• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩১ অপরাহ্ন

মাগুরার ভূয়া কস্ট শ্লিপ জমা দিয়ে ২৬ লাখ টাকার মালামাল উত্তোলন 


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন / ১১
মাগুরার ভূয়া কস্ট শ্লিপ জমা দিয়ে ২৬ লাখ টাকার মালামাল উত্তোলন 

নিজস্ব প্রতিবেদক, মাগুরাঃ  ব্যাংকে টাকা জমা না করেও মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ব্যাংকের ভুয়া ‘কস্ট স্লিপ’ দাখিল করে টিসিবির গোডাউন থেকে প্রায় ২৬ লাখ টাকার মালামাল উত্তোলনের খবর পাওয়া গেছে তিন ডিলারের বিরুদ্ধে।

এ জালিয়াতির ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং সোনালি ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতার খবর জানা গেলেও তাদের রক্ষায় একটি মহল মরিয়া হয়ে উঠেছে।

প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত ওই তিন ডিলার হচ্ছেন- মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মেসার্স লস্কার এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রোকসানা এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স খন্দকার এন্টারপ্রাইজের মালিক যথাক্রমে- মো. ইদ্রিস লস্কার, রোকসানা খাতুন এবং খন্দকার শফিকুল ইসলাম। আর সোনালি ব্যাংক শ্রীপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মানবেন্দ্র নাথ বিশ্বাস সিল-স্বাক্ষরযুক্ত ব্যাংকের ‘কস্ট স্লিপ’ দিয়ে ওই ডিলারদের সহযোগিতা করেছেন বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, মাগুরা জেলায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির মোট ৩৪ জন নিবন্ধিত ডিলার রয়েছে। তারা জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে খোলাবাজারে কার্ডধারী সুবিধাভোগীদের মধ্যে স্বল্পমূল্যের প্যাকেজে চাল, ডাল, তেল এবং চিনি বিক্রি করে থাকেন। সরকারি গোডাউন থেকে এসব মালামাল উত্তোলনের আগে নিবন্ধিত ডিলারদের জেলা প্রশাসকের নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চাহিদার বিপরীতে নির্ধারিত টাকা জমা করতে হয়। কিন্তু অভিযুক্ত ওই তিন ডিলার জেলা প্রশাসকের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা না করেই সোনালি ব্যাংকের শ্রীপুর শাখা থেকে সিল স্বাক্ষরযুক্ত ৮টি ‘কস্ট স্লিপ’ সংগ্রহ করেন।

পরবর্তীতে মাগুরা জেলা প্রশাসনের নেজারত শাখায় সেগুলো জমা দিয়ে জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসের ডাল, তেল এবং চিনি উত্তোলন করেন। আর ওই ৮টি ‘কস্ট স্লিপে’ অঙ্কিত অর্থের পরিমাণ মোট ২৬ লাখ ৮ হাজার ৫১৫ টাকা।

এদিকে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মাগুরার টিসিবি ডিলারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ঝিনাইদহে টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়ের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করতে গিয়ে বিষয়টি মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত শাখার কর্মচারীদের গোচরে আসে। এ অবস্থায় বিষয়টি সহকর্মীদের চেপে যাওয়ার জন্য একই শাখায় কর্মরত অপর একজন সহকারী নাজির এবং সোনালি ব্যাংক শ্রীপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মানবেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত শ্রীপুর উপজেলার লাঙ্গলবাঁধ বাজারের কথিত মেসার্স লস্কার এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. ইদ্রিস লস্কার মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত শাখায় কর্মরত সহকারী নাজির খন্দকার তারিক হাসানের শ্বশুর। মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার লাঙ্গলবাঁধ বাজারে ইদ্রিস লস্কারের কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। আবার তিনি সরকারি সুবিধাভোগী বিধায় লাইসেন্স পাওয়ার জন্য অযোগ্য হলেও জামাতা সহকারী নাজির তারিক হাসান তথ্য গোপন করে এ বছরের জুন মাসে শ্বশুরের নামে টিসিবির লাইসেন্সটি করেন।

টিসিবির এই লাইসেন্সটি শ্রীপুরের লাঙ্গলবাঁধ বাজারের ঠিকানায় হলেও নাজির তারিক নিয়োগকৃত লোকজনের মাধ্যমে মালামাল উত্তোলন করে মাগুরা সদরের জগদল ইউনিয়ন এবং পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড এলাকায় বিক্রি করছেন।

অন্যদিকে অপর অভিযুক্ত মেসার্স রোকসানা এন্টারপ্রাইজের মালিক রোকসানা খাতুনের স্বামী রবিউল ইসলামের সঙ্গে বন্ধুত্বের খাতিরে তাকেও লাইসেন্স পেতে সহযোগিতা করেন তিনি। এছাড়া অপর অভিযুক্ত ডিলার খন্দকার শফিকুল ইসলামসহ চক্রটি যোগসাজশে গত তিন মাস ধরে এই জালিয়াতির ঘটনা চালিয়ে আসছিলেন।

তবে মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত শাখায় কর্মরত সহকারী নাজির খন্দকার তারিক হাসান অভিযুক্ত ডিলারদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অন্যান্য অভিযোগও অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে তার শ্বশুর অভিযুক্ত ডিলার ইদ্রিস লস্কার এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। বরং ডিসি অফিস থেকে সবকিছু জানতে বলেন।

এ বিষয়ে সোনালি ব্যাংক শ্রীপুর শাখার ব্যবস্থাপক রমেন্দ্র নাথ রায় বলেন, অভিযুক্ত তিন ডিলার যে ৮টি কস্ট স্লিপ ডিসি অফিসে জমা করেছেন সেগুলো ভুয়া। ওই স্লিপে থাকা স্বাক্ষরের সঙ্গে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার স্বাক্ষরের মিল নেই।

ব্যবস্থাপক নিজ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করলেও তারই ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার মানবেন্দ্র নাথ বিশ্বাস  নিজের দোষ স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সবাই মিলে আমাকে বোকা বানিয়ে কাজটি করিয়ে নিয়েছে। তবে এর বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে কোনো সুবিধা গ্রহণ করিনি। এ ঘটনায় আর কারা জড়িত সেই বিষয়টি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

মাগুরা জেলা প্রশাসক মো. অহিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ইতোমধ্যেই বিষয়টির তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী রোববারের মধ্যে ওই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি হাতে পাওয়া গেলে এই জালিয়াতির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।