• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন

ধনুকের মতো বাঁকা দৃষ্টিনন্দন মধুমতি সেতুটি এখন ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের স্থান


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১৭, ২০২২, ১১:০৯ অপরাহ্ন / ৭৬
ধনুকের মতো বাঁকা দৃষ্টিনন্দন মধুমতি সেতুটি এখন ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের স্থান

মোস্তাইন বীন ইদ্রিস (চঞ্চল),নড়াইল থেকে ফিরে : গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা ও নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা সীমানা দিয়ে মধুমতি নদী প্রবাহিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সোমবার মধুমতি নদীর উপর এই সেতু উদ্বোধন করেন। তারপর থেকেই ধনুকের মতো বাঁকা দৃষ্টিনন্দন মধুমতি সেতুটি গোপালগঞ্জ, নড়াইল, ফরিদপুরসহ আশপাশের জেলার মানুষের কাছে এখন ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের স্থানে পরিনত হয়েছে। প্রতিদিন সকাল-বিকেল বিভিন্ন বয়সের মানুষ সেতু দেখতে আসছেন। মধুমতি নদীতে নৌকা ভ্রমণ করছেন। এই সেতু এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। সেতুটি পড়েছে গোপালগঞ্জ জেলার মধ্যে। তাই টোলপ্লাজা গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ করছে। সেতুকে ঘিরে গোপালগঞ্জে ও নড়াইল জেলার মধুমতি নদীর চরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে বলে মত দিয়েছেন স্থানীয়রা।

ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গার শিক্ষক দম্পতি আহমেদ চৌধুরী ও শিরিনা চৌধুরীর সঙ্গে সেতু এলাকায় কথা হয়। তাঁরা সেতু দেখতে এসেছেন জানিয়ে বলেন, দৃষ্টিনন্দন মধুমতি সেতু মধুমতি নদীর কালনা পয়েন্টে নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুটি মধুমতি নদীর শোভা আরো বৃদ্ধি করেছে। নদীতে নৌ-বিহার করে এই সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এছাড়া সেতুতে ঘোরাফেরা করে ভাল সময় কেটেছে। এটি আমাদের জাতীয় স্থাপনা। এটির নির্মাণ শৈলী আমাদের মুগ্ধ করেছে।

নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলা সদরের চিকিৎসক দম্পতি রিফাত আরা ও তানভীর আহমেদ উদ্বোধনের দিন সকালে এসে সেতুতে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনী তাদের উঠতে দেয়নি। তানভীর বলেন- উদ্বোধনের পর উঠেছি। অনুভূতি ব্যক্ত করার মত নয়। রিফাত আরা বলেন, এই স্থাপনা আমদের গর্ব। এই সেতু কালনা ঘাটে আমাদের দুর্ভোগ লাঘব করেছে। এখানে আমাদের মতো আরো অনেকেই ভ্রমণে আসেন। এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠার সম্ভবনা রয়েছে।

লোহাগড়ার হিবজুর রহমান ও বিথি রহমান দম্পতির মধ্যে ওই সেতু নিয়ে অন্যরকম আবেগ কাজ করছে। তারা বলেন, এখানে ভ্রমণে এসে শান্তি পাই। মধুমতি নদীর হওয়া প্রাণ জুড়ায়। এক সময় যখন কালনা ঘাটে ফেরী ছিল, তখন ঘন্টার পর ঘন্টা ঘাটে বসে থাকতে হত। তখন বিড়ম্বনার মধ্যে মধুমতির হাওয়া ভাল লাগত না। শুধু দুর্ভোগ মনে হত। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু করে দিয়েছেন। টোল দিয়ে সেতু পার হতে মাত্র ৫ মিনিট সময় লাগে। দুর্ভোগ নেই। এই চিন্তায় মধুমতির হাওয়া এখন খুবই মধুর। তাই এখানে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও নড়াইলসহ আশপাশের জেলার মানুষ ভ্রমণে আসছেন।

নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান এম এম শরিফুল আলম বলেন, এই সেতু আমাদের পরম পাওয়া। আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতু করে দিয়েছেন। এইজন্য তাঁর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। সেতু চালুর পর সেতু এলাকায় ভ্রমণ পিপাসুদের ভিড় বেড়েছে।

নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আইয়ুব আলী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, মধুমতি সেতু আমাদের এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রসারিত করবে। নড়াইলে নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠবে। এছাড়া মধুমতির চরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠার অপার সম্ভবনা সৃষ্টি হয়েছে।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান শিকদার আব্দুল হান্নান বলেন, মধুমতি সেতু ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলাকে বেনাপোল স্থল বন্দর ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে এই সেতু। ৬ লেনের এমন সেতু প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় সম্ভব হয়েছে।

নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, এই সেতু আমাদের অন্যরকম এক আবেগের জায়গা। নড়াইলবাসীর জন্য এক অনন্য পাওয়া। এ সেতু নড়াইলবাসীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বার সুগম করে দিয়েছে। এই সেতু এক সময়ে ছোট করে নির্মাণের প্রস্তাব গিয়েছিল একনেকে। প্রধানমন্ত্রী সেই ফাইল ফিরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ওই সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। জাপানের সহায়তায় বিশাল ব্যতিক্রমী ভাবে ওই সেতু তৈরি হবে। আগামীর সুন্দর ও উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রত্যয়ে এটাই প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতা।