• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৩:২০ পূর্বাহ্ন

কিশোরগঞ্জে গ্রাহকের ২০ কোটি টাকা হাতালেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট: আলমগীর হোসেন


প্রকাশের সময় : মার্চ ২১, ২০২৩, ২:৩৫ পূর্বাহ্ন / ৫৬
কিশোরগঞ্জে গ্রাহকের ২০ কোটি টাকা হাতালেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট: আলমগীর হোসেন

এম রাসেল সরকার, কিশোরগঞ্জ থেকে ফিরেঃ কথায় আছে ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’ অর্থাৎ লোভ করার পরিণাম কখনোই ভালো হয় না। সেই লোভই কাল হলো কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার অন্তত ৪০০ মানুষের। ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের চেক দিয়ে গ্রাহকের প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আলমগীর হোসেন হোসেনপুর উপজেলার হুগলাকান্দি গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ও একই উপজেলার বীর কাটিহারি গ্রামের কেনু মিয়ার ছেলে মানিক মিয়া ১০ বছর ধরে উপজেলার জিনারি ইউনিয়নের বোর্ড বাজারে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। তবে শাখাটি কয়েকদিন ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে। এজেন্ট আলমগীরকে খুঁজে পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। এমনকী তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। এছাড়া অংশীদার ও এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার ব্যবস্থাপক আলমগীরের বড় ভাই রিটন মিয়ার সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। এ অবস্থায় গচ্ছিত টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এ এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার প্রায় ৪০০ গ্রাহক। এজেন্টকে না পেয়ে ব্যাংকের সামনে প্রতিদিন বিক্ষোভ করছেন গ্রাহকরা। এ ঘটনায় হোসেনপুর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন গ্রাহকদের কয়েকজন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রথমদিকে স্থায়ী আমানত বা এফডিআরে এক লাখ টাকা জমার বিপরীতে তিনমাসে তারা মুনাফা দিতেন ১৪০০ টাকা। কিন্তু এজেন্ট আলমগীর গ্রাহকদের বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে একপর্যায়ে স্থায়ী এক লাখ টাকা জমার বিপরীতে মাসে এক হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। সেই ফাঁদে পা দিয়ে এলাকার অনেকে আগ্রহী হয়ে টাকা জমা দেন তার এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায়। পরে কৌশলে মূল ব্যাংকের চেক না দিয়ে নিজের চেক দিয়ে গ্রাহকের প্রায় ২০ কোটি হাতিয়ে নেন এজেন্ট আলমগীর হোসেন। সরেজমিন এরকম ৬৪ গ্রাহকের তথ্য পাওয়া গেছে। টাকা রাখার প্রমাণ হিসেবে এজেন্ট আলমগীরের সই করা ও সিল দেওয়া তার অ্যাকাউন্টের চেক রয়েছে।

চর হাজীপুর গ্রামের সৌদিপ্রবাসী রতন মিয়ার স্ত্রী রোজিনা আক্তার। তিনি ওই এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় স্বামীর পাঠানো ২৭ লাখ টাকার এফডিআর করেন। আমানতের বিপরীতে আলমগীর হোসেন তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের কয়েকটি চেক দেন রোজিনাকে। রোববার (১২ মার্চ) তার কাছে খবর আসে, এজেন্ট আলমগীরসহ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত সবাই পালিয়ে গেছেন।

হুগলাকান্দি গ্রামের উজ্জ্বল মিয়া ১৯ লাখ, একই গ্রামের আবদুল মোতালিব সাড়ে ১৫ লাখ টাকা এবং একই গ্রামের আবুল কাসেম ১৪ লাখ টাকা এফডিআর করেছিলেন ওই শাখায়। গচ্ছিত টাকা হারিয়ে তারাও খুঁজছেন এজেন্ট আলমগীর হোসেনকে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, হোসেনপুরসহ আশপাশের প্রায় ৪০০ গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকারও বেশি নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন এজেন্ট আলমগীর ও তার সহযোগীরা। দ্রুত তাদের আইনের আওতায় এনে টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকরা।

এজেন্ট ব্যাংকিং শাখাটির পাশে একটি ফার্মেসির মালিক আমিনুল ইসলাম উজ্জ্বল বলেন, ‘ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা রাখলে কম লাভ হয় বলে গ্রাহকদের কাছে টানতেন আলমগীর হোসেন। তিনি লাখে এক হাজার টাকা লাভ দেবেন বলে লোভ দেখান। গ্রাহকদের লোভের ফাঁদে ফেলেই এজেন্ট আলমগীর এই কাজ করেছেন। তিনি সবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা না রেখে নিজের অ্যাকাউন্টে বা নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন।’

সফির উদ্দিন (৬০) নামের একজন বলেন, ‘স্বামী প্রবাস থেকে টাকা পাঠিয়েছে। বেশি লাভের আশায় সেই টাকা স্ত্রী এজেন্ট আলমগীরের কাছে জমা রেখেছে। এখন স্বামী যদি টাকার হিসাব চায়, তাহলে তারা কী হিসাব দেবে? এ কারণেই অনেকের সংসারে অশান্তি লাগতে পারে।’

এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার এজেন্ট আলমগীরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের বাড়ি ও জমি দখলে নিয়েছেন অনেক গ্রাহক। তাদের মধ্যে একজন আছিয়া আক্তার। তিনি এজেন্ট আলমগীরের পাশের বাড়ির বাসিন্দা। তার স্বামী ওই শাখায় ১২ লাখ টাকা জমা রেখেছিলেন। আলমগীর ও তার পরিবারের লোকজন পালিয়ে যাওয়ায় তাদের বাড়ি দখলে দিয়েছেন তারা। তিনি জানান, তার মতো অন্য গ্রাহকরা আলমগীরের জমিও দখলে দিয়েছেন।

হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান টিটু বলেন, এ ঘটনায় একজন গ্রাহক থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি দুদক কিশোরগঞ্জ কার্যালয়ে ফরোয়ার্ড করা হয়েছে। এছাড়া থানাপুলিশ থেকে তাকে ধরতে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় আলমগীর ও তার সহযোগীদের পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক রোকন উদ্দিন বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে হোসেনপুরের বোর্ড বাজারের এজেন্টের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বন্ধ আছে। আলমগীর তার বড় ভাই অংশীদার রিটন মিয়া এবং এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থাপক উধাও হয়ে যাওয়ায় গ্রাহকরা চেক হাতে ঘুরলেও টাকা তুলতে পারছেন না।’

তিনি আরও বলেন, গ্রাহকদের অভিযোগ পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।