• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৩:২২ পূর্বাহ্ন

গাজীপুর থেকে অপহরণ, যাত্রাবাড়ী থেকে ভিকটিম উদ্ধার :  চক্রের ৮ সদস্য গ্রফতার


প্রকাশের সময় : মে ২, ২০২৩, ৬:৫৯ অপরাহ্ন / ৬৮
গাজীপুর থেকে অপহরণ, যাত্রাবাড়ী থেকে ভিকটিম উদ্ধার :  চক্রের ৮ সদস্য গ্রফতার

এম রাসেল সরকারঃ গাজীপুর থেকে এক ব্যক্তিকে অপহরণের ঘটনায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গতকাল সোমবার (১ মে) তাদের গ্রেফতার করার সময় ভুক্তভোগী মো. আলমগীরকে উদ্ধার করা হয়। আজ মঙ্গলবার (২ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-১০ এর অধিনায়ক মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন, সিয়াম আল জেরিন তালুকদার (৩৩), রাসেল শেখ মিঠু (৩৩), শহিদুল ইসলাম (৩৭), প্রণব নারায়ণ ভৌমিক (৫০), মো. আলমগীর হোসেন (৪২), আ. রব খান (৭৮), সৈয়দা জান্নাত আরা উর্মি (২৭) ও ইসরাত জাহান সায়লা (২৯)। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি খেলনা পিস্তল, তিনটি চাকু, একটি হাতুড়ি, একটি আয়রন মেশিন, একটি লাঠি, একটি বেলনা, একটি বেল্ট, একটি হুক্কা ও ১৩টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর চান্দুরা এলাকায় বসবাস করেন মো. আলমগীর (৪২)। তিনি পেশায় একজন ওষুধ বিক্রেতা। গত ২৯ এপ্রিল আনুমানিক বিকেল চারটার দিকে আলমগীর জমি কেনার জন্য কালিয়াকৈর চান্দুরা চৌরাস্তা এলাকার উদ্দেশে বের হন। কিন্তু কাজ মিটিয়ে রাত ১১টার সময়ও আলমগীর বাড়ি ফিরে যাননি। আবার তাঁর মোবাইলফোনও বন্ধ পায় পরিবার। তারপর সম্ভব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করে কোথাও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এমন অবস্থায় কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তাঁর পরিবার।

মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, পরেরদিন অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল সকালে আলমগীরের স্ত্রীর মোবাইলফোনে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন করে জানায় যে, তারা আলমগীরকে অপহরণ করেছে। সে সময় আলমগীরকে নির্যাতনের শব্দ শুনিয়ে তার পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না পেলে তারা আলমগীরকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলেও হুমকি দেয়। আলমগীরের পরিবারের লোকজন অপহরণকারীদের দাবিকৃত টাকা জোগাড় করতে না পেরে নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করার জন্য র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এরপর র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গতকাল সোমবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার বউবাজার ছনটেক এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহৃত আলমগীরকে গুরুতর আহত (শরীরের বিভিন্ন অংশে লাঠি, বেলন, বেল্ট দ্বারা পেটানো দাগ ও কোমরের পিছনের অংশে আয়রন মেশিন দ্বারা ছেঁকা দেওয়া দাগ) অবস্থায় উদ্ধার করে এবং ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, অপহরণকারী চক্রটি গত ২৯ এপ্রিল বিকেল চারটায় ভুক্তভোগীর কাছে জমি বিক্রির কথা বলে চৌরাস্তা এলাকায় নিয়ে যায়। তারপর আলমগীর জমি দেখতে চাইলে তারা এখানে ওখানে বলে তাঁকে নিয়ে সুযোগের অপেক্ষায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাতে থাকে। পরবর্তীতে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে গিয়ে খেলনা পিস্তল দিয়ে আলমগীরকে মৃত্যুর ভয় দেখানো হয়। তারপর সিএনজিযোগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার ছনটেক বউবাজার এলাকায় তাদের ডেরায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে ভিকটিমকে সবাই মিলে লাঠি, বেলনা ও বেল্ট দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। মারধরের একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর শরীরের পিছনের অংশে গরম তেল ঢেলে দেয়। পরবর্তীতে দেহের বিভিন্ন স্থানে আয়রন মেশিন দিয়ে ছেঁকা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়া তুলে ফেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মমভাবে নির্যাতন করতে থাকে এবং দাবিকৃত মুক্তিপণ আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা অপহরণকারী একটি চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বেশ কিছুদিন ধরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন চান্দুরাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জমি কেনার বাহানাসহ বিভিন্ন প্রকার প্রলোভন দেখিয়ে বিত্তশালী বিভিন্ন ব্যক্তিদের ডেকে এনে খেলনা পিস্তল দিয়ে ভয় দেখিয়ে তাদেরকে অপহরণ করত। তারপর তারা রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন ছনটেকসহ তাদের বিভিন্ন ডেরায় নিয়ে আটকে রেখে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাতো।

ওই নির্যাতনের বিভিন্ন ভিডিওচিত্র মোবাইলফোনে ধারণ করে ভিকটিমদের পরিবারকে দেখাত। পরবর্তীতে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করত।