• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৭:২৯ অপরাহ্ন

নানামুখী চ্যালেঞ্জ নিয়েই মাঠে থাকে  ট্রাফিক পুলিশ


প্রকাশের সময় : মে ১১, ২০২৩, ৩:৩০ অপরাহ্ন / ৪১
নানামুখী চ্যালেঞ্জ নিয়েই মাঠে থাকে  ট্রাফিক পুলিশ

বিশেষ প্রতিবেদকঃ দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ বাহিনী। আইনি যেকোনও সমস্যা, সংকট বা বিপদে নাগরিকদের প্রথম ভরসা বাংলাদেশ পুলিশ। নাগরিকদের নিরাপত্তায় শহর থেকে গ্রামে সবখানে দিনরাত দায়িত্ব পালন করে চলেছেন পুলিশ সদস্যরা। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে, পুলিশ আছে জনতার পাশে এই স্লোগান নিয়ে নানা ধরনের সেবা দিচ্ছে বাহিনীটি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশে সৃষ্টি করা হয়েছে নানা ধরনের ইউনিট। তবে যানবাহন, স্বাস্থ্য, জনবল ও লজিস্টিকসহ নানা সংকটে জর্জরিত বিশাল এই বাহিনী। সে সব সংকট নিয়েই সিরিজ প্রতিবেদন পুলিশের কষ্ট। সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ সঙ্গে নিয়েই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীতে কম ধারণ ক্ষমতার সড়কে বেশি যানবাহন, ফুটপাত দখল, নিয়ন্ত্রণহীন মাত্রাতিরিক্ত রিকশা চলাচল, দক্ষ চালকের অভাব ও পর্যাপ্ত বাস স্টপেজ না থাকা, যত্রতত্র যাত্রী তোলা-নামানো সহ নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাদের। এছাড়াও ট্রাফিক টেকনিক্যাল ইউনিট না থাকা ও ত্রুটিপূর্ণ ট্রাফিক সিগন্যালও রাজধানীর যানজটের বড় সমস্যা।

ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, রাজধানীতে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে চলাচল করছে বিপুল সংখ্যক মোটর সাইকেল। এর ফলে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে। প্রতি মাসে রাজধানীতে গড়ে ২৫ থেকে ৩০টির মতো বড় দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা শহরের অধিকাংশ সড়কই উত্তর-দক্ষিণমুখী। পূর্ব-পশ্চিমমুখী সড়ক খুব একটা না থাকায় রাজধানীর সড়ক গুলোতে যান চলাচলে চাপ লেগেই থাকে। তার ওপর রয়েছে ট্রাফিক বিভাগের ফোর্স ও সার্জেন্টদের স্বল্পতা। এছাড়া মূল সড়কের পাশে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ছাড়াই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শপিং মল এবং পেট্রোল পাম্প গড়ে উঠেছে যা রাজধানীর যানজটকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাজধানীর সড়কে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ৪০০ যানবাহন যুক্ত হচ্ছে উল্লেখ করে ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা মহানগরীতে ৮টি ট্রাফিক বিভাগে ৪ হাজার ২১১ জন জনবল থাকার কথা। অথচ সেখানে বর্তমানে জনবল রয়েছে ৩ হাজার ৯৩০ জন। জনবলের ঘাটতি রয়েছে ২৮১ জনের মতো। আটটি ট্রাফিক বিভাগে পাঁচটি বেতার চ্যানেলে প্রায় ১ হাজার ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে। ৭৫৩ জন ট্রাফিক অফিসার পিওএস পয়েন্ট ওভার সার্ভিস মেশিন দিয়ে অনলাইনে প্রসিকিউশন দিয়ে মামলা করছে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন ইন্টারসেকশন এন্ট্রি ও এক্সিট পয়েন্ট ও ফ্লাইওভারে স্থাপিত ৬২৫টি স্থায়ী সিসি ক্যামেরা দিয়ে ডেল্টা থ্রি ট্রাফিক অব শোরুম ডিসি ও এসি কার্যালয় থেকে মনিটরিং করা হয়ে থাকে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, রাস্তায় ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি করতে হলে সিটি করপোরেশনকে অবশ্যই রাস্তা ও ফুটপাতকে ব্যবহার উপযোগী রাখতে হবে। ট্রাফিক সিগন্যাল এবং রোড সাইনগুলো সার্বক্ষণিক দৃশ্যমান রাখা জরুরি। পথচারীদের রাস্তায় চলাচলে নিয়ম মানার প্রবণতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে ট্রাফিক বিভাগকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। বিভিন্ন সময় সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা এবং সুপারিশ আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী, কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। মোটরসাইকেল বেপরোয়া চলাচল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়াও জরুরি হয়ে পড়েছে।

দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলছেন, গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে রোড ফ্র্যাঞ্চাইজির বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং মাসিক ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় সচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নগরীর ব্যস্ততম বিভিন্ন জায়গায় গুলশান ও হাতিরঝিলের মতো চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করলে, নগরবাসী এর সুফল পাবে। বিশেষ করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নীতিমালাও বাস্তবায়ন খুবই জরুরি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গেলে একটি বিষয় সবসময় উঠে আসে, যেটি হচ্ছে কোনও সার্জেন্ট কোনও গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিলে, তার বিরুদ্ধে ‘খারাপ ব্যবহার’ এর অভিযোগ তোলা হয়। আর মামলা না দিলে তার ‘ব্যবহার ভালো’ বলে উল্লেখ করেন অনেকেই। এছাড়া সড়কে পার্কিং করা গাড়ি সরাতে গেলে গাড়ির মালিক ও চালকের সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ জন্য প্রত্যেক সার্জেন্টের গায়ে বডি ওর্ন ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। ক্যামেরাগুলো চালু রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ট্রাফিক সার্জেন্টদের।