• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০২:২৪ অপরাহ্ন

১০ লাখ গবাদি পশুর জন্য হাওরে উঠছে ১শত কোটি টাকার খড়


প্রকাশের সময় : মে ১০, ২০২৩, ৫:০২ অপরাহ্ন / ৩৭
১০ লাখ গবাদি পশুর জন্য হাওরে উঠছে ১শত কোটি টাকার খড়

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ২০১৭ সালে হাওরে ব্যাপক ফসলহানির পর পাহাড়ি ঢলের ভয় ও শঙ্কাহীন উৎসবমূখর পরিবেশে বৈশাখ মাস পার করছে। এবার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ধান পেয়েছেন সুনামগঞ্জে কৃষকরা। সেই বোরো ধান শুকিয়ে গোলায় তুলছেন তারা। প্রখর রৌদ থাকায় ধান শুকানোর পাশাপাশি গো-খাদ্য খড় সংগ্রহে দিনরাত ব্যস্ত হাওরের কৃষক পরিবারের লোকজন। এবছর জেলায় ১শত কোটি টাকার খড় সংগ্রহের আশা করছে প্রাণি সম্পদ বিভাগ। যা থেকে হাওরাঞ্চলের ১০ লাখ গবাদি পশুর এক বছরের খাদ্য মজুদ হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় এখনও হাওরের কৃষি নির্ভরশীল গবাদি পশুর উপর। চলতি বছর প্রায় ১ হাজার হার্ভেস্টর যন্ত্র দিয়ে হাওরের বোরো ধান দ্রুত কর্তন ও মাড়াই এক সঙ্গে হওয়ায় ধান সংগ্রহে কৃষকের সময় ও কষ্ট কম হলেও এবার গবাদি পশুর খাদ্য সংগ্রহ নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। গবাদি পশুর খাবার প্রাকৃতিক ভাবে হাওরের খড় থেকে সংগ্রহ করেন কৃষকগন। যা মাড়াই শেষে সংগ্রহ করে থাকেন। কিন্তু এবার বেশির ভাগ এলাকায় হার্ভেস্টরে ধান কর্তন ও মাড়াই করার কারণে সহজে গোখাদ্য সংগ্রহ করতে পারছেন না কৃষক। যার ফলে কৃষকদের ধান কর্তনের পর আলাদা ভাবে শ্রমিক দিয়ে খড় সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এতে তাদের বাড়তি অর্থ লাগছে এবং খাদ্য হিসেবে খড় প্রস্তুত করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। গোখাদ্য সংগ্রহ করে বাড়ির উঠানে খড়ের গম্বুজ করে রাখেন এবারও রাখছে।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলার প্রায় ৪ লাখ কৃষক পরিবার ছোট বড় ১৫৪টি হাওরে বোরো ধানের চাষাবাদ করেছিল। এবার জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর। প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার উফশী আবাদ হয়েছে। হাইব্রিড ৬০ হাজার ৮০০হেক্টর এবং দেশি ১ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এ বছর প্রায় ১ হাজার হার্ভেস্টর যন্ত্র দিয়ে ধান কর্তন করেছেন কৃষক। প্রায় দুই শতাধিক রিপার যন্ত্রও ছিল। হার্ভেস্টর যন্ত্রে দিনে ৩০বিঘা জমির ধান কাটা ও মাড়াই করা যায় সহজে। তবে হার্ভেস্টরে ধান কাটতে গিয়ে প্রাকৃতিক গোখাদ্য (খড়) সংগ্রহের কোন সুযোগ থাকে না।

সুনামগঞ্জ প্রাণিসম্পদ অফিস জানায়, যুগ যুগ ধরে হাওরের ধান কাটা শেষে প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন খড় উৎপাদনে এই অঞ্চলের প্রায় ১০লক্ষাধিক গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই খড়ের মূল্য প্রায় ১শ কোটি টাকা। প্রাকৃতিক খড় খাইয়ে চাষাবাদের গবাদিপশুকে বর্ষার পুরোটা সময় বাঁচিয়ে রাখেন কৃষকরা। কোন কারণে হাওরের ফসল ডুবি হলে গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দেয় হাওরে। গত বছরের এপ্রিলেও পাহাড়ি ঢলে বেশ কয়েকটি হাওরে ফসলহানি ঘটে। এরপর জুন মাসের ভয়াবহ বন্যায় গোলায় রাখা ধানও নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও অধিকাংশ কৃষকের গোখাদ্য নষ্ট হয়। ফলে গোখাদ্য কিনে পশুকে বাচিঁয়ে রাখেন তারা।

টাংগুয়ার হাওরে পাড়ের কৃষক মমিন বলেন, এবার হাওরের ধান কাটা ও মাড়াই সহজ হলেও যন্ত্রে খড় সংগ্রহের কোন সুযোগ নাই। খড় সংগ্রহ করতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। মেশিনে ধান কাটার পর নতুন করে শ্রমিক লাগিয়ে ক্ষেত থেকে খড় সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থ অপচয় হচ্ছে এবং খড়ের গুণও থাকছে না।

শনি হাওরের কৃষক শফিক মিয়া বলেন, বৈশাখে ধানের সংগ্রহের পাশাপাশি খড় সংগ্রহ করি উৎসবের মাধ্যমে। এবার এই সুযোগ নেই। যন্ত্রে ধান কাটায় আমাদের খড় সংগ্রহের সুযোগ বাঁধা গ্রস্থ হয়েছে। কিছুই করার নাই তাই শ্রমিক দিয়ে খড় সংগ্রহ করছি। ধান তোলার কাজ শেষে এবার গোখাদ্য খড় উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতা তোজাম্মিল হক নাসরুম বলেন, যন্ত্র দিয়ে ধান কাটার ফলে খড় সংগ্রহ করা হাওরের কৃষকের জন্য একটি নতুন সংকট। যাদের গবাদি পশু আছে তারা গরুর জন্য খড় সংগ্রহ করছেন ধান তোলার পাশাপাশি। এখন হাওর এলাকার কৃষকগণ গো খাদ্য খড় তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা আসাদুজ্জামান বলেন, জেলায় ১০লাখ গবাদিপশু রয়েছে। এ গুলোর বেশিরভাগ খাদ্যই হাওরের প্রাকৃতিক খড়। যা ধান কাটার পর কৃষকরা সংগ্রহ করেন। তবে সুনামগঞ্জে যন্ত্রে ধান কাটায় খড় কিছুটা নষ্ট হয়েছে। তবে শেষ সময়ে দিন ভাল থাকায় কৃষকগণ চাহিদামত খড় সংগ্রহ করেছেন। আরও কয়েক দিন তারা খড় সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাবেন।

সুনামগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, উৎপাদিত ধান থেকে প্রায় ৯ লাখ টন চাল পাওয়া যাবে। যা স্থানীয় চাহিদার ৬ লাখ টন মিটিয়ে আরও ৩ লাখ টনের বেশি চাল উদ্ধৃত্ত থাকবে। এ বছর ফলন ভাল হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রায় কোনো প্রভাব পড়েনি। হাওরে উৎপাদিত ধানের মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি।