• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৯ অপরাহ্ন

খুলনায় আশ্রয় ফাউন্ডেশনের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে ব‍্যাপক অনিয়ম দূর্নীতি : গরু ছাগল ও বিচলির ঘরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১১, ২০২৩, ২:৫৬ অপরাহ্ন / ১৬০
খুলনায় আশ্রয় ফাউন্ডেশনের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে ব‍্যাপক অনিয়ম দূর্নীতি : গরু ছাগল ও বিচলির ঘরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

এইচ এম সাগর হিরামন,খুলনা অফিসঃ খুলনায় আশ্রয় ফাউন্ডেশনের শিক্ষা কার্যক্রম আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম (পিইডিপি)-৪ এর অনিয়ম দূর্নীতি যেন আতুর ঘরে পরিনত হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব‍্যাপক অনিয়ম ও সীমাহীন দূর্নীতিতে ভরপুর।

বাংলাদেশ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বুরো প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত খুলনা মহানগরসহ জেলার ৯টি উপজেলায় উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ‍্যালয় রয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে এদের কার্যক্রম শুরু হয়। আগামী জুন ২০২৩ সালে উক্ত শিক্ষা কার্যক্রমের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানা যায়।

খুলনা মহানগরসহ জেলার সব কয়টি উপজেলায় রয়েছে উক্ত শিক্ষা কার্যক্রম। মহানগরের রয়েছে প্রায় ২০০টি বিদ্যালয়, জেলার ফুলতলা উপজেলায় রয়েছে ৪৭টি বিদ্যালয়, দিঘলিয়ায় উপজেলায় রয়েছে ৬০টি বিদ্যালয়, তেরখাদা উপজেলায় রয়েছে ৭০টি বিদ্যালয়, রুপসা উপজেলায় রয়েছে ৭৫টি বিদ্যালয়, বটিয়াঘাটা উপজেলায় রয়েছে ৭০টি বিদ্যালয়, দাকোপ উপজেলায় রয়েছে ৮৩টি বিদ্যালয়, কয়রা উপজেলায় রয়েছে ৭০টি বিদ্যালয়, পাইকগাছা উপজেলায় রয়েছে ৬২টি বিদ্যালয়, ডুমুরিয়া উপজেলায় রয়েছে ৯৩টি বিদ্যালয়সহ মোট বিদ্যালয়ের সংখ‍্যা হলো ৮২০টি। প্রতিটি স্কুলের জন‍্য রয়েছে একজন করে শিক্ষক, ১৫টি বিদ্যলয়ের জন্য রয়েছে একজন করে সুপার ভাইজার, প্রতি উপজেলায় একজন ম‍্যানেজার। এদের মাসিক বেতন ৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পযর্ন্ত।

উক্ত শিক্ষা কার্যক্রমের নীতিমালায় রয়েছে। ওই সকল বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে হলে তাকে ন্যূনতম এসএসসি ও এইচএসসি পাশ হতে হবে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে অধিকাংশ শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে রয়েছে বড় ধরনের কারসাজি। অধিকাংশ শিক্ষক তাদের ভূয়া ও জাল সার্টিফিকেট জমা দিয়ে করছে চাকরি। বিদ্যালয় ঘরের আয়তন ও দৈর্ঘ‍্য থাকার কথা ৮ হাত আড়ে ১৬ হাত লম্বা।

কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় তার সম্পুর্ন বিপরীত। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান মুরগির ঘরে, গোয়াল ঘরে, কাঠের ঘরে, গরু, ছাগলের বিচেলি রাখার ঘরে। আবার অনেকে ঘরের ভিতর ও বারান্দায় চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা কার্য‍ক্রম। অনেক যায়গায় আবার বিদ্যালয়ের ঘরও নেই। আবার অনেক যায়গায় শিক্ষকও নেই, ঘরও নেই ভুয়া নামে বেতন ভাতা উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই ভাবে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।

এলাকাবাসির অভিযোগ, ছাত্র ছাত্রীর কথা কি বলব। স্কুল আছে কিন্তু শিক্ষার্থী নেই। মাঝে মধ্যে স্কুলে কিছু কিছু শিক্ষার্থীদের আসতে দেখা যায়। কিন্তু অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থী তারা।

অনেক ভুক্তভোগী শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, ভাই এদের অনিয়ম ও দূর্নীতির শেষ নেই। চাকরির আগে আমাদেরকে বলা হয়েছিল প্রতিমাসে পাচ হাজার টাকা করে বেতন পাবেন। আজ দুই বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু এখনও সবাই বেতন পায়নি। সম্প্রতি ৫ মাসের বেতন দিয়েছে আমাদের। কিন্তু সেই বেতন থেকে সুপার ভাইজারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা করে কেটে রেখেছে। তাদের কাছে টাকা কেটে রাখার কারন জানতে চাইলে তারা বলেন, উপরের স‍্যারদের দিতে হবে। ঘর ভাড়া দেওয়া হয়েছে ৫ মাসের ৬ হাজার টাকা তা থেকেও নেওয়া হয়েছে ৪০০০ টাকা। অনেকে কোন ভাড়াই পায়নি।

তারা আরো বলেন, টাকা কেটে রাখা হয়েছে বিষয়টি কাউকে বললে তাদের চাকরি হারাতে হবে বলে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়া হয়েছে। শিক্ষকরা বলেন, সকল শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত কোন শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেয়া হয়নি। শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার কথা বলে সুপার ভাইজাররা হাতিয়ে নেয় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পযর্ন্ত।

রুটিন মোতাবেক শিক্ষা কার্যক্রম দুপুরের পর। সরকারি ছুটি বাদে প্রতিদিন দুপুর ৩ টা থেকে ৫ টা পযর্ন্ত। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে কোথায় কোন স্কুল খুজে পাওয়া যায়নি। কিছু কিছু স্কুলের সন্ধান পাওয়া গেলেও সেগুলো গরু ছাগলের ঘরের ভিতরে। আবার কোনটি কাঠের ঘরের ভিতরে। অনেক স্থানে ঘর ও বারান্দায় স্কুলের নমুনা দেখা যায়। কিন্তু সে সব জায়গা স্কুলের পরিবেশ না। অধিকাংশ শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। কিন্তু তাদেরকে দেখানো হয়েছে এস এস সি ও এইচ এস সি পাশ। শিক্ষা কার্যক্রম কাগজ কলমে থাকলেও বাস্তবে কোথাও তার মিল খুজে পাওয়া যায়নি।

বটিয়াঘাটা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন আশ্রয় ফাউন্ডেশনের স্কুল বিষয় মিডিয়ার সাথে কথা বলতে চান না। তিনি বলেন, ইউএনও স‍্যারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।

এ ব্যাপারে আশ্রয় ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মমতাজ খাতুনের মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয় বটিয়াঘাটা উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি সমির মন্ডল বলেন, আশ্রয়ন ফাউন্ডেশনের কর্তৃপক্ষ মিথ্যা ও বানোয়াট তথ‍্য দিয়ে আমাদের প্রাথমিক বিদ‍্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে তাদের স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। যার কারনে প্রাথমিক বিদ‍্যালয়ের ও শিক্ষা বিভাগের ভাবমূর্তি চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব‍্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবি করছি কর্তৃপক্ষের নিকট।