• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৩ অপরাহ্ন

এবার কোরবানির ঈদে চাঁপাই সম্রাটের দাম ৩০ লাখ টাকা


প্রকাশের সময় : জুন ৩০, ২০২২, ২:১১ অপরাহ্ন / ২৬৩
এবার কোরবানির ঈদে চাঁপাই সম্রাটের দাম ৩০ লাখ টাকা

এস এম রুবেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ ছোট থেকেই গরু পালনের শখ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের হাজারবিঘি চাঁদপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য জুলফিকার আলীর। এরই ধারাবাহিকতায় তার বাড়িতে গত ৫ বছর আগে একটি ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী থেকে একটি বাছুর জন্ম নেয়। অন্যান্য বাছুরের থেকে আকার-আকৃতিতে বড় ও শান্ত স্বভাবের হওয়ায় বাছুরটি ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা করেন জুলফিকার আলী।

গত ৫ বছর ধরে লালন-পালন করছেন কালো রঙের একটি ষাড়। খাবার, দৈহিক গঠন ও সর্বোচ্চ ওজনের জন্য গরুর মালিক তার নাম রাখেন “চাঁপাই সম্রাট”। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে স্বপ্ন দেখছেন জুলফিকার। বিশেষ বৈশিষ্ট্যের বিশালদেহী এই গরু চাঁপাই সম্রাটকে দেখতে ভীড় করছেন গ্রাম ও দুর দুরান্ত থেকে আসা অনেক মানুষ। প্রাণীসম্পদ বিভাগ বলছে এখন পর্যন্ত চাঁপাই সম্রাটই জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় ষাড়।

গতবছর ঢাকার গাবতলী গরুর হাট নিয়ে গেলেও গরুটি বিক্রি হয়নি। এবছর ষাড়টিকে বিক্রির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। গরুর মালিক জুলফিকার আলী ৪০-৪২ মণ বা প্রায় ১৭০০ কেজির চাঁপাই সম্রাটের দাম হাঁকিয়েছেন ৩০ লাখ টাকা। বাড়িতেই দামেদরে মিলে গেলে বিক্রি করতে চান তিনি। যদি তা না হয় সেক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকার গরুর হাটে এই গরু নিয়ে যেতে চান জুলফিকার আলী।

গরুর মালিক সাবেক ইউপি সদস্য জুলফিকার আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাঁপাই সম্রাট নামের সাথে মিশে আছে গরুটির আচার-ব্যবহার ও তার নানা বৈশিষ্ট্য। হাটা-চলা, নম্র-ভদ্র ও নাজুক প্রকৃতির হওয়ায় তার এই নাম রাখা হয়েছে। গত ৫ বছর ধরে প্রাকৃতিক উপায়ে খাবার ও ঘাষ খাওয়ানোর মাধ্যমে পরম মমতায় বড় করেছি চাঁপাই সম্রাটকে। গরুটির পেছনো প্রতিদিন ব্যয় করা হয় ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা। ফিতার মাপে চাঁপাই সম্রাটের ওজন ধরা হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ মণ।

তিনি আরও বলেন, অত্যান্ত কষ্ট করে স্নেহ মমতা দিয়ে ও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে গরুটি এতো বড় করেছি। কিন্তু আমি যদি নায্য মূল্য না পায়, তাহলে আমার মতো খামারিরা এমন গরু পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তাই সরকারি সহায়তা কামনা করছি।

পাশের এলাকা কানসাট থেকে ভ্যানচালক আব্দুল হালিম ও ভোলামারি থেকে তোজাম্মেল হক বিশালদেহী গরুটি একনজর দেখতে এসেছিলেন। তারা জানান, এতোবড় গরু জীবনেও দেখিনি। মানুষের মুখে চাঁপাই সম্রাট গরুর কথা শুনে দেখতে এসেছি। দেখতে ভালোই লাগল। চোখ জুড়িয়ে গেছে আমাদের। গরুটির হাঁটা-চলা, খাওয়া স্যতিই অন্য গরুর থেকে আলাদা বলেই তার নামের স্বার্থকতা রয়েছে।

পাশের গ্রাম থেকে গরুটি দেখতে এসেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ৭০ বছরের জীবনে এতোবড় গরু আর দেখেনি। সবার মতোই আমিও গরুটি দেখতে এসেছিলাম। খুবই ভালো লাগল। খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারলাম, শখের বসে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে চাঁপাই সম্রাটকে লালন-পালন করেছেন সাবেক ইউপি সদস্য জুলফিকার আলী। কিন্তু সে তার গরুর নায্যমূল্য পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন। কারন সীমান্তবর্তী এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামে তার বাড়ি। সরকারিভাবে গরুটি ঢাকা বা চট্রগ্রাম নিয়ে গিয়ে বিক্রির ব্যবস্থা করার দাবি জানান এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

গরুর মালিক জুলফিকার আলীর পাশে বাড়ি স্কুলশিক্ষক গোলাম মোস্তফার। তিনি জানান, প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন একনজর গরুটি দেখতে আসছে। পরিস্থিতি এমন যে, চিড়িয়াখানার মতো করে লাইন ধরে গরু দেখছে দর্শনার্থীরা। গরুটি এতো বিশালদেহী যে মনে হচ্ছে, শুধুমাত্র একটি ষুড় থাকলেও হাতি বলে চালিয়ে দেয়া যেত। ছোট্ট বাছুর থেকেই জুলফিকার আলী ও তার পরিবারের সদস্যদের দেখেছি, সন্তানের মতো লালন-পালন করেছে গরুটিকে।

জুলফিকার আলীর ছেলে জোবায়ের মাহমুদ বলেন, আমি স্কুলে পড়াশোনা করি। এর বাইরে সময় পেলেই তার দেখাশোনা ও পরিচর্যা করি। আমরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে খৈল, ঘাস, ভূসি খাওয়ানোর মাধ্যমে তাকে পালন করি। এছাড়াও ফল হিসেবে পাঁকা আম ও কলা খেতে দেয়। সকালে ও বিকেলে দুইবার গোসল করায়। রাতে যাতে মশা না লাগে তাই মশারী টাঙিয়ে রাখি। এমনকি দিনরাত সবসময় ফ্যান চালিয়ে রাখি।

গরুমালিক জুলফিকার আলীর স্ত্রী মোসা. রহিমা বেগম জানান, গত পাঁচ বছর ধরে নিজের সন্তানের মতো করে লালনপালন করেছি চাঁপাই সম্রাটকে। খুব কষ্ট হচ্ছে যে, তাকে বিক্রি করতে হবে। কারন তার প্রতি অদ্ভুত এক মায়া তৈরি হয়ে গেছে। আশা করি, আমাদের কষ্টের ফল হিসেবে গরুটির নায্যমূল্য পাব।

শিবগঞ্জ উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রনজিৎ চন্দ্র সিংহ বলেন,এমন ধরনের গরু যেসব খামারিরা পালন করে থাকে, আমরা তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করি। জুলফিকার আলী সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে গরুটি লালন-পালন করেছেন। এমনকি এখন পর্যন্ত তার এই চাঁপাই সম্রাট গরুটিই জেলার সবচেয়ে বড় গরু। তার এই গরুটি বাজারজাত করতে অনলাইন ও অফলাইন দুই উপায়েই প্রাণীসম্পদ অফিস থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা আশা করি, এই কুরবানীর ঈদে নায্যমূল্যে জুলফিকার আলী তার গরুটি বিক্রি করতে পারবেন।