• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৮:৫১ অপরাহ্ন

আবারো বিআরটিএতে দালালদের উৎপাত : মাসুদদের ভালো হওয়ার লক্ষন নেই


প্রকাশের সময় : মে ১১, ২০২৩, ৩:২০ অপরাহ্ন / ৪৩
আবারো বিআরটিএতে দালালদের উৎপাত : মাসুদদের ভালো হওয়ার লক্ষন নেই

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন পিরোজপুরের সাব্বির রহমান। হাত খরচের টাকার জোগান দিতে অবসর সময়ে রাইড শেয়ারিং করার চিন্তা করেন। সেই ধারাবাহিকতায় একটি পুরোনো বাইক ক্রয় করেন তিনি। এরপর শুরু করেন কাগজপত্র ঠিক করার কাজ। তবে অনেক চেষ্টার পরেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়ে বাধ্য হয়ে দালালের সহায়তা নেন। রাজধানীর মিরপুর বিআরটিএ অফিসে মোটরসাইকেলের ডিজিটাল প্লেট নম্বর নিতে আসা সাব্বির রহমান এমন ভোগান্তির কথা জানান। শুধু সাব্বির নয়, এমন ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন অনেকেই। এক সপ্তাহ যাবত ধরে মোটর সাইকেলের ডিজিটাল প্লেট নম্বর পেতে মিরপুর বিআরটিএ অফিস ঘুরছেন কুষ্টিয়ার রাকিবুল ইসলাম। তিনি পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে লাইনে এসে দাঁড়ায়। তবে আমার সিলিয়াল আসে না। আমার পরে এসেও অনেকে তাদের কাগজপত্র বুঝে পেয়েছে। রাকিবুল ইসলামের অভিযোগ, এখানে দালাল ছাড়া ভোগান্তিহীনভাবে কাজ সম্পন্ন করা কতটা কঠিন এটা বলে বোঝাতে পারবো না। আমি এখানে আসার আগে অনেকে আমাকে বলেছিলো আগে লোক না ধরে কাজ করতে পারবি না। তবে আমি তাদের কথা বিশ্বাস না লাইনে দাঁড়িয়েছি। ভেবেছিলাম কাজ হবে কিন্তু বিকেল তিনটা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেও আমার কাগজ না পেয়ে গতকাল বাসায় ফিরে গেছি। আজ আবার লাইনে দাঁড়িয়েছি দেখি কি হয়।

মিরপুর বিআরটিএ ঘুরে দেখায় যায় প্রবেশ মুখে ডুকতেই দালালরা আপনাকে ঘিরে ধরবে। তারা গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করতে আসা বিভিন্ন ব্যাক্তিদের দ্রুত কাজ সম্পাদক করা জন্য প্রস্তাব দেন। ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে দ্রুত কাজ শেষ করার অফার দেন। এর পর ১২১ নম্বর কাউন্টারের সামনে গিয়েও দেখা যায় দালালদের দৌড়াত্ব। আপনাকে দ্রুত কাজ শেষ করে দেয়ার জন্য অফার দিবে। ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দিলেই দ্রুত টোকেন সংগ্রহ করে দিবে। ১২১ নম্বর কাউন্টারে রয়েছে ৪ টি বুথ এ গুলোতে সব সময় দেখা যায় ভিড় লেগেই আছে। ১২১ নম্বর কক্ষে প্রবেসের ছোট পকেট গেইট দিলে দালালরা এবং অসাধু কিছু আনসার সদস্যদের দ্রুত কাজ করিয়ে নিতে দেখা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দালাল জানান, এখানে ইচ্ছে করেই আপনাকে ভোগান্তি বা সময়ক্ষেপন করানো হয়। যাতে করে আমাদের মাধ্যমে আপনি কাজ করাতে বাধ্য হন। অনলাইনে সকল টাকা পয়সা কাগজপত্র করলেও এখানে আপনাকে আসতেই হবে। এখন মুল যে সমস্যা আপনাদের পড়তে হয় সেটা হলো সময় নষ্ট এবং সঠিক যায়গা না বুঝা। এই সুযোগটাই আমরা নিচ্ছি। শত অভিযোগের পরেও কোন কর্তৃপক্ষ কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ না করায় বিআরটিএ-তে বাধ্য হয়ে নিতে হয় দালালের সহযোগিতা। তবে অফিসের কর্মকর্তাদের দাবি যারা অবৈধ লেনদেন করছেন তাদের জন্য আমরা ঘুস বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ করতে পারছি না। এভাবেই নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে দায় সারেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।

এদিকে দালালদের ভাষ্য, বিআরটির লোকজনকে ম্যানেজ করে চলে তাদের কর্মকাণ্ড। সম্প্রতি দালালি করার অভিযোগে আটক হওয়া একজন জানান, বিআরটিএ-এর যারা আমাদের ধরেছেন আমরা তো তাদেরই ঘুষ দিয়েই দালালি করি। টাকা একটু কম দিলেই তারা আমাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযান চালান।

ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে মিরপুর বিআরটিএ অফিসে কর্মরত সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এসব নিয়ে আমাদের বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি নাই। আপনারা স্যারদের সাথে কথা বলেন।

এ বিষয়ে সহকারী পরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ সত্য না। দেখুন আমাদের কর্মকাণ্ড শতভাগ অনলাইন ভিত্তিক। এখানে ঘুষ লেনদেনের সুযোগ নাই। তবে গ্রাহকরা যদি নিজে থেকে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জড়িয়ে পড়ে তাহলে আমাদের কিছু করার থাকে না। গ্রাহকদের একটা জিনিস বুঝতে হবে এখন সব কিছু মোবাইলে দেখা যায় তাহলে কেন তারা অনৈতিক লেনদেন করবে। নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা এখন এমন সিস্টেম করেছি গ্রাহকরা মোবাইলের মাধ্যমে লার্নার প্রিন্ট করতে পারবে। এখন আপনি প্রিন্ট না করে যদি দালারের কাছে যান তাহলে দোষ কার। এখনতো গ্রাহকের কাউন্টারে যাবার দরকার নাই, অ্যাপসের মাধ্যমে আবেদনের সবশেষ তথ্য নিজেই যাচাই করতে পারবে। এমনি নবায়নের জন্যও আমাদের এখানে আসতে হবে না। অনলাইনে আবেদন করতে পারবে। আমাদের এখানে মাত্র একদিন আসবে বায়োমেট্রিক, ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে চলে যাবে। এরপরেও যদি গ্রাহক দালারের কাছে যায় এটা কি গ্রাহকের ব্যর্থতা না। যারা অনলাইন বুঝে না তারা কি করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা অনলাইন বুঝে না তাদের জন্য প্রযোজ্য না। আমাদের সর্বনিম্ন এয়িট পাস দেওয়া আছে। দেখুন আমাকে চোখ, মুখ, কান, নাক, বুদ্ধি সব কিছু দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি আগুনে হাত দিলাম বিষয়টি কেমন হলো ? দেখুন আমরা কাজ করি আমাদের বিরুদ্ধে শত অভিযোগ আসবে। সেই সাথে গ্রাহককেও বুঝতে হবে তার কাজটি ঠিক মত করতে পারছে কি না।