বিনোদন প্রতিবেদকঃ নাট্যাভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক এবং নাট্যনির্মাতা আদিব হাসান, অভিনেতা আরশ খান এবং ফখরুল বাসার মাসুমের সঙ্গে একটি নাটকের শুটিং স্পটে অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে মিডিয়া এখন বেশ সরগরম। এটা নিয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিষোদগার চলছে। আগামীকাল (১৩ আগস্ট) বিষয়টি নিয়ে অভিনয় শিল্পী সংঘের মীমাংসায় বসার কথা রয়েছে। এর ঠিক দুই দিন আগে ওই দিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রায় ১২ মিনিটের একটি অডিও বক্তব্য দিয়েছেন অভিনেত্রী চমক।
নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক তার বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, সবকিছু সুষ্ঠুভাবে মীমাংসা হয়ে যাওয়ার পর কথা বলতে চেয়েছিলাম। বিষয়টি তাই ডিরেক্টর্স গিল্ড ও অভিনয় শিল্পী সংঘে লিখিত আকারে জানানো হয়েছে। শিল্পী সংঘের পক্ষ থেকে মীমাংসার আগে আমাকে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে মানা করা হয়েছিল। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে জড়িত একটি পক্ষ একের পর এক মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। তাই আমার আর চুপ করে থাকার সুযোগ রইলো না।
প্রথম অভিযোগ প্রসঙ্গে বলি আরশ বলেছে, ওর কাছ থেকে বাজে প্রস্তাব পেলে কেনো আমি কাজ করতে রাজি হলাম ? আরশ আমার খুবই ভালো বন্ধু ছিলো। কিন্তু একটা সময়ে সে বন্ধত্বের চেয়ে বেশি কিছু দাবি করে। ইন্ডাস্ট্রির আরও কয়েকজন নায়িকার কাছ থেকে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পারি। আমি যখন এসব জানতে পারি, তখন তো বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি সম্পর্ক, যেটা সে গড়তে চেয়েছিলো – তাতে রাজি হইনি। ওকে আমি জানিয়ে দেই নেক্সট টাইম এভাবে হ্যারাজ করলে তার সাথে কাজ করবো না। তখন সে বললো, প্রফেশনালি আমরা কাজ করবো। তোমাকে কোনো বিষয় নিয়ে ডিস্টার্ব করবো না। তারপরও কিছু কিছু ডিরেক্টর আরশের সাথে বেশি কাজের জন্য ডেট চায়; তখন বলি মাসে একটা বা দুইটা কাজ করবো। এত বেশি না। তখন আরশের আমার প্রতি ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। আরশ বলেছে আমি কেনো আগের রাতে তাকে বাসায় নামিয়ে দিতে গিয়েছিলাম। এখানে সে না থেকে যদি একজন প্রোডাকশন বয়ও হতো তাকে লিফট দিতাম।
চমক আরশের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, ওই রাতে গাড়ি থেকে নামার সময় আরশ বলছিলো, চমক তুমি আমার অলিখিত প্রেমিকা। ‘অলিখিত প্রেমিকা’ টার্মটি সে ব্যবহার করেছে। তখন আমি তাকে বলেছি, তোমার আমার বন্ধুত্বের সম্পর্কের জন্য কাজটি করতে রাজি হয়েছি। এর বাইরে কিছু হলে আমি কাজ করবো না। আমাকে বিব্রত করার জন্য এমন করেছে সে। পরেরদিন বলা হচ্ছে আমি দেরী করে সেটে গিয়েছি। অথচ আমি যাওয়ারও এক ঘন্টা পর আরশ সেটে গিয়েছে। আরশ সকালে ফোন দিচ্ছিলো। কাজের বাইরে ইমপ্রোপারলি টাচ করার বিষয়টি তার মাঝে ছিলো। আমি তাকে বললাম, সকাল থেকে তুমি আমাকে ফোন দিচ্ছো কেন ? আর্টিস্ট কো-অর্ডিনেটের দায়িত্ব ডিরেক্টরের। তুমি তো আর্টিস্ট কো-অর্ডিনেটর না। তখন সে ক্ষেপে গেলো। বলছিলো তাকে অসম্মান করতে পারি না। সে বলছে, অন্য আর্টিস্টরা একে অন্যকে ফোন দিতে পারে না ? অবশ্যই পারে, যদি কমফোর্ট জোন থাকে। ওর সাথে আমার সেই অবস্থা ছিলো না। কারণ আগের রাতে সে আমাকে বলেছে, অলিখিত প্রেমিকা। সেখান থেকেই তর্কাতর্কি শুরু হয়। আরশের সাথে ডিরেক্টরের ভালো সম্পর্ক। আরশ তাকে প্রভাবিত করার ফলে তিনি আমার সাথে অপমানমূলক কথা বলেন। আমি কাজ না করে বেরিয়ে যেতে চাইলে ডিরেক্টর আদিব হাসান ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে যেতে বলে।
