• ঢাকা
  • বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:২২ অপরাহ্ন

আড়াইটায় ছুটি হয় অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ৯:০৬ অপরাহ্ন / ১৬
আড়াইটায় ছুটি হয় অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়

এম এ মান্নান, মধ্যনগর, সুনামগঞ্জঃ সুনামগঞ্জের মধ্যনগর ও জামালগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সবার পরে কর্মস্থলে হাজিরা দিয়ে, সবার আগে কর্মস্থল ত্যাগ করে, চলে আসেন নিজ বাসায় উপজেলা সদর বাজারে। বিদ্যালয়ের পাঠদান সময় সূচি ও সরকারি নিয়ম নীতি মানেননা ঐসব দায়িত্বহীন কর্তব্যরত শিক্ষকরা।

জানা গেছে, মধ্যনগর উপজেলায় বিদ্যালয়ের সংখ্যা রয়েছে ৮৪ টি এরিমধ্য অনুমোদিত প্রধান শিক্ষক ৮৪ জন সহকারী শিক্ষক ৩৮৬ জন, মোট শিক্ষক রয়েছেন ৪৭০ জন। এরমাঝে কর্মরত প্রধান শিক্ষক ৫০ জন,সহকারী শিক্ষক ৩১৮ জন,মোট কর্মরত শিক্ষক আছেন ৩৬৮ জন। তাছাড়া প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ ৩৪ জন,সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদ ৬৮ জন।

এরমাঝে অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপজেলা শিক্ষা বিভাগ প্রশাসনকে রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা অনিয়মের ধুমরাজাল বুনে অব্যাহত রেখেছেন নিয়মিত ডিউটির পালাবদলে অনিয়ম। প্রনিয়তই এমনটি করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। শিক্ষা বিভাগের প্রশাসনিক ও তদারকি কর্মকর্তার (এটিইও) একাধিক পদ শূণ্য থাকায়,শিক্ষকরা এই শূন্যতাকে স্বাচ্ছন্দ্যে উপভোগ করছেন অনায়াসে। যে যার ইচ্ছে মতো বিদ্যালয়ে যান, আর আসেন। প্রাথমিক শিক্ষাকে তারা একটি তামাশায় পরিণত করেছেন বলে,সচেতন মহল ও অভিভাবকরা অভিযোগ তুলেছে। এ নিয়ে জেলা এবং উপজেলা শিক্ষা বিভাগ কোনধরনের কার্যকর এবং দৃশ্যমান কোনো কড়া পদক্ষেপও নিতে দেখা যায় না। সকাল ৯ টা থেকে ৪ টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত অব্যাহত পাঠদান চালিয়ে যাবার নির্দেশনা থাকলেও, তারা নিয়ম নীতির অবজ্ঞা করারও অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়াও প্রশাসনকে তোয়াক্কা করেননা অধিকাংশ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা।

শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও সচেতন মহলের মাঝে এনিয়ে তীব্র ক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছে এসব এলাকায়। এবং তারা অভিমত ব্যক্ত করে বলছেন যে,উপজেলার কোনো কোনো বিদ্যালয়ের শিক্ষক বছরের অধিকাংশ সময় ছুটিতে থাকে। এছাড়াও ছুটি জনিত কারণে একাধিক বিদ্যালয়ের নিয়মিত পাঠদান বন্ধ থাকে। শিক্ষালয়ে এতো ছুটি পৃথিবীর আর কোনো দেশে নাই। দেখা যায় ছুটিজনিত কারণেই গড়ে, মাত্র ছয় মাস বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম হয়। অনেক শিক্ষক বিভিন্ন অজুহাতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট হইতে মৌখিক এবং লিখিতভাবে ছুটি নিয়ে কর্তব্যের দায়িত্বকে ফাঁকি দিচ্ছেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও তদারকির ঘাটতি থাকায়, কারণে-অকারণে অনর্থক ছুটি দিয়ার ফলে, শিক্ষার ব্যবস্থা দিন দিন দুর্বল হচ্ছে।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের পড়ালেখার মান নিম্নমুখী থাকায় বাংলা, ইংরেজি, গণিতে, শিক্ষার্থীরা দূর্বল থেকে যায়। প্রাথমিক শিক্ষার মতো বুনিয়াদি শিক্ষায় শিক্ষার্থী কাঁচা থেকে যাওয়ায় তারা প্রাথমিকের গন্ডি পেরুনোর আগেই শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পরে অনেক শিশু কিশোর কিশোরী।
উল্লেখ্য যে, বিগত এক দশক ধরে বিদ্যালয়গুলেতে পড়ালেখার মানোন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সরকার লাখ লাখ টাকা অনর্থক বরাদ্দ দিয়ে আসছে। বাস্তবে এসব বরাদ্দের সিংহভাগই নানা রকম খরচ দেখিয়ে সরকারের অর্থ অপচয় হচ্ছে।

এবিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এসব অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, মধ্যনগর উপজেলায় আমি জনবলের অভাবে আছি, যার ফলে বিদ্যালয় গুলো নিয়মিত তদারকি করা যাচ্ছে না। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ অন্ততপক্ষে দুই জন এটিইও পোস্টিং দিলে এ-সব নিয়মবহির্ভূত বিদ্যালয় গুলো নজরে আনা যাবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনিয়মের বিষয়ে, জামালগঞ্জ থেকে সংবাদকর্মী বাদল কৃষ্ণ দাস জানান, জামালগঞ্জ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১২৬ টি। এতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক মিলিয়ে অনুমোদিত পদ ৬৮৪টি। কর্মরত আছেন ৬১২ জন। সীমিত সংখ্যক বিদ্যালয় ছাড়া, বাকি সিংহ ভাগ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চরম ভাবে নীতিমালা লংঘন করছেন।

তারা সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টায় কর্মস্থলে পৌঁছান এবং বেলা আড়াইটার মধ্যে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে উপজেলা সদর অভিমুখী গন্তব্যে ফিরে আসেন।উল্লেখ্য যে, গভীর হাওর বেষ্টিত বেহেলী ইউনিয়নে ও ফেনারবাঁক ইউনিয়নের বিদ্যালয়গুলো, এবং অন্যান্য ইউনিয়নের দূরবর্তী-দূর্গম বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কেবল চাকুরি রক্ষার খাতিরে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করেন। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন এবং দুই শিফটে তিন-চার ঘন্টা পরেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন । হেমন্তে ও বর্ষাতে একই নিয়মে চলছে। বর্ষাকালে একাধিক পয়েন্ট থেকে বেহেলী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামগুলোর বিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষকরা ইন্জিন নৌকা ভাড়া করে হাওর পাড়ি দিয়ে অসময়ে কর্মস্থলে পৌঁছান। ফিরেও আসেন তড়িঘড়ি।

এদিকে ভীমখালী ইউনিয়নের কারেন্টের বাজার পয়েন্ট থেকে ফেনারবাঁক ইউনিয়নের শিক্ষকরা ইন্জিনের নৌকাযোগে সবকটি দূরবর্তী বিদ্যালয়ে গমন করেন। বেলা আড়াইটা থেকে তিনটার পরে এসব বিদ্যালয়ে গেলে প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে তালা ঝুলতে দেখা যায়। আর সরাসরি এর প্রভাব পড়ছে বুনিয়াদি প্রাথমিক শিক্ষাখাতে। প্রাথমিক শিক্ষায় রীতিমতো ধ্বস নেমেগেছে। ক্রমাগত ভেঙ্গে পড়ছে শিক্ষা ব্যবস্থা। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এরকম নৈতিক অধঃপতন নিয়ে উপজেলা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে প্রশ্ন করলে তারা গৎবাঁধা উত্তর দেন। তারা বলেন যে, এরকম তো আমরা পাইনি, যদি পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে ।

এ নিয়ে সচেতন মহলের ও প্রবীণ ব্যক্তিদের মুখে বিরূপ মন্তব্য শোনা যায় যে, আগের শিক্ষা ব্যবস্থাই ভালো ছিল। এখনকার মতো আগে এতো ছুটিও ছিল না। শিক্ষার্থীরা ক্লাসেই পড়ালেখার প্রতি বেশি অনুরক্ত মনোযোগী ছিল। শিক্ষকরা ছিলেন আন্তরিক। বাড়ীতেও পড়ালেখার প্রতিযোগিতা চলতো। বিদ্যালয়ে সকাল ১০ টা থেকে মধ্যাহ্ন বিরতি বাদে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে একটানা ক্লাস হতো।দেড় দুই দশক আগেও শিক্ষকরা কর্মস্থলে আবাসিক থাকতেন। কিন্তু সময়ের প্রযোজনে বেতন বৃদ্ধির সাথে সাথে এক লাফে শিক্ষকরা গ্রাম ছেড়ে উপজেলা সদরে বাসাবাড়িতে উঠে পড়েছেন। এখন গ্রাম তাদের কাছে আর ভালো লাগে না।

জামালগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পীযুষ কান্তি মজুমদার বলেন, গত মিটিংএ বিদ্যালয়ের সময় সূচি অনুসরণ করার ব্যাপারে শিক্ষকদের কড়া ভাবে সতর্ক করেছি। উনারা বলেছেন, কোথাও এরকম অনিয়ম হচ্ছে না। তিনি বলেন প্যাসিফিক অভিযোগ পাইলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবো।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহন লাল দাস বলেন, জামালগঞ্জে শিক্ষকরা সময় সূচি ফলো না করার বিষয়টি আমি দেখতেছি।