণতন্ত্র ও জাতীয় উন্নয়নের জন্য শুভ লক্ষণ না। সংবাদপত্র কে অনুশাসনের নামে তার স্বাধীনতার ওপর আঘাত । যে কারনে আমি মনে করি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন লাইভ সাপোর্টে রয়েছে। বর্তমানে শুধু স্বাস্থ্যবান রয়েছে চাটুকারিতা সাংবাদিকের সাংবাদিকতা। এরা বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। এদের কারনে সাংবাদিকতায় পেশাদারত্ব অর্জনে বাংলাদেশ কি পিছিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে চাটুকারিতাও এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে পেশাদার চাটুকাররা লজ্জা পায়। গণমাধ্যম এখন সংবাদকর্মীদের হাতে নেই। যারা গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে তার অদিকাংশ ব্যবসায়ী। নিজেদের ব্যবসা রক্ষার জন্য পত্রিকা বা মিডিয়া তৈরী করেছে। সরকারের সাথে তালমিলিয়ে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করছে। এবিষয়ে সচেতন জনেরা বলছেন,রাজনৈতিক নেতারা চান সাংবাদিকেরা যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়। যেন কারো বিরুদ্ধে কিছু লিখতে না পারেন, তাই সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। তারা মনে করেন সাংবাদিকদের সত্যিকার অর্থে যে তাঁদের ভূমিকা জনগণ আশা করে, সেটা সব সময় সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয় না। কারণ একটাই, এ দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই, মানুষের কোনো অধিকার নেই। সাংবাদিকেরা সুযোগ পেলে আসল চিত্রটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। তাই সকলের ভয় সামনে নির্বাচনে সাংবাদিকরা কি লেখে। আমি দেখেছি ক্ষমতাসীন শক্তির আচরণে সাংবাদিক এবং সাংবাদিকতার ধারা ও আদর্শ যে বদলে যায়।বর্তমানে সেটা চলছে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হয়েছে খবর জানার ক্ষেত্রে জনসাধারন। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস বলেছেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের ভিত্তি। অথচ আজ বিশ্বের প্রতিটি কোণে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আক্রমণের মুখে, বিপন্ন। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই নীতিটি যে মুদ্রিত এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, বিশেষত প্রকাশিত উপকরণগুলি সহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার ও মত প্রকাশের স্বাধীনভাবে ব্যবহার করার অধিকার হিসাবে বিবেচিত হওয়া উচিত। এই জাতীয় স্বাধীনতা একটি উচ্চমানের রাষ্ট্র থেকে হস্তক্ষেপের অনুপস্থিতিকে বোঝায়; সাংবিধানিক বা অন্যান্য আইনী সুরক্ষার মাধ্যমে এর সংরক্ষণের চেষ্টা করা যেতে পারে।ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশিরভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না । তাই পরিশেষ বলবো সরবার যেন সাংবাদিকদের প্রতি সুদৃষ্টি দেয়। যেন সাংবাদিকরা তাদের ঐতিয্য ধরে রাখতে পারে।

(আওরঙ্গজেব কামাল,লেখক ও গবেষক)