• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন

ঢাকার কেরানীগঞ্জে পরিচ্ছন্নতার অন্তরালে আওয়ামী লীগ নেতা দাদনের চাঁদাবাজি


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ২, ২০২৩, ৮:৫৩ অপরাহ্ন / ৭২
ঢাকার কেরানীগঞ্জে পরিচ্ছন্নতার অন্তরালে আওয়ামী লীগ নেতা দাদনের চাঁদাবাজি

মোঃ রাসেল সরকার,ঢাকাঃ ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় শ্রমিকলীগ নেতা এমদাদুল হক দাদনের বিরুদ্ধে বর্জ্য-ময়লা পরিষ্কারের নামে মোট অংকের চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আইন-কানুন বা কোন ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের মনগড়া নিয়মে কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদের শেল্টারে দাদনের এই চাঁদাবাজিতে স্থানীয় এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

এলাকাবাসী জানায়, কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে অন্তত ৫/৬ হাজারের উপরে ফ্ল্যাট বাসা রয়েছে। এসব বাসার লোকজন তাদের নিত্যদিনের বর্জ্য ময়লা রাস্তার পাশে জমা করে রাখে। সেই ময়লা-আবর্জনা সপ্তাহে একদিন দাদনের নেতৃত্বে ট্রাক গাড়ির মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে ফেলানো হয়। আর একাজে একটি ট্রাক গাড়ি ও চারজন লোক পরিশ্রম করে। এজন্য দাদন প্রতি ফ্লাটের ভাড়াটিয়া থেকে ১৫০ টাকা হারে ময়লার বিল বাবদ আদায় করে। যেখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে ফ্ল্যাট প্রতি ৫০ টাকা হারে নির্দিষ্ট করে দেওয়া রয়েছে এবং ময়লা পরিস্কারের জন্য টেন্ডার নিয়ে মোটা অংকের রাজস্ব দিতে হয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। কিন্তু দাদনের ক্ষেত্রে নিয়ম উল্টা।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদের মৌখিক অনুমতিতে ১৫০টাকা হারে আদায় করে দাদন। যা অনেকের পক্ষেই দেয়া সম্ভব হয় না। যদি কেউ এই টাকা না দেয় তাহলে তাকে মারধর করে শিকার হতে হয়।

হাসনাবাদ এলাকার একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এখানে নামে মাত্র ময়লা পরিষ্কারের কাজ করা হয়। কিন্তু ময়লা আবর্জনায় পুরো হাসনাবাদ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তার পরেও লোকজনের কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। যেখানে ময়লার বিল হতে পারে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। কিন্তু দাদন মুলত শাহীন চেয়ারম্যানের লোক বিধায় এটা নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না। প্রতিবাদ করলেই চলে আসে হামলা মামলা।

এ বিষয় নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, এরা শাহীন চেয়ারম্যানের লোক, তাই তাদের কাজ করতে কোন নিয়ম কানুনের দরকার হয় না। কেরানীগঞ্জে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে শাহিন চেয়ারম্যানের লোক নেই। একটা পাবলিক টয়লেট পর্যন্ত শাহিন চেয়ারম্যানের ছেলেরা নিয়ন্ত্রন করে টাকা আদায় করে। হাটঘাট, দখল সহ বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি তাদের দলগত পেশায় পরিণত হয়েছে। এ ধরনের টাকা আদায় করার জন্য রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে কাজ করতে হয়। অথচ তারা ইজারাবিহীন কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করেই ১৫০ টাকা করে আদায় করছে। এখন ১৫০ টাকা আদায় করেছে, আগামীকাল বলবে ২০০ টাকা দিতে হবে। জনগনের এটা না দিয়ে কোন উপায় নেই। এরা সরকারদলীয় লোক বিধায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
কেরানীগঞ্জে বিভিন্ন পয়েন্টে এ ধরনের অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এতে সরকারের ভাব ভর্তি ক্ষুন্ন হলেও তাদের কোন কিছু যায়আসে না। কারণ এখানে শাহীন চেয়ারম্যানের নির্দেশেই নেতাকর্মীরা এসব কর্মকান্ড করে থাকেন। মাঝেমধ্যে এসব নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আলোচিত সংবাদ প্রকাশ করে হেনস্তার শিকার হয়েছে সংবাদকর্মীরা। আর কেরানীগঞ্জের বড় সাংবাদিক রায়হান-জাফর, রতন মিন্টু গনিরা তো এসব অনিয়ম চোখেই দেখে না। কোরবানীর ঈদে পশুর হাটগুলো নামেমাত্র ইজারা নিয়ে কোটি কোটি হাতিয়ে নেয় শাহিন আহমেদ ও তার লোকজন। হাট বাজার খেয়াঘাট, গাড়ির স্ট্যান্ড,সরকারী জায়গায় অবৈধ বাজার, বিআরএ অফিস, পাসপোর্ট অফিস, ভূমি অফিস, প্রতিটি সেক্টরেই শাহিন চেয়ারম্যানের লোকজন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মানুষকে জিম্মি করে এসব চাঁদ আদায় করে যাচ্ছে। আর আমার প্রশাসনিক লোকজন শুধু দেখেই যাচ্ছি।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা এমদাদুল হক দাদন বলেন, এ বিষয়টি প্রতিনিধিরা নিয়ম করে দিয়েছে। মন্ত্রী, শাহিন চেয়ারম্যান ও ইকবাল ভাই জানে এ বিষয়ে অবগত রয়েছে। কেরানীগঞ্জের প্রত্যেকটা ইউনিয়নেই এভাবে ময়লা টাকা আদায় করা হয়। এটা সরকারি নয়, আমাদের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। আগে যারা নিউজ করেছে তারা আমাদের সামনে দাঁড়াতে পারে নাই।