নির্মাতা আদিব হাসান সম্পর্কে চমক তার বক্তব্যে বলেন, নির্মাতা আদিব হাসান আমাকে বলেন, তার একটা ফোন কলে নাকি উত্তরার সব ছেলেপেলে চলে আসবে। তিনি আমাকে জিম্মি করে টাকা দাবি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি পুলিশ ডাকার কথা বলি। তখন আদিব হাসান বলছেন, আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমি জানতে চাই তিনি অল্প সময়ের মধ্যে কোন হসপিটালে চিকিৎসা নিয়েছেন। একটু পর সুস্থ হয়ে সেটে আসেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেটের সবাই আমার বিরুদ্ধে ক্ষেপে যায়। আমি চিল্লাপাল্লা করায় নাকি আদিব হাসান অসুস্থ হয়ে পড়েছেন – এমন কথা বলা শুরু করে। তাদের উসকে দিয়ে আমার বিপরীতে নিয়ে যাওয়ার কাজ আরশ করেছে।
চমক আরশ খানের ওই ঘটনার সময়কার ভূমিকা নিয়ে বলেন, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে সে এই কাজটি করেছে। আমি তাই লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। থানায় জিডিও করেছি। আমি পুলিশ ডাকার পর তারা রেগে যাচ্ছিলো। মাসুম বাশার আঙ্কেলের মেয়ে অভিযোগ করেছে, আমি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছি, তার বাবাকে মারতে গিয়েছি। আমি এটিকে ভয়ঙ্কর মিথ্যাচার বলবো। পুলিশ আসার পর কেনো সেটা বলা হলো না ? উল্টো তারা রিয়্যাক্ট করলো, সেটে অযাচিত ঘটনা ঘটেছে। আমি নিরাপত্তার জন্য তো পুলিশ ডাকতেই পারি ? এটা নিয়ে তারা বড় ইস্যু তৈরি করছে। মাসুম আঙ্কেল বলছেন, পুলিশ ডেকে নাকি তাকে অপমান করেছি। আমি পুলিশের সাথে আজও কথা বলেছি।
তারা বলেছেন, চমক কেনো ভয় পাচ্ছে এ বিষয়ে তারা প্রশ্ন করেছেন। এটা কি পুলিশ করতে পারে না ?
যখন পুলিশ আমাকে নিয়ে বের হয়ে যেতে চান, তখন তারা বলে এখানে টাকা – পয়সার মামলা আছে উনাকে নিয়ে বের হতে পারবেন না। পুলিশও ওখানে এক দেড় ঘন্টা ছিলো। ওরা বলেছে, ডিরেক্টর গিল্ডস থেকে লোক আসছে, মীমাংসা করে বের হবেন। আমি তখন অসুস্থ হয়ে পড়ছিলাম। আগের দিনও আমি অসুস্থবোধ করছিলাম। আগের দিন সেটে ডিরেক্টর ১০-১২ জন গুন্ডা টাইপ ছেলে নিয়ে এসেছিলো। এটা কি শোভন ? পরদিন হুমকি দেন। এরপরও কি আমি পুলিশ ডাকবো না ?
শিল্পী সংঘের সাথে আমার কথা হয়েছিলো। সেদিন শুক্রবার ছিলো। তারা ব্যক্তিগত কাজে হয়তো ব্যস্ত ছিলেন। তবুও ব্যস্ততার মাঝে এক দেড় ঘন্টার মধ্যে এসেছেন। আমি কি এ সময় হুমকির মধ্যে থাকবো নাকি দুই মিনিট দূরত্বের পুলিশ ডাকবো ? আমি এমন সিচুয়েশন কখনো ফেইস করিনি। ভয়ে পুলিশ ডাকি। আরশ পরবর্তীতে বিষয়টি আমার বিপক্ষে নিয়ে যায়। মাসুম বাসার আঙ্কেল বাকি গল্প জানেন না। আমি তখন ডিরেক্টরের সাথে চিল্লাপাল্লা করছিলাম। আমার টোন উঁচুতে ওঠা। এটা দেখে উনি ক্ষেপে যান। আমি বলছি, সেটে ঝগড়া হচ্ছিলো। কিন্তু মাসুম আঙ্কেলের সাথে না। আমার সাথে তার চিল্লাপাল্লা হয়। সে পক্ষ থেকেও হয়। তিনি বয়স্ক একজন লোক। তার সামনে চিল্লাপাল্লা হলে বেয়াদবি। এজন্য আমি স্যরি। কিন্তু তাকে মারতে গিয়েছি – এটা বড় ধরনের মিথ্যাচার।
আপনার মতামত লিখুন :