• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ক্লিনিকের লাইসেন্স আবেদনে জালিয়াতি


প্রকাশের সময় : জুন ২৩, ২০২২, ৭:০৬ অপরাহ্ন / ১৩৯
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ক্লিনিকের লাইসেন্স আবেদনে জালিয়াতি

এসএম রুবেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ ক্লিনিকের লাইসেন্স করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদনে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের জমিলা হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে।সরেজমিন পরিদর্শনে আবেদনের দেয়া তথ্যের কোন মিল নেই। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনলাইন আবেদনে তিনজন চিকিৎসকের নাম প্রদান করা হলেও সেখানে তারা কর্মরত নেই। এছাড়াও সেখানে নেই ওয়াসরুম, জেনারেটর, ল্যাবের পরীক্ষা-নিরীক্ষার আদর্শ মান, হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশের ছাড়পত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

এমনকি ল্যাব, আলট্রাসোনোগ্রাম ও এক্স-রে কক্ষের নিদিষ্ট আয়তন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক না থাকলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আবেদনে তা সঠিক রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে জমিলা হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অথচ এসবের কোন সঠিক মানের বালাই নেয় সেখানে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবদনের প্রেক্ষিতে বুধবার (২২ জুন) জমিলা হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করেন, সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুর রশীদ।

জানা যায়,স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় গত ২৮ মে নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অভিযান পরিচালনা করে লাইসেন্স না থাকায় জমিলা হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। পরে লাইসেন্সের আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু আবেদনে ব্যাপক মিথ্যা তথ্য দিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে জমিলা হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লাইসেন্সের আবেদন ৩ জন চিকিৎসকের নাম উল্লেখ করেছে জমিলা হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। তারা হলেন- ডাক্তার হাসান জুলকার নাইন,শেখ রাকিবুল হাসান ও ডাক্তার শফিকুল ইসলাম। অথচ শফিকুল ইসলাম বর্তমানে নাচোলের অন্য একটি ক্লিনিকে কর্মরত রয়েছেন। তার সাথে মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়াও বাকি দুজন ডাক্তার রাকিবুল হাসান ও জুলকার নাইনের যেই দুটি নম্বর আবেদনপত্রে দেয়া আছে তা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা হয়না।

নার্সদের তালিকায় জমিলা হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার উল্লেখ করেছে ৬ জনের নাম। নার্সিং বিষয়ে তাদের সকলেরই কমপক্ষে তিন বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে করা আবেদনপত্রে থাকা মোবাইল নম্বরে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। প্রথমেই নাম রয়েছে মরিয়ম খাতুনের। মুঠোফোনে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার বাড়ি নাটোর এবং তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোন ক্লিনিকে তিনি নার্স হিসেবে কর্মরত নেই। এছাড়াও আরও দুই নার্সের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

আবেদনপত্রে উল্লেখ রয়েছে আয়েশা খাতুন নামে এক নার্সের। মুঠোফোনে তিনি জানান, তিনি কোন ক্লিনিকে কর্মরত নেই। শুধুমাত্র নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সের কাজ করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আবেদনপত্রে তার নিজের নাম থাকা নিয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লাইসেন্সের আবেদনে তিনজন পরিছন্ন কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন- শাকলা, শ্রী হিরা, শ্রী মতি মায়া রান। তাদের সকলের জন্য একটিই ফোন নাম্বার দেয়া হয়েছে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মতি মায়া রান জানান, তিনি কোনদিন জমিলা হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার কখনও কোন কাজ করেননি।

এবিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে জমিলা হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মো. রুবেল আলী জানান, সকল নিয়ম মেনেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। চিকিৎসক ও অন্যান্য লোকজনের নাম দেয়া নিয়ে তিনি বলেন, এসব বিষয় যেকোন সময় পরিবর্তনশীল। তাই যেই ডাক্তার বা নার্সের নাম দেয়া হয়েছে, তারা অন্য সময়ে নাও থাকতে পারেন।

সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুর রশীদ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লাইসেন্সের জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার জমিলা হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করেছি। পরিদর্শনে যা পাওয়া গেছে, সে অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দেয়া হবে। এর পরই তাদের লাইসেন্স পাওয়া নিয়ে সিধান্ত আসবে।