• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২১ অপরাহ্ন

পাসের নিশ্চয়তা দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি


প্রকাশের সময় : মে ২০, ২০২২, ১০:৫৩ অপরাহ্ন / ১৩৯
পাসের নিশ্চয়তা দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বুধবার (১৮ মে) রাত ১টার দিকে র‍্যাব-২-এর একটি দল রাজধানী ও তার আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন মো. ইকবাল হোসেন (৪২), রমিজ মৃধা (৩০), মো. নজরুল ইসলাম (৫০) ও মো. মোদাচ্ছের হোসেন।

এ সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল, ব্যাটারি, ইনভিজিবল ব্লুটুথ কিট, ভিআইপি স্মার্ট ডিভাইস, নগদ টাকা, প্রথম ধাপের প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও সমাধান জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর কাওরান বাজার র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

খন্দকার আল মঈন জানান, বিদেশ থেকে আনা এই ডিজিটাল ডিভাইসগুলো মূলত দুইটি অংশে বিভক্ত। ডিভাইসটির একটি অংশ ইয়ার পিস। এটি পরীক্ষার্থীদের কানের ভেতর এবং অটোমেটিক কল রিসিভ হওয়া সিম লাগানো অপর অংশটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে তাদের পরীক্ষার হলে প্রবেশ করাত। পরে পরীক্ষার্থীরা নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের নিকট পাঠাত। প্রতারক চক্রটি প্রশ্নপত্রের উত্তর দেওয়ার জন্য পূর্ব থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি টিম প্রস্তুত রাখত। অতঃপর এই চক্রের সদস্যরা পরীক্ষার হল থেকে পাঠানো প্রশ্নপত্রের উত্তরসমূহ মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত টিমের মাধ্যমে খুঁজে বের করে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের বলে দিত।

গণমাধ্যম শাখার পরিচালক জানান, গ্রেফতাররা প্রথমে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি নিয়োগ পরীক্ষা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। পরে ওই নিয়োগ পরীক্ষার পরীক্ষা নেওয়ার স্থান ও পরীক্ষার গার্ড সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। এ সময় চক্রের অন্য সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের খুঁজে বের করে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় পাস ও চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তার মাধ্যমে প্রলোভন দেখাতেন। আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইসগুলো দিয়ে এর ব্যবহার বিধি প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রাথমিকভাবে ১ থেকে ২ দুই লাখ টাকা জামানত হিসেবে গ্রহণ করতেন। অবশিষ্ট টাকা চাকরি পাওয়ার পরে পরিশোধ করবে মর্মে চুক্তি করতেন। এভাবে তারা কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানান, প্রতারক চক্রটির মূল হোতা মো. ইকবাল হোসেন ২০০৮ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি নিজ এলাকায় শিক্ষকতা করার সময় ২০১৫ সালে একই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী আলতাফ হোসেন নামক এক ব্যক্তির সাথে পরিচয়ের সূত্রে এই প্রতারণার বিষয়টি রপ্ত করেন। করোনা মহামারির সময় আলতাফ হোসেন মারা গেলে ইকবাল হোসেন এই প্রতারক চক্রটি পরিচালনা করা শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানায় একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা ও বেশ কয়েকটি সাধারণ ডায়েরি রয়েছে।

খন্দকার আল মঈন আরও জানান,গ্রেফতার রমিজ এই প্রতারক চক্রের অন্যতম সহযোগী এবং একটি হত্যা মামলার পলাতক আসামি। পলাতক অবস্থায় ২০২০ সালে ইকবালের তার সঙ্গে পরিচয় হয় তার।

অন্যদিকে গ্রেফতার নজরুল ১৯৯৪ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরিতে যোগদান করেন। নজরুল এবং রমিজ পূর্বপরিচিত। নজরুল দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাধারণ চাকরি প্রার্থীদের ইকবাল ও রমিজের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতেন। এছাড়া বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার সময়, স্থান ও পরীক্ষায় গার্ড খুঁজে বের করার দায়িত্ব পালন করতেন।

গ্রেফতার মোদাচ্ছের মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সমাজসেবাকর্মী হিসেবে ২০১৯ সালে অবসরে যান। তিনি ইকবালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন।