• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৬:১৫ অপরাহ্ন

চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ময়মনসিংহের ত্রিশালের সেই ঘাতক ট্রাক চালক মোঃ রাজু আহমেদকে সাভার থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব


প্রকাশের সময় : জুলাই ১৯, ২০২২, ৮:২৯ অপরাহ্ন / ২৭১
চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ময়মনসিংহের ত্রিশালের সেই ঘাতক ট্রাক চালক মোঃ রাজু আহমেদকে সাভার থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

বিশেষ প্রতিনিধিঃ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই র‌্যাব সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জঙ্গি দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদক ও ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর এবং আলোচিত অপরাধের অপরাধীদের গ্রেফতারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। নিবিড় গোয়েন্দা নজরদারী ও পরিকল্পিত আভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপরাধী গ্রেফতার এবং আইনের আওতায় এনে র‌্যাব ইতোমধ্যেই জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় জড়িত চালক ও হেলপারকে গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করেছে র‌্যাব।

গত ১৬ জুলাই ২০২২ তারিখ, দুপুর বেলা ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রায়মনি গ্রামের জাহাংগীর আলম তার আট মাসের অন্তঃসত্বা স্ত্রী ও তার এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে রাস্তা পারাপারের জন্য মহাসড়কের পাশে অবস্থানকালীন সময়ে ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে তাদের চাপা দেয়। উক্ত দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় মোঃ জাহাংগীর আলম (৩৫), তার অন্তসত্বা স্ত্রী রত্না বেগম (২৬) এবং তার ০৩ বছর বয়সী কন্যা সন্তান সানজিদা আক্তারকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে মৃত্যুবরণ করে।

দুর্ঘটনার সময়, অন্তঃসত্বা রত্না বেগমের উপর দিয়ে ট্রাক চলে যাওয়ায় চাকার চাপে গর্ভে থাকা কন্যা সন্তান অলৌকিক ভাবে ভূমিষ্ঠ হয়। ভূমিষ্ঠ শিশুটিকে আহত অবস্থায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসার উদ্দেশ্য তাকে ময়মনসিংহ সদরের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। উক্ত দুর্ঘটনায় নিহত জাহাংগীর আলমের পিতা বাদী হয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানায় সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮/১০৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং ১৮, তারিখ ১৭ জুলাই ২০২২।

নিহত জাহাংগীর আলম পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। দুর্ঘটনায় নিহত কন্যা সন্তান ছাড়াও তাদের পরিবারে ০৮ ও ১০ বয়সী ০২ জন ছেলে ও মেয়ে সন্তান রয়েছে। দুর্ঘটনায় ভূমিষ্ঠ শিশুর ডান হাতের কনুই এর উপরের হাড়ে ফ্র্যাকচার ও কলার বোন ভেঙ্গে গিয়েছে বলে জানা যায়। বর্তমানে শিশুটি ময়মনসিংহের লাবীব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। দেশবাসী অসহায় ও নিষ্পাপ শিশুর নির্মম ভাবে ভূমিষ্ঠ হওয়া ও পিতা-মাতার মৃত্যুর ঘটনায় হতবিহবল হয়ে পড়ে। এরই প্রেক্ষিতে, র‌্যাব উক্ত দুর্ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায়, র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৪ এর অভিযানে গত রাতে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে উক্ত মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় জড়িত ঘাতক ট্রাক চালক মোঃ রাজু আহমেদ@ সিপন (৪২), পিতা-মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, থানা-বাঘা, জেলা-রাজশাহী’কে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ট্রাক চালক নিহতদেরকে গাড়ি চাপা দেওয়ার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত রাজু গত ১১ জুলাই ২০২২ তারিখ হতে একটানা মালামাল পরিবহন করে আসছিল। এর মধ্যে সে একবার রাজশাহী থেকে আম নিয়ে কিশোরগঞ্জের তারাইলে মালামাল আনলোড করে সে পুনরায় রাজশাহী ফিরে আসে। পরবর্তীতে গত ১৫ জুলাই ২০২২ তারিখে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট হতে গাড়ির মালিকের আম বোঝাই করে এবং পরবর্তীতে রাজশাহীর নওহাটা থেকে আরেক দফায় আলু বোঝাই করে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের এক ব্যবসায়ীর নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য রাত ১২ ঘটিকার সময় রওয়ানা করে। পথিমধ্যে সে হালকা বিরতি নিয়ে দুর্ঘটনার পূর্ব পর্যন্ত একটানা গাড়ি চালিয়ে আসছিল এবং কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে ময়মনসিংহের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের সন্নিকটে পৌঁছালে রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা নিহত জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী-সন্তানকে চাপা দেয়।

দুর্ঘটনার পর উপস্থিত লোকজন ট্রাকটি থামায়। তখন সুযোগ বুঝে গ্রেফতারকৃত রাজু ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে পড়ে। পরবর্তীতে বাস থেকে সে ময়মনসিংহ বাইপাসে নামে এবং সেখান থেকে একটি সিএনজি করে প্রথমে মুক্তাগাছা এবং পরে অপর একটি বাসে করে সে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পৌঁছায়। সেখান থেকে সে তার পরিচিত বিভিন্ন ট্রাক চালকের ট্রাকে উঠে আত্মগোপনে থাকে। গতকাল এমন একটি ট্রাক সাভারে পৌঁছালে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত জানায়, বিগত ০৬-০৭ মাস পূর্ব থেকে সে শতকরা ১০ শতাংশ কমিশনে বর্তমান ট্রাকটি চালিয়ে আসছিল। গাড়িটিতে করে সব সময় কাঁচামাল পরিবহন করা হত। গাড়িটির বর্তমানে ট্যাক্স টোকেন এবং ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ উত্তীর্ণ। গাড়িটির ধারণ ক্ষমতা ৭ টন হলেও দুর্ঘটনার সময় গাড়িটির ওজন ১৩.৫ টন ছিল বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃতের ভারী যানবাহন চালনার জন্য কোন বৈধ লাইসেন্স নেই। পূর্বে তার মধ্যম সারির গাড়ীর ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল যা ২০১৬ সালে হারিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃত রাজু ২০০২ সালে যশোরের এক ট্রাক ড্রাইভারের হেলপার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দুর্ঘটনার শিকার হয়। উক্ত দুর্ঘটনায় তার বাম পা মারাত্মকভাবে জখম হওয়ার ফলে সে প্রায় ৬ বছর গাড়ি চালায়নি। তার এখনও বাম পায়ে সমস্যা রয়েছে। বিগত ১০ বছর ধরে সে নিয়মিত বিরতিতে ট্রাক চালাচ্ছে। গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।