• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন

সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের হোতা আবুল কালামকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩


প্রকাশের সময় : জুলাই ১৯, ২০২২, ১:১৪ পূর্বাহ্ন / ১৩০
সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের হোতা আবুল কালামকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩

মোঃ রাসেল সরকারঃ দীর্ঘদিন বেকার থাকা যুবকদের মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরি দেয়ার কথা বলে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে নিতেন প্রতারক চক্রের হোতা মো: আবুল কালাম (৪১)। বাকি টাকা ভিসা-বিএমইটি কার্ড প্রদান ও বিদেশে পৌঁছানোর পর দিলেই হবে।

সহজ-সরল বিদেশ গমনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের ভিসা ও বিএমইটি কার্ড দিয়ে চক্রটি নিশ্চিত করে আর কোনো সমস্যা নেই। ওই কাগজপত্র নিয়ে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে যাওয়ার পর তাদের ফিরিয়ে দিয়ে বলা হয়, এসব ভিসা-বিএমটি কার্ড সবই ভুয়া। এসব ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে প্রায় ৩০০ জনের সাথে প্রতারণা করে আসছিল মানবপাচারকারী চক্রের মূল হোতা আবুল কালাম।

তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে তিন কোটি টাকা। অথচ আবুল কালাম এই ব্যবসা করার জন্য জনশক্তি রফতানির কোনো লাইসেন্স নেয়নি। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বেকার যুবক-যুবতীদের ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড দিয়ে প্রতারণা করত এই চক্র।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গত রোববার রাতে রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের হোতা মো: আবুল কালামকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে ১৪টি পাসপোর্ট, ছয়টি নকল বিএমইটি কার্ড, আর্থিক লেনদেনের বিভিন্ন লেজার, রেজিস্ট্রার ও ডায়েরি জব্দ করা হয়।

রাজধানীর কাওরানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে গতকাল সোমবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, কয়েকজন ভিকটিমের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ জানতে পারে, পল্টন এলাকায় একটি মানবপাচার ও প্রতারক চক্র মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে পাঠানোর নামে প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড সরবরাহ করে বেকার যুবক-যুবতীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের সর্বস্বান্ত করেছে।

সহজ-সরল এসব লোক ভুয়া ভিসা ও বিএমইটি কার্ড বিমানবন্দরে প্রদর্শন করার পর ইমেগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের ভিসা ও বিএমইটি কার্ড জাল হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়। এরকম কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ গোয়েন্দারা নজরদারি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে।

প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেফতার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতার আবুল কালাম মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। তার জনশক্তি রফতানির কোনো লাইসেন্স নেই। কিন্তু সে দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রফতানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক প্রেরণ করে আসছে।

ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে প্রতিকার চাইলে গ্রেফতার আসামি তাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। গত তিন বছরে চক্রটি অবৈধভাবে অর্ধশতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করে। যারা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অন্য দিকে এই চক্র তিন শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে বুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড সরবরাহ করে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, গ্রেফতার আবুল কালাম চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে ২০০৪ সালে ফ্রি ভিসায় দুবাই গিয়ে দর্জি হিসেবে কাজ শুরু করে। মালিকের সাথে মনোমালিন্য হওয়ায় ২০১১ সালে সে দেশে ফিরে আসে। এরপর তার এলাকায় দর্জি ব্যবসা করার চেষ্টা করে সফল না হওয়ায় ২০১৯ সাল থেকে অবৈধভাবে বিদেশে জনশক্তি প্রেরণের নামে প্রতারণা শুরু করে।

সে প্রথমে ভিকটিমদের ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাসপোর্ট ও প্রাথমিক খরচ বাবদ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করে নেয়। এরপর ভিসা, টিকিট, মেডিক্যাল, বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদি খরচ দেখিয়ে ধাপে ধাপে ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে থাকে। একপর্যায়ে ভিকটিমের আস্থা অর্জনের জন্য দুই-একজনকে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই প্রেরণ করে এবং ভিকটিমদের স্থায়ী ঠিকানা সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে নিবন্ধন করতে বলে। তবে এই নিবন্ধন বিএমইটি কার্ড পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা বহন করে না। কিন্তু ভিকটিমরা তাদের অজ্ঞতার কারণে ওই নিবন্ধনকেই বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্তির চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে মনে করেন।

এরপর ভিকটিমদের ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে ফ্লাইটের জন্য পুনরায় টাকা দাবি করে। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করে আবুল কালাম